বর্তমানে দেশে যা রিজার্ভ আছে তা দিয়ে নয় মাসের খাবার কেনা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (২৭ জুলাই) আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা আমাদের রিজার্ভ নিয়ে কথা বলেন, সেই বিএনপির আমলে ২০০৬ সালে অর্থাৎ এক সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রিজার্ভ কত ছিল? তিন বিলিয়নের কিছু ওপরে, ৩.৮ এরকমই ছিল। আর আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর আমরা যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি, তার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৫.৬ বিলিয়নের ওপরে রিজার্ভ করেছিল। সেখান থেকে আমরা ৪৮ বিলিয়ন পর্যন্ত আমাদের রিজার্ভ বাড়াতে সক্ষম হয়েছিলাম। করোনার সময়ে আমাদের আমদানি বন্ধ ছিল। এরপর আমদানি করতে হয়েছে। আমদানি করতে গিয়ে এবং উন্নয়নমূলক কাজ করতে গিয়ে আমাদের রিজার্ভ খরচ করতে হয়েছে। আমরা বিনা পয়সার ভ্যাকসিন দিলাম, সেখানে তো আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়েছে। এমনকি একটি ভ্যাকসিন দিতে সিরিঞ্জ থেকে শুরু করে যা যা দরকার আমরা তো সেগুলো বিদেশ থেকে কিনে এনেছি। সেখানে বিরাট অংকের টাকা আমরা খরচ করেছি পাশাপাশি আমাদের আমদানিতে কোনো কার্পণ্য ছিল না। এটা মাথায় রাখতে হবে, যেসব শিল্প গড়ে উঠবে সেগুলো যখন প্রোডাকশনে যাবে তখন প্রচুর মানুষ লাভবান হবে, করতেই হবে। আমাদের রিজার্ভ থাকে কেন, কোনো আপদকালীন সময়ে তিন মাসের খাদ্যশস্য কেনার মতো বা আমদানি করার মতো যেন অর্থটা আমাদের হাতে থাকে। আমাদের এখন যে রিজার্ভ আছে তাতে তিন মাস কেন, ৬ মাস, ৯ মাসের খাবার আমরা কিনে আনতে পারবো। কিন্তু আমাদেরকে আবার সেই পদক্ষেপ নিতে হবে যেন খাদ্যশস্য কিনতে না হয়। আমরা যাতে নিজে উৎপাদন করতে পারি।
তিনি বলেন, আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে। আমরা ব্যাপকভাবে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি, একটা বাজেট দিতে পেরেছি। এখন মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, এগুলো কেন তাদের চোখে পড়ে না? আমি জানি না। আমি জানি যে যারা বুদ্ধিজীবী তারা অনেক কথা বলবেন। তারা পদ্মা সেতু নিয়ে সমালোচনা করেছেন, পদ্মা সেতুতে রেল হচ্ছে, এই রেলে কে চড়বে? তারা বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ লঞ্চে চলাচল করে। এ নিয়ে তারা আর্টিকেল লিখে ফেলে। আমি জানি না, এরা কী খেয়ে লেখে সেটা আমার কাছে এখন সন্দেহ। আর বাংলাদেশ কতটুকু চেনে? সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ। দক্ষিণাঞ্চলে কখনো গেছে কিনা আমি জানি না। তারা বাংলাদেশে কী অর্থনীতিবিদ। আর একটা প্রতিষ্ঠান আছে তারা সবকিছুতেই খারাপ দিক দেখে। ভালো কিছু চোখে পড়ে না তাদের। সুস্থ গণতান্ত্রিক সরকার দেশে এলে এটা তাদের পছন্দ হয় না। এগিয়ে যাচ্ছে এটা তাদের চোখে পড়ে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কথা দিয়েছিলাম প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুৎ দেবো। আমরা বিদ্যুৎ দিয়েছি সত্য কিন্তু, যেহেতু বিশ্বব্যাপী একটা মন্দা দেখা দিয়েছে এবং উন্নত দেশগুলো বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হচ্ছে। আমরা বিপর্যয়ে যাতে না পড়ি তার জন্য আগে থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। সে কারণেই কিন্তু আমরা সে পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা সাশ্রয়ী হওয়ার চেষ্টা করছি। বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত রাখার আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি, এর মানে এই না যে বিদ্যুৎ একেবারে নাই বা শেষ হয়ে গেছে। ডিজেল আমাদের কিনতে হয়, এটা ঠিক। কিন্তু অকটেন আর পেট্রোল আমাদের কিনতে হয় না। উত্তোলন করি, সেখান থেকে বাই প্রোডাক্ট হিসেবে আমরা কিন্তু সেটা রিফাইন করে পেট্রোলও পাই অকটেনও পাই। আমাদের অকটেনের যতটুকু চাহিদা তার থেকে আরও অনেক বেশি পেট্রোল এবং অকটেন আমাদের আছে। বরং অনেক সময় আমরা বাইরে বিক্রিও করি।
এ সময় বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ সামনের দিকে যায় আর বিএনপির আমলে দেশ পেছনের দিকে চলে যাচ্ছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন আসে, আমি সবার সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। বিএনপি সেই নির্বাচনে কী করেছিল। এক একটা সিটে দুই/তিনজন করে তারা নমিনেশন দেন। টাকার বিনিময়ে তারেক জিয়া লন্ডনে বসে আর ঢাকায় তাদের দুই নেতা একজন গুলশানে বসে আর একজন মতিঝিলে বসে নমিনেশন দেন। সকালে একটা বিকেলে একটা নমিনেশন দেয়। ৩০০ সিটেই যদি কেউ ৭০০ নমিনেশন দেয় তাহলে তারা নির্বাচনে কী করবে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তাদের দুঃশাসনের মানুষদের যন্ত্রণা ভোগ করেছে, সার চাইতে গেলে মানুষকে গুলি খেয়ে মরতে হয়েছে। বিদ্যুৎ চাইতে গেলে মানুষকে গুলি খেয়ে মরতে হয়েছে। সারের জন্য যখন কৃষক আন্দোলন করছে, হাহাকার করছে ১৮ জন কৃষককে গুলি করে মারা হয়। শ্রমিক যখন তার মজুরি জন্য আন্দোলন করছিল রমজান মাসে ১৭ জন শ্রমিককে খালেদা জিয়া গুলি করে হত্যা করে। বিদ্যুতের জন্য যখন আন্দোলন হয় কানসাটে তখন গুলি করে মানুষকে হত্যা করে। এই অবস্থায় তারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। এদের মানুষের জন্য কোন মায়া-দয়া ছিল না, কারণ এরা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সবাইকে বলবো আমরা যে উন্নয়ন করেছি সেটা মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। মানুষ যাতে বিভ্রান্ত না হয় সে কাজটা করতে হবে। তারা বলবে, তারা বলুক। ওদের কথার জবাব দেওয়ার দরকার নাই। ওদের কথার নজর দেওয়ার দরকার নাই। আমরা যেটা করেছি এটা মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারলেই প্রকৃত জবাব দেওয়া হবে। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে অনেক চক্রান্ত আছে। আমি বিশ্বাস করি যত চক্রান্তই করুক এই অগ্রযাত্রাকে কেউ ব্যাহত করতে পারবে না। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, ইনশাল্লাহ আমরা এগিয়ে যাব। ঝড়ঝাপটা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে অনেক কিছু মোকাবিলা করতে হবে। আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে যেমন চলি, এরকম বৈশ্বিক যে দুর্যোগ সেটাও মোকাবিলা করে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো এ বিশ্বাস আমার আছে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাহুল হোসেন সাচ্চুর সভাপতিত্বে আয়োজিত আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।