ইসলামে সিয়াম সাধনা বা রোজা ফরজ ইবাদত। তবে এটি যাতে আত্মনিগ্রহ না হয়ে দাঁড়ায় সে জন্য রোজা শেষে ইফতার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইহুদিদের রোজা ছিল আত্ম নিগ্রহের। দেহ ও মনকে কষ্ট দেওয়ার রোজা। ইসলামের রোজা তেমন নয়। আল্লাহ বান্দাকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। নামাজ, রোজা, হজ সবকিছুই ফরজ ইবাদত। তবে ইবাদতের নামে বাড়াবাড়িও ইসলামের শিক্ষার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। বান্দা ইবাদতের নামে আত্মনিগ্রহের আশ্রয় নেবে তা মহান আল্লাহর কাম্য নয়। ইবাদতের নামে নিজের সাধ্যের চেয়ে বেশি কিছু করার ধারণাকেও উৎসাহিত করা হয়নি আল কোরআন ও হাদিসে। জীবনযাপন ও ইবাদত সব ক্ষেত্রে স্বাভাবিকতা বজায় রাখাই ইসলামের শিক্ষা। পথিক যেমন অবিরত পথ অতিক্রম করে, অনুকূল সময়ে সফর করে, অবশিষ্ট সময়ে নিজেও বিশ্রাম নেয় এবং নিজের বাহনকেও বিশ্রামের সুযোগ দেয়, দীনের পথের পথিকের অবস্থাও তেমন হওয়া উচিত। নিজেকে সামর্থ্যরে অতিরিক্ত কঠোরতার মধ্যে নিক্ষেপ করা, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরিকার প্রতি ভ্রƒক্ষেপ না করে নফল ইবাদতে কড়াকড়ি করা ইত্যাদি কারণে দীনের মধ্যে বাড়াবাড়ির পথ উন্মুক্ত হয়ে যায়। হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিজের মর্যাদাহানি করা মুমিন ব্যক্তির জন্য শোভা পায় না। সাহাবিরা বললেন, মুমিন ব্যক্তি কেমন করে নিজের মর্যাদাহানি করতে পারে? তিনি বললেন, নিজেকে সামর্থ্যরে অতিরিক্ত পরীক্ষার সম্মুখীন করা।’ তিরমিজি থেকে মিশকাতে, বাব জামিউদ-দুআ। উপরোক্ত হাদিসে স্পষ্ট হয়, মানুষ সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করুক আল্লাহ ও তাঁর রসুল তেমনটিই চেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ির কোনো অবকাশ নেই। শরীর ও মনকে কষ্ট দিয়ে নয় বরং স্বাভাবিকতা বজায় রেখে সবকিছু করতে হবে। কেউ দেহ-মনকে কষ্ট দিলে সওয়াব বেশি মিলবে ভাবলে ভুল হবে। কারণ আল্লাহ পরম দয়ালুময় সত্তা, তিনি চান না তাঁর বান্দা কষ্ট পাক। আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন, এ ভাবনায় আত্মনিগ্রহের পথ বেছে নেওয়া কোনোভাবেই কোরআন-হাদিস নির্দেশিত পথ নয়। এ পথ পরিহার করাই উত্তম। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক বৃদ্ধকে তাঁর দুই ছেলের কাঁধে ভর দিয়ে পা হেঁচড়ে যেতে দেখলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এই ব্যক্তির কী হয়েছে? লোকেরা বলল, তিনি পদব্রজে আল্লাহর ঘর (কাবা) জিয়ারত করতে যাওয়ার মানত করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এই ব্যক্তিকে শাস্তির মধ্যে নিক্ষেপ করা থেকে মহান আল্লাহ মুক্ত। তিনি তাঁকে বাহনে চড়ে যেতে নির্দেশ দিলেন।’ বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, নাসাই, মুসনাদে আহমাদ (দারিমি)। কোনো কোনো লোক মনে করে, মানুষ নিজেকে যত বেশি কষ্ট ও কঠোরতার মধ্যে নিক্ষেপ করবে আল্লাহ তার প্রতি তত বেশি সন্তুষ্ট হবেন। এ ধারণা মারাত্মক ভুল। আল্লাহ তার বান্দাকে কোনোভাবেই কষ্ট দিতে চান না। তাই সালাত রোজাসহ সব ইবাদতের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে হবে।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।