ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে খাল অবৈধ দখলমুক্ত করে রূপনগর থেকে তুরাগ পর্যন্ত নৌপথ চালু করা হবে। প্রকৌশলীরা এটি নিয়ে কাজ করছেন। এ জন্য ১১টি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।
তিনি বলেন, ‘এই শহরের অনেক খাল দখল হয়ে গেছে। অনেক মাঠ দখল হয়ে বড় বড় ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আমি খালগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। ৪০ বছর আগে রূপনগর খাল দিয়ে নৌকায় চড়ে তুরাগে যাওয়া যেতো। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী খালের সীমানা নির্ধারণ করে পিলার বসানোর কাজ করছে। খাল অবৈধ দখলমুক্ত করে রূপনগর থেকে তুরাগ পর্যন্ত নৌপথ চালু করা হবে।’
আজ বুধবার মিরপুর সেকশন ১৩ ও ১৪ এলাকায় নর্দমা ও ফুটপাতসহ রাস্তা উন্নয়ন কাজের উদ্বোধনকালে মেয়র এসব কথা বলেন।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ইতিমধ্যে মিরপুর ১৩ নং সেকশনের অধিকাংশ রাস্তার উন্নয়ন কাজ হয়েছে। এই রাস্তাটি বাকি ছিল। এটি নির্মাণের জন্য ২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দ্রুতই মিরপুরবাসীর জন্য রাস্তাটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হবে।
উল্লেখ্য, প্রকল্পের আওতায় ৪নং ওয়ার্ডে মিরপুর সেকশন-১৩, ব্লক-সি এবং টিনশেড কলোনী এলাকায় ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪.১৪ কিলোমিটার রাস্তা, ৮.০৬ কিলোমিটার নর্দমা, ৩.৯১ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ করা হবে।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবেশ বাঁচাতে গাছ লাগাতে হবে। সড়কের বিদ্যমান গাছগুলো না কেটেই উন্নয়ন কাজ করতে হবে। আমি জানতে পেরেছি কিছুদিন আগে মিরপুরস্থ টেকনিক্যাল ক্রসিংয়ে সড়ক বিভাজক নির্মাণকালে অসাধু ঠিকাদার কয়েকটি গাছ কেটে ফেলেছে। যেহেতু ঠিকাদার সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশনা অমান্য করে গাছ কেটেছে তাই তাকে ডিএনসিসিতে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও এই প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট দুজন প্রকৌশলীকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। উন্নয়ন হবে কিন্তু গাছ কেটে নয়।’
বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন প্রায়ই বৃষ্টি হচ্ছে। আবার রোদ হচ্ছে। এই আবহাওয়ায় এডিস মশা বেশি জন্মায়। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে। আজই ছাদে যাবেন, বারান্দায় দেখবেন পানি জমে আছে কিনা। সবাই দায়িত্ব নেন। দোকানদারদের অনুরোধ করবো আপনারা দোকানের সামনের রাস্তাটা পরিষ্কার রাখুন। সবাই যার যার বাড়ির, দোকানের, প্রতিষ্ঠানের সামনের জায়গা পরিষ্কার রাখলেই পরিচ্ছন্ন শহর নিশ্চিত হবে।’
মেয়র বলেন, ‘আসন্ন ঈদে কোরবানির বর্জ্য অপসারণে সকলের সহযোগিতা চাই। কোরবানির পরে দয়া করে পানি দিয়ে রক্তটা একটু ধুয়ে ফেলবেন। রাস্তার মাঝখানে কোরবানি দিবেন না। জনগণের সহায়তায় আট ঘন্টায় কুরবানির বর্জ্য অপসারণ করবো। আমি বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিদর্শন করবো। যে ওয়ার্ড সবার আগে বর্জ্য অপসারণ করবে সেই ওয়ার্ডকে পুরস্কৃত করা হবে।’
বক্তৃতা শেষে ডিএনসিসি মেয়র রাস্তার নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করেন এবং পার্শ্ববর্তী শহীদ মিনার মাঠে বৃক্ষরোপণ করেন।
এরপর তিনি রাস্তাটি পরিদর্শন করেন। এসময় মেয়রের উপস্থিতিতে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউল বাসেত রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা অন্তত ১০টি ভবনের অংশ উচ্ছেদ করেন।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘জনগণের রাস্তা যারা অবৈধভাবে দখল করেছেন তাদের কোন নোটিশ দেয়া হবে না। অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে সকল রাস্তা উদ্ধার করা হবে। প্রতিটি রাস্তা ২০ফিট প্রশস্থ না হলে সিটি কর্পোরেশন সেখানে রাস্তা নির্মাণ করবে না।’
৪নং ওয়ার্ডের উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন শেষে ডিএনসিসি মেয়র ১৩ নং ওয়ার্ডের প্যারিস রোড সংলগ্ন মাঠে বৃক্ষরোপণ উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি ১৫ নং ওয়ার্ডে আলব্দীরটেক, বাইগারটেক এবং মানিকদী নামা পাড়া এলাকার লেন বাইলেনে আরসিসি পাইপ লাইন স্থাপনসহ রাস্তার উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন।
৪নং ওয়ার্ডের উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মিরপুরের ওয়ার্ডগুলো অত্যন্ত জনবহুল। অপরিকল্পিতভাবে অনেক ভবন উঠে গেছে। পুরো ঢাকা শহরে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ চলমান। মিরপুরেও পরিকল্পিতভাবে রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন করা হবে। ইতিমধ্যে এই এলাকায় অনেক ফুটপাত, রাস্তার কাজ হয়েছে। অনেকে ফুটপাত, রাস্তা দখল করে মানুষের অবাধ চলাচলে বাধা তৈরি করেছেন। ফুটপাত থেকে, রাস্তা থেকে দোকানপাট সরিয়ে নিতে হবে।’
এ সময় প্রতিমন্ত্রী মিরপুর এলাকায় অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে মেয়রের সঙ্গে মাঠে থাকবেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শহর গড়তে জনগণকে সচেতন হতে হবে। খাল দখল করে, ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যাবে না। অবৈধ দখলমুক্ত করতে আমিও মেয়রের সঙ্গে মাঠে থাকব।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, নগরবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব, ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শরীফ উদ্দীন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহাবুব আলম, ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ জামাল মোস্তফা, ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক, ১৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. হুমায়ুন রশীদ (জনি), ১৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জহির উদ্দিন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর সাহিদা আক্তার শীলা।