1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৫ অপরাহ্ন

রাজনৈতিক দলগুলোকে পরমতসহিষ্ণু হতে হবে: রাষ্ট্রপতি

রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২১

রাজনৈতিক দলগুলোকে সাম্প্রদায়িকতা, অগণতান্ত্রিকতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তোলার পাশাপাশি পরমতসহিষ্ণু ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। একই সঙ্গে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে সুশীল সমাজকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

বুধবার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ আলোচনার শুরুতে দেওয়া স্মারক ভাষণে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে প্রয়োজন ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সবার মধ্যে ঐক্য। ঐক্য গড়ে তুলতে হবে সাম্প্রদায়িকতা, অগণতান্ত্রিকতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক দলসমূহকে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করতে দলমতের পার্থক্য ভুলে উন্নয়নের যাত্রায় শামিল হওয়ার আহ্বান জানাই। আসুন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মধ্য দিয়ে লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ ও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা আজ স্বপ্ন নয়, বাস্তব বলে তিনি মন্তব্য করেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। জাতিসংঘ কর্তৃক ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। ১৯৭৫-এর পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং উপযুক্ত নীতি ও কার্যক্রমের অভাবে অর্থনীতিতে তেমন গতি সঞ্চার হয়নি। তবে বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জাতির পিতার আদর্শের সরকার দায়িত্বে থাকায় তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ফলে দেশ আজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তীতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্টের নির্ধারিত তিনটি সূচক মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা সূচকের প্রতিটিতে নির্ধারিত স্কোরের বেশি অর্জন করায় ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ তারিখে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করে, যা স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, দুর্নীতি, মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কারণে দেশে স্বস্তি বিরাজ করছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। সুশাসনের উদ্দেশ্যে প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির আওতায় আনার লক্ষ্যে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি, অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা, সিটিজেনস চার্টার এবং শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দল-মত নির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ এবং অংশীজনদের সমন্বিতভাবে কাজ করে যেতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও উন্নয়নের প্রশংসা করে আবদুল হামিদ বলেন, জাতি হিসাবে আমরা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত অতিক্রম করছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর সোপান বেয়ে আমরা পৌঁছে গিয়েছি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর স্বর্ণতোরণে। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণ এখন সমাপ্তির পথে। প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় মনোবল, বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে ‘পদ্মা সেতু’ বাস্তবায়ন হয়েছে। এ সেতুর বাস্তবায়ন জাতি হিসাবে আমাদের স্বকীয়তা, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতা, সক্ষমতা, জবাবদিহি, দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাসের প্রতীকস্বরূপ মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস দিয়েছে। পদ্মা সেতুর নেগোসিয়েশনের পর অন্যান্য মেগা প্রকল্পে নেগোসিয়েশন দক্ষতার সাথে সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুলেন টানেলের দ্বিতীয় টানেলের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে। সমগ্র দেশে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। ডিসেম্বর ২০২২ সালে বিজয় দিবসের উপহার হিসাবে দেশের জনগণ প্রথম মেট্রো রেলে চলাচল করতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপণ করেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এমডিজির সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এসডিজির বিভিন্ন সূচকে অনন্য অগ্রগতির স্বীকৃতিস্বরূপ সম্প্রতি বাংলাদেশ এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড-এ ভূষিত হয়। এ প্রাপ্তি আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের এক বিশাল অর্জন। এ সম্মান বাংলাদেশের, এ সম্মান সমগ্র বাঙালি জাতির।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ‘উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ‘রূপকল্প ২০২১’-এর সার্থক বাস্তবায়ন শেষে ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়ন করছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সফল সমাপ্তিতে গৃহীত হয়েছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০২১-২০২৫। দেশের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত বিবর্তনাধীন বিষয়সমূহ বিবেচনা করে প্রণীত হয়েছে দীর্ঘমেয়াদি ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’। এর প্রেক্ষাপটে ২০৩১ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের অবসান ও উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশ হিসাবে উত্তরণ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের অবলুপ্তিসহ উচ্চ আয়ের দেশের মর্যাদায় আসীন হওয়ার লক্ষ্যে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে ২০২১-২০৪১ মেয়াদে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশে উন্নীত করা প্রয়োজন। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমাদের প্রয়োজন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা। সেইসাথে নিশ্চিত করতে হবে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা, ব্যাপক শিল্পায়ন, অর্থনীতি সুসংহতকরণ, সুষ্ঠু অবকাঠামো এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাসহ মেধাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ। এ লক্ষ্যে সকলকে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি