বিশেষ প্রতিনিধি : কাজী রওনুকুল ইসলাম দুলাল । সাতক্ষীরা জেলার শ্রীনগর থানার কুশুলিয়া ইউনিয়নের কুশুলিয়া গ্রামের একজন বাসিন্দা। সম্প্রতি তিনি আলোচনায় এসেছেন একজন ধনাঢ্য মানুষ হিসেবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তার ধনবান বা ধনাঢ্য হয়ে ওঠার পেছনের গল্পটি নিয়ে। তিনি বড় কোন ব্যবসায়ী নন। তার ভ্যাট বা ট্যাস্কের ফাইল ঘেটে তেমন কোন ব্যবসায়ী হিসেবে খেতাব দেয়ার সুযোগ খুবই কম। তিনি এমন কোন রাজনীতি বা এনজিও সংগঠনের নেতা নন যে বিদেশী কোন ফান্ড পেয়েছেন বা কোন কারণে তিনি আলাদিনের চেরাগ পেয়ে গেছেন। কিন্তু তার সম্পদের বাড়বাড়ন্ত তেমন জানান দিচ্ছে এলাকাবাসির কাছে। কী তার আয়ের উৎস? এমন প্রশ্নের অনুসন্ধানে সামনে এসেছে তার নিকটাত্মীয় একজন সরকারি কর্মকর্তার নাম। যিনি সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের প্রজেজক্ট ডিরেক্টর বা পিডি হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। সূত্র বলছে এই নিকট আত্মীয়ের অর্থ ভান্ডারের রক্ষক হিসেবে রাতারাতি বিলিওনারক্লাবের সদস্য বনে গেছেন কথিত রওনুকুল ইসলাম।
কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে তিনি এ ব্যাপারে কারো সাথে কোন কথা বলতে নারাজ। রওনুকুল ইসলামের সম্পদের যে তালিকা গণমাধ্যমের হাতে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে গ্রাম থেকে রাজধানী হয়ে আমেরিকা-কানাডা পর্যন্ত শাখা মেলেছে তার সম্পদের বহর।
নিজ গ্রামে তার তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে আলিশান ভবন, মার্কেট, মৎস খামার, রাজধানীর অভিজাত এলাকা ধানমন্ডিতে তার নামে রয়েছে বেশ কিছু আলিশান ফ্লাট। যে সব ফ্লাটের এক একটির দাম কয়েক কোটি টাকা। দুদকে জমা পড়া একটি অভিযোগ থেকে জানা যায় ধানমন্ডির ৩ নাম্বার সড়কে লেকের পাড়ে ৩৮ নম্বর বাড়িতে বিলাসবহুল ৪ টি ফ্ল্যাট কিনেছেন ভাগ্যবান রওনাকুল ইসলাম। ফ্ল্যাটগুলোর ঠিকানা দেখা যাচ্ছে একই ভবনের ফ্লাট নং এ-৩, ডি-৩, এ-৯ ও ডি-৯। মজার ব্যাপার হচ্ছে রওনুকুল ইসলাম ফ্লাটগুলো কিনলেও তার আত্মীয় সরকারি কর্মকর্তা নিজে পাশেই একটি ভবনে ভাড়া থাকছেন। সূত্র বলছে, সরকারের গোয়েন্দা নজরদারি এড়ানোসহ জন সাধারণের চোখ ফাঁকি দিতে তিনি এমন কৌশল নিয়েছেন।
সাতক্ষিরায় রওনুকুল ইসলামের গ্রামের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে মাত্র ৫ বছর আগেও অভাব অনটন লেগেছিলো তার সংসারে। এলাকায় আর দশজন স্বাভাবিক চাষির মতো তারও একটি ছোট মৎস ঘের থাকলেও তা থেকে বছরের খাবারই জোগাড় হয় না। কিন্তু বছর পাচেক আগে তার মেয়ের জামাই এলজিইডির প্রকৌশলী মিজানুর রহমান প্রকল্প পরিচালক হিসেবে মনোনীত হওয়ার পর থেকেই আলাদিনে চেরাগ পেয়ে যান রওনুকুল। তিনি রাতারাতি ব্লিওনার ক্লাবে নাম লেখান। নাতি নাতনিদের লেখা পড়ার নামে পাঠান আমেরিকা কানাডায়। পাঁচ বছরের মধ্যে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এই পিডি কাজী মিজানুর শ্বশুর কাজী রওনুকুল ইসলাম ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মূলত এসব সম্পদ কাজী মিজানের। দুর্নীতি দমন কমিশনের হাত থেকে বাঁচতে নিজের ও স্ত্রীর নামে না করে শ্বশুরের নামে সব সম্পদ গড়ে তুলেছেন পিডি মিজান। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে ঢাকার ধানমন্ডির বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ৪টি বিক্রি করে বিদেশে টাকা পাচারের তৎপরতা শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলতে বহুবার চেষ্টা করেও কাজী দুলালের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। একই ভাবে পিডি মিজানুর রহমান রওনুকুল ইসিলাম তার শ্বশুর এটা স্বীকার করলেও তার অর্থের উৎস সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।