আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার জেরে মালয়েশিয়ায় জরুরি অবস্থা জারি হতে পারে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মহিউদ্দিন ইয়াসিন এরকম একটি প্রস্তাব নিয়ে বাদশাহ আল-সুলতান আব্দুল্লাহর কাছে গেছেন এবং তিনি বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য শাসকদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
শনিবার আল-সুলতান আব্দুল্লাহর প্রাসাদ থেকে এক বিবৃতিতে শিগগির ‘দ্য কাউন্সি অব রুলাস’ এর বৈঠক হবে বলে জানানো হয়েছে।
তার আগে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী মহিউদ্দিন শুক্রবার সুলতান আব্দুল্লাহর সঙ্গে দেখা করেন এবং দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারির প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে বর্তমান পার্লামেন্টের কার্যক্রম স্থগিত রাখার কথাও বলা হয়েছে বলে দাবি করেন ওই কর্মকর্তাদের।
ওই প্রস্তাবের কড়া সমলোচনা করে বিরোধী দলের নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে প্রধানমন্ত্রী এই কৌশল খাটাচ্ছেন।
গত মার্চে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে মাহাথির মোহাম্মদের আকস্মিক পদত্যাগের পর সুলতান আব্দুল্লাহর পছন্দে নতুন প্রধানমন্ত্রী হন মহিউদ্দিন। তিনি দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের উপ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। মাহাথিরের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
কিন্তু নিজের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সুলতানের ইচ্ছায় প্রধানমন্ত্রী বনে যাওয়া পছন্দ হয়নি প্রভাবশালী রাজনীতিক এবং দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী মাহাথিরের। তিনি এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। বলেছেন, এ নিয়োগ অবৈধ এবং বিশ্বাসঘাতকতার সামিল।
ফলে মার্চে নতুন প্রধানমন্ত্রী পেলেও মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা অব্যাহত আছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনাভাইরাস মহামারী। দেশটিতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়ছে; সেইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর উপরও চাপ বাড়ছে।
তার উপর, গত মাসে বিরোধী দলের নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম পার্লামেন্টের ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে মহিউদ্দিনকে উৎখাতের হুমকি দিয়ে রেখেছেন। এজন্য তার হাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে বলেও দাবি করেছেন।
তাই ক্ষমতা বাঁচাতে মহিউদ্দিন সুলতানের কাছে জরুরি অবস্থা জারির প্রস্তাব করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
সুলতানের প্রাসাদ থেকে অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। শুধু বলেছে, সুলতান আব্দুল্লাহ শিগগির অন্যান্য মালয় শাসকদের সঙ্গে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন।
প্রাসাদ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারীর হুমকি মোকাবেলায় মালয়েশিয়ার বর্তমান প্রশাসনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা কতটা জরুরি তা আল-সুলতান আব্দুল্লাহ খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছেন।
মালয়েশিয়ায় নয়টি রাজপরিবার রয়েছে। প্রত্যেক পরিবারের প্রধানদের নিয়ে গঠিত ‘দ্য কাউন্সিল অব রুলাস’।
এই কাউন্সিল দেশটির যেকোনো আইন বাতিল করার এবং যেকোনো জাতীয় নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার ক্ষমতা রাখে।
আগামী রোববার এই কাউন্সিলের বৈঠক হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে এখনো নিশ্চিত কোনো তথ্য রয়টার্সের হাতে পড়েনি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও জরুরি অবস্থা জারির প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
আগামী ৬ নভেম্বর দেশটির পার্লামেন্টে ২০২১ সালের বাজেট প্রস্তাব পেশ করার কথা। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে মহিদ্দিন সরকারের বাজেট প্রস্তাব পাস হওয়া নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
বাজেট প্রস্তাব পাস না হলে মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোট হতে পারে। আর তাতে হেরে গেলে আগাম নির্বাচনের ডাক দিতে হবে। আর যদি জরুরি অবস্থা জরি করা হয় তবে নির্ধারিত সময়ে পার্লামেন্টে বাজেট প্রস্তাব পেশ করতে হবে না।