আড়ম্বরহীন রাষ্ট্রীয় আয়োজনে শেষ বিদায় জানানো হলো ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী ডিউক অব এডিনবরা প্রিন্স ফিলিপকে। গতকাল শনিবার (১৭ এপ্রিল) তার শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। রাজকীয় বাসভবন উইন্ডসোর ক্যাসেলের পাশেই সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলে সমাহিত করা হয় তাকে। আর এর মধ্য দিয়ে শেষ হলো ব্রিটিশ রাজপরিবারের দীঘর্তম জুটির অধ্যায়। তবে করোনার কারণে প্রিন্স ফিলিপের শেষকৃত্য অংশ নেন রাজপরিবারের ৩০ সদস্য।
১৫ বছর আগেই নিজের পছন্দমতো নকশা করা জলপাই রঙের ল্যান্ড রোভারে করেই শেষযাত্রায় গেলেন প্রিন্স ফিলিপ। শনিবার লন্ডন স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় শুরু হওয়া ঘণ্টাব্যাপী রাজকীয় শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে ওই গাড়িতেই বহন করা হয় প্রিন্স ফিলিপের কফিন। ইংলিশ ওক কাঠের এ কফিনটি তৈরি করা হয়েছিল ৩০ বছর আগেই।
রাজকীয় পরিবারের সদস্য হয়েও মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছা ছিল বিদায়লগ্নে যেন সবকিছু থাকে অনাড়ম্বপূর্ণ। অন্যদিকে করোনা মহামারির কারণে বিধিনিষেধ থাকায় তার মরদেহ সাধারণ জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শায়িত রাখা হয়নি। তবে পুরো অনুষ্ঠানটি সরাসরি স¤প্রচারিত হয়।
শেষকৃত্যানুষ্ঠানের শুরুতেই ডিউক অব এডিনবরা প্রিন্স ফিলিপের মরদেহ উইন্ডসোর ক্যাসেলের প্রবেশপথে নিয়ে আসা হয়। জলপাই রঙের ল্যান্ড রোভারে করেই উইন্ডসোর ক্যাসেলের ভেতরে অবস্থিত সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলে নিয়ে যাওয়া হয় কফিন। যাত্রাপথে ছিলেন রানি ও ডিউকের চার সন্তান প্রিন্স চার্লস, অ্যান্ড্রæ, এডওয়ার্ড এবং প্রিন্সেস অ্যান। এ ছাড়া ছিলেন রাজ পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও ডিউকের কর্মচারীরা।
বিকেল পৌনে ৩টায় মূল শোভাযাত্রাটি শুরু হয়। শোভাযাত্রার পেছনেই রাজকীয় বেন্টলি গাড়িতে ছিলেন রানি এলিজাবেথও। এ সময় দুর্গের ভেতরে ছিল তোপধ্বনি। বাজানো হয় গির্জার ঘণ্টা। সমাহিত করার আগে প্রিন্স ফিলিপের সামনে নীরবে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। জানান শেষ শ্রদ্ধা।
এসময় দুর্গের ভেতর তোপধ্বনি এবং গির্জার ঘন্টাধনি করা হয়। ডিউকের মরদেহ তার মর্যাদাসূচক নিজস্ব পতাকা দিয়ে ঢাকা ছিলো। তার ওপর ছিলো পুষ্পস্তবক এবং ডিউকের নৌবাহিনীর টুপি ও তরবারি। গির্জার আনুষ্ঠানিকতা বা সার্ভিস শেষ হলে ডিউককে সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলের রাজকীয় ভল্টে সমাহিত করা হয়।
প্রিন্স ফিলিপের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান উপলক্ষে দীর্ঘদিন পর আবারো ব্রিটিশ রাজপরিবারের সাথে একত্রিত হয়েছেন প্রিন্স হ্যারি। শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে বড় ভাই প্রিন্স উইলিয়ামের সাথে একত্রে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তিনি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র থেকে এখানে এসেছেন। তবে তার স্ত্রী মেগান আসতে পারেননি। আগত সন্তান ধারণ করায় চিকিৎসকরা তাকে ভ্রমণ করতে নিষেধ করেছেন।
ঐতিহ্যগতভাবেই রাজপরিবারের সদস্যদের এই কাঠের তৈরি কফিনে সমাহিত করা হয়। কারণ এতে মরদেহ অনেক দিন সংরক্ষিত থাকে। প্রিন্সেস ডায়ানার মরদেহও এই ধরনের কফিনে সমাহিত করা হয়েছিল। যেটির ওজন ছিল এক টনের চার ভাগের এক ভাগ। এই শেষকৃত্যানুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ব্রিটেনে জাতীয় শোক পালন শেষ হলো। তবে রাজপরিবার আরো এক সপ্তাহ ধরে শোক পালন করবে।
সূত্র : বিবিসি