শুক্রবারই রাশিয়ার রাশিয়ার মিডিয়া রেগুলেটর ঘোষণা দিয়েছিল ফেসবুক এবং টুইটার বন্ধ করে দেওয়া হবে। রোববার রাত থেকে আর কোনো ব্যক্তি ওই দুই সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবেন না। সোমবার ভোরে দেখা গেল, ফেসবুক, টুইটারের পাশাপাশি ইনস্টাগ্রামও আর কাজ করছে না। নেটব্লক্স সাইবার সিকিওরিটি ওয়াচডগ সরকারিভাবে এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
রাশিয়ার বক্তব্য, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে রাশিয়ার সেনার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা চলছিল। সে কারণেই আপাতত সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলি বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সাধারণ মানুষকে বলা হয়েছে, সাময়িক সময়ের জন্য যোগাযোগের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করে নিতে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে রাশিয়ার একাংশের জনগণ দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলছিল। বস্তুত, এখনো পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষকে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ দেখানোর জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে যেহেতু দ্রুত জনমত গড়ে তোলা যায়, তাই সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া।
এদিকে, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা কিছুটা হলেও ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানা গেছে। যুদ্ধবিরতির দিকে দুই পক্ষই খানিকটা এগিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন এখনো ঘটেনি। রাজধানী কিয়েভের খুব কাছে লাগাতার শেলিং করছে রাশিয়া। ইউক্রেন মিডিয়া জানিয়েছে, ইউক্রেনের একাধিক শহর কার্যত জনশূন্য হয়ে গেছে। কেবলমাত্র যোদ্ধারাই সেখানে লড়াই চালাচ্ছেন। অন্যদিকে, মারিউপলে এখনো বেশ কিছু মানুষ আটকে আছেন বলে জানানো হয়েছে। রাশিয়া জানিয়েছে, লাভিভের কাছে একটি ইউক্রেনের এয়ারবেস ধ্বংস করা হয়েছে।
মাক্রোঁ-বাইডেন কথা
রোববার রাতে হোয়াইট হাউসের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁরসঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের। ইউক্রেনের চলতি পরিস্থিতি নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন। দুই দেশই জানিয়েছে, বর্তমান অবস্থার সম্পূর্ণ দায় রাশিয়ার। পাশাপাশি ইউক্রেনের পাশে তারা আছেন বলে আবার জানানো হয়েছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে আর কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
জেলেনস্কির দাবি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছেন, দ্রুত ইউক্রেনের আকাশসীমা নো-ফ্লাই জোন হিসেবে ঘোষণা করুক ন্যাটো। নইলে রাশিয়া ন্যাটোর উপরেও আক্রমণ করতে শুরু করবে বলে তার দাবি। বস্তুত, রোববার পোল্যান্ড সীমান্তের কাছে ইউক্রেনের একটি সেনা ঘাঁটিতে রকেট হামলা করেছে রাশিয়া। জেলেনস্কির দাবি, এই মুহূর্তে ন্যাটো ইউক্রেনের আকাশসীমাকে নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা না করলে এবার ইউক্রেনের পাশের দেশগুলিতেও রাশিয়া আক্রমণ চালাতে শুরু করবে। পোল্যান্ড সীমান্তে রাশিয়ার রকেট হামলার তীব্র প্রতিবাদ করেছে অ্যামেরিকা এবং ন্যাটো।
ইউক্রেনে চেচেন যোদ্ধারা
ইউক্রেনের লড়াই রাশিয়া চেচেন যোদ্ধাদের ব্যবহার করছে বলেও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য। বস্তুত, চেচেন যোদ্ধারা নিজেরাই জানিয়েছেন, ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনে তাদের যাতায়াত। চলতি লড়াইয়ে তারা কিয়েভের সাত কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে গেছেন বলে চেচেনের টেলিগ্রাম চ্যানেলে দাবি করা হয়েছে। চেচেন নেতা রামজ্যান কাদিরভ কিয়েভের সাত কিলোমিটারের মধ্যে গিয়ে চেচেন যোদ্ধাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে দাবি করা হয়েছে। তবে ইউক্রেন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা দাবি করেছিল, মস্কো বেজিংয়ের কাছে যুদ্ধাস্ত্রের সাহায্য চেয়েছে। ইউক্রেনের লড়াইয়ে ব্যবহারের জন্য ওই অস্ত্র চাওয়া হয়েছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছিল। পরে হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতেও সে কথা বলে রাশিয়া এবং চীনকে সতর্ক করা হয়। চীনের সরকারি মুখপাত্র জানিয়েছেন, এমন কোনো তথ্য চীনের কাছে নেই।