সকাল ৯টায় অফিস, কিন্তু যাওয়ার কথা এক ঘণ্টা আগে। তাই কাটায় কাটায় সকাল ৭টায় বাসা থেকে বের হন বেসরকারি আর্থিক লেনদেন প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মী জহুরুল হোসেন।
ঢাকা উত্তর সিটির যানজটের শিকার জহুরুল হোসেনের সঙ্গে কথা হয় । তিনি বলেন, শরীর খারাপ না হইলে আমার অফিসে যাইতে দেরি হয় না। আজকে নিয়ে দুইদিন, এর আগেও এমন জ্যামের লাইগা অফিস পৌঁছাইতে দেরি হইসে। আজকা যে অবস্থা, চাকরি নিয়া চিন্তায় আসি। সেই সকাল থেইকা হাঁটতেই আছি, মনে হয় চাকরিটা যাইবো।
তিনি জানালেন, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মিরপুর ১১ নম্বর সেক্টর ছেড়ে কালশি উঠতেই জ্যামের মুখে পড়েন। তিনি যে বাসে যাতায়াত করেন সেটি এক জায়গায় ৩০ মিনিট আটকে ছিল। উপায় না দেখে হাঁটতে শুরু করেন। ইসিবি চত্বর থেকে হেঁটে কালশি ফ্লাইওভার দিয়ে হোটেল রেডিসনের সামনে নেমে রাস্তা কিছুটা ফাঁকা পান। আরেকটি বাসে চড়ে শেওড়ার সামনে আসেতই আবার জ্যামে পড়েন। সময় পেরিয়ে যাওয়ায় বাস থেকে নেমে হাটা শুরু করেন জহুরুল।
তার মতো অবস্থা অসংখ্য মানুষের। কেউ বাসে, কেউ প্রাইভেট কারে, কেউ আবার বাইকে অপেক্ষা করছেন- কখন ট্রাফিক ছাড়বে!
জানা গেছে, সড়ক মেরামতের কাজ চলায় রাজধানীর উত্তরায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ জট ছড়িয়ে পড়েছে প্রগতি স্মরণী, বাড্ডা, রামপুরা, শেওড়া, ইসিবি চত্বর, মিরপুর ১২, সাড়ে ১১ পর্যন্ত। পূর্বাচলের সড়কেও ব্যাপক যানজট দেখা গেছে সকালে। জট লেগেছে বনানী থেকে বিমানবন্দর সড়কেও। যার শিকার হচ্ছেন মহাখালী, তেজগাঁও এলাকার বিভিন্ন সড়কের যাত্রীরা।
যানজটের শিকার ভুক্তভোগীরা বলছেন, স্থানীয় সরকার, মেয়র বা অন্যান্য কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, উত্তরা আব্দুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়। গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্টগামী হাজারো যানবাহন ধীরগতিতে চলছে। অনেকেই নির্দিষ্ট সময় কর্মস্থলে পৌঁছতে পারবেন না।
ডিএমপি ট্রাফিক উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. বদরুল হাসান বলেন, সোমবার (২১ নভেম্বর) রাতভর রাস্তা বন্ধ করে বিআরটি’র কাজ চলেছে। এ কার্যক্রমের পর সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে রাস্তা ছেড়ে দেওয়া হয়। যে কারণে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সকালে গার্মেন্টসকর্মী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের কারণেও সাধারণত রোডে জ্যাম সৃষ্টি হয়। কিন্তু আজ ঢাকা থেকে বের হয়ে গাজীপুর আউটলাইনে যানবাহনের ধীর গতির কারণে তীব্রতর জট সৃষ্টি হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।উত্তরার আব্দুল্লাহপুর ট্রাফিকের এক কর্মকর্তা (টিআই) বলেন, এয়ারপোর্ট ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে বিআরটি প্রকল্পের সড়ক মেরামতের কাজ চলমান থাকায় সকাল থেকে সড়কে যানজট শুরু হয়। উত্তরা রোডে যানবাহনের চাপ অনেক বেশি। যানজট বাড়তে বাড়তে গাজীপুর পর্যন্ত চলে গেছে।
সড়কের এ অবস্থা নিত্যদিনের। কবে এ দুর্ভোগ থেকে রাজধানীবাসী পরিত্রাণ পাবেন, তা জানা নেই কারও। সড়কের যাত্রীরা বলছেন, সঠিক নিয়ম ও রোডম্যাপ না করায় এমন বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন সাধারণ জনগণ। যে কারণে সরকারকেও প্রতিনিয়ত বিব্রত হতে হচ্ছে। যেখানে দেশের উন্নয়ন প্রতীয়মান, সেখানে সড়কের অনুন্নয়ন মেনে নেওয়ার মতো না। দীর্ঘদিন রাজধানীর উত্তরের এ দিকটায় যানজটের কারণে সাধারণর ভোগান্তি চরমে। তাই অনতিবিলম্বে উত্তর সিটির মেয়র, স্থানীয় সংসদ সদস্যদের এ ব্যাপারে সঠিক ও প্রয়োগিক সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।