আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে দেশটির সেনাবাহিনী এবং আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে সশস্ত্র সংঘাতের মধ্যে স্থানীয়দের গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া এবং বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে।
সোমবার (১২ অক্টোবর) অ্যামনেস্টির ওয়েবসাইট থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাখাইন প্রদেশের স্থানীয় কয়েকজনের স্বীকারোক্তি, সংঘাতের ছবি, স্যাটেলাইটের ছবি, ভিডিওচিত্র, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং সুশীল সমাজের বক্তব্য প্রামাণ্য দলিল হিসেবে তাদের হাতে রয়েছে।
এ ব্যাপারে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মিয়ানমারের ডেপুটি রিজিওনাল ডিরেক্টর মিং ইয়ু হা জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী আর আরাকান আর্মির সংঘাতের ডামাডোলের মধ্যে রাখাইনের বেসামরিক নাগরিক ভোগান্তিতে পড়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের নজরে আনার ব্যাপারে জোর দিয়েছে অ্যামেনস্টি।
অ্যামনেস্টি জানাচ্ছে, রাখাইন এবং শিন প্রদেশের লোকালয়ের মধ্যে অজ্ঞাতসারে এমএমটু মডেলের স্থল মাইন পুঁতে রাখা হচ্ছে। সেনাবাহিনী এবং আরাকান আর্মি উভয়পক্ষের পেতে রাখা স্থল মাইনের ফাঁদে পড়ে অনেক গ্রামবাসী হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি, সেনাবাহিনীর এলোপাতাড়ি মর্টার শেল হামলায় অনেক বসতবাড়ি এবং অবকাঠামো ধ্বংসের ঘটনাও ঘটছে।
এদিকে, রাখাইন রাজ্যের বুচিদং পৌর এলাকায় আরাকান আর্মির সঙ্গে চলমান লড়াইয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অস্ত্র এবং গোলাবারুদ পরিবহনের জন্য রোহিঙ্গা শিশুদের ব্যবিহার করছে বলে অভিযোগ তুলেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
অন্যদিকে, মিয়ানমারের সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানের বরাতে অ্যামনেস্টি বলছে – ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাখাইন এবং শিন রাজ্যের সংঘাতে ২৮৯ বেসামরিক প্রাণহানি হয়েছে। একই সময়ে আহত হয়েছেন আরও ৬৪১ জন।
তবে, ওই দুই রাজ্যে সরকারিভাবে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে রাখায় বেসামরিক হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি অ্যামেনস্টি।
অপরদিকে, বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমারের সেনা সমাবেশ এর ব্যাপারেও উদ্বেগ জানিয়েছে অ্যামেনস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ২০১৭ সালে এক সেনা অভিযানের মুখে জীবন বাঁচাতে সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় পালিয়ে আসে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে তারা ৩২টি অস্থায়ী ক্যাম্পে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এর মধ্যে, কয়েকদফা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও মিয়ানমারের সদিচ্ছার অভাবে তা আলোর মুখ দেখেনি।