করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকার ঘোষিত লকডাউনের চতুর্থ দিনে মতিঝিল পাড়ায় অবস্থিত ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিত নেই বললেই চলে। লকডাউনে বিনিয়োগকারীরা টেলিফোন, মোবাইল ও অ্যাপসের মাধ্যমে নিজে সশরীরে না এসে লেনদেন করছেন।
এসব হাউজ ঘুরে দেখা গেছে, লকডাউনের চতুর্থ দিনে লেনদেন চলাকালে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি কম ছিল। অধিকাংশ বিনিয়োগকারীরা ঘরে বসেই টেলিফোন, মোবাইল, ই-মেইল, অনলাইন ও অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। একই সঙ্গে ব্রোকারেজ হাউজগুলো তাদের গ্রাহককে ফিরতি ফোন করে লেনদেনের তথ্য নিশ্চিত করছে। তবে দুই-চারজন বিনিয়োগকারীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাউজে এসে লেনদেন করতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে মা সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী মশিউর রহমান বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে সকাল ১০টা বাজলেই হাউজে চলে আসি। ছুটির দিন এবং অসুস্থ না থাকলে আসা বন্ধ করি না। তাই অভ্যাস হয়ে গেছে এজন্য হাউজে এসেই লেনদেন করছি। তবে সম্পূর্ণ সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমরা ট্রেড করছি।
একই কথা বললেন মা সিকিউরিটিজের ট্রেডার হুমায়ুন। তিনি বলেন, করোনা যখন থেকে শুরু হয়েছে সেই সময় থেকেই আমাদের হাউজে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করছি। হাউজে যে কেউ প্রবেশের সময় মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানেটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের বসার ক্ষেত্রেও এক চেয়ার থেকে আরেক চেয়ার তিন ফুট দূরত্বে রাখা হয়েছে।
ব্রোকারেজ হাউজগুলো করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাঁচি-কাশি বা সন্দেহজনক লক্ষণ থাকলে তাদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া, অফিস প্রাঙ্গণে প্রবেশের জন্য প্রতিবার হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা, ব্রোকারেজ হাউজে মাস্ক সরবরাহ ও দর্শনার্থীদের অফিসে প্রবেশ করতে নিরুৎসাহিত করছেন।
এ বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি ও শহীদুল্লাহ সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ আনোয়ার হোসেন বলেন, লকডাউনের মধ্যে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী বাসায় থেকে লেনদেন করেছেন। লেনদেনের ক্ষেত্রে তারা টেলিফোন, মোবাইল, ইমেইল বা অ্যাপ ব্যবহার করেছেন। তবে কিছু বিনিয়োগকারী ব্রোকারেজ হাউজে এসেও লেনদেন করেছেন। যারাও হাউজে আসছেন স্বাস্থ্যবিধি নেমেই লেনদেন করছেন। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা বয়োজ্যেষ্ঠদের হাউজে এসে ট্রেড করতে নিরুৎসাহিত করছি। আমরা সবাইকে বাসায় থেকেই ট্রেড করতে বলছি। তবে কিছু বিনিয়োগকারী হাউজে আসছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রেড করছেন।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি ও ইবিএল সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী আতাউল্লা নাইম বলেন, অল্পসংখ্যাক বিনিয়োগকারী হাউজে এসে লেনদেন করছেন। অধিকাংশ বিনিয়োগকারী বাসায় থেকে লেনদেন করেছেন। করোনা মহামারি কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। তবে যারা হাউজে এসে লেনদেন করছেন তারা সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করছেন।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে বিনিয়োগকারীরা ঘরে বসেই লেনদেন করছেন। তবে কিছু কিছু বিনিয়োগকারী হাউজে আসছেন। আমরা সবাইকে বলবো সামাজিক দূরত্ব মেনেই সবাই লেনদেন করবেন। একই সঙ্গে ব্রোকারেজ হাউজের কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ থাকবে তারা যাতে সকলের শরীরের তাপমাত্রা মাপে এবং মাস্কবিহীন কাউকে হাউজে প্রবেশ না করায়।
করোনা সংক্রমণরোধে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিনিয়োগকারীদের ঘরে বসে শেয়ারের লেনদেন করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় অধিকাংশ বিনিয়োগকারীরা ব্রোকারেজ হাউজে না গিয়ে মোবাইল ফোন বা অনলাইনে লেনদেন করেছেন। একই সঙ্গে লকডাউনে ব্যাংক লেনদেনের সঙ্গে সমন্বয় করে পুঁজিবাজারে লেনদেন সময় দুই ঘণ্টা নির্ধারণ করে দেয় কমিশন। লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই নতুন সময়ে চলছে পুঁজিবাজারের লেনদেন।