1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন

লোডশেডিং শিগগিরই যাবে না, আরও বেশ কিছুকাল থাকবে: সিপিডি

রিপোর্টার
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০২৩

বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ সাশ্রয়সহ যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো সমস্যার সমাধানে কাজে আসেনি বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়েনি।

লোডশেডিং শিগগিরই যাবে না। আরও বেশ কিছুকাল থাকবে বলেই শঙ্কা। গ্রামে ১০ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হলেও তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না।

‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চ্যালেঞ্জ: প্রস্তাবিত বাজেটে সেসব চ্যালেঞ্জ জায়গা পেয়েছে কি?’ শীর্ষক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমীক্ষায় এসব কথা বলেছে সিপিডি। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সিপিডির পক্ষ থেকে এটি উপস্থাপন করা হয়েছে।

 

সিপিডির নিবন্ধে বলা হয়, চলমান সংকট থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত কোনো শিক্ষা নেয়নি। এটি এখনো ভুল পথে এগোচ্ছে। দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানে জোর না দিয়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিনির্ভরতা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও দুর্বল করে দিতে পারে। শুধু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ মেনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংকট সমাধান হবে না। এতে শুধু ভর্তুকি সমন্বয়ের নামে ভোক্তার ওপর বাড়তি দাম চাপতে পারে। আইএমএফের পরামর্শের পাশাপাশি আরও অনেক সংস্কার করতে হবে।

এতে অংশ নিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত নিয়ে আগে থেকে যা যা শঙ্কা করা হয়েছিল, তা এখন পরিণতিতে পরিণত হয়েছে। দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত আমদানি বাজারে পরিণত হয়েছে। এখন ডলারের অভাবে জ্বালানি কেনা যাচ্ছে না। জ্বালানিসংকটে গত এক বছরে লম্বা সময় ধরে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। লোডশেডিংয়ে ভুগেছেন ভোক্তারা।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম বলেন, আদানির বিদ্যুৎ, আন্তসীমান্ত সঞ্চালন লাইন, এলএনজি, কয়লাসহ সব মিলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত আমদানির বাজারে পরিণত হয়েছে। ভোক্তা বাড়তি দাম দিয়েই যাচ্ছে। সেই টাকায় বড় বাজেট হচ্ছে। অথচ বাজেটে ভোক্তার জন্য কিছু নেই। বিদেশি বিনিয়োগ আনার কথা বলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে উন্নয়নের নামে কত টাকা পাচার হয়ে গেছে, তা নিয়ে গবেষণা হতে পারে।

ভূতত্ত্ববিদ বদরুল ইমাম বলেন, দেশে জ্বালানির মূল জোগান আসে গ্যাস থেকে। গ্যাস অনুসন্ধান চালিয়ে গেলে বর্তমান সংকট তৈরি হওয়ার কথা নয়। গ্যাস অনুসন্ধানে অবহেলা করা হয়েছে। এমন অবহেলার শাস্তি তো পেতেই হবে। আসলে ইচ্ছাকৃতভাবে এমন গ্যাসসংকট তৈরি করা হয়েছে। এতে এলএনজি আমদানি বাড়তেই থাকবে।

বুয়েটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, সমস্যা হচ্ছে জ্বালানি খাতে, বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে বিদ্যুৎ খাতে। গত বছর সংকটে পড়ে গ্যাস অনুসন্ধান বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। এখন বিশ্ববাজারে কয়লা, এলএনজি ও জ্বালানি তেলের দাম কম। তাই সরকার আবার আমদানির দিকেই ঝুঁকছে। জ্বালানির নিশ্চয়তা না নিয়ে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে। এগুলো তো যেকোনো আইনে অবৈধ হওয়ার কথা।

দেশের শীর্ষ বণিক সমিতি এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দ্রুত বিদ্যুৎ দিতে পারায় শিল্পায়ন বেড়েছে। এখন ব্যবসায়ীদের কাছে পরিস্থিতি অন্ধকার, বিদ্যুৎ নেই। জ্বালানি আমদানিনির্ভর হয়ে গেছে। জ্বালানির প্রাপ্যতা মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। ডলারের সংকটে ঠিকমতো ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না। নগদ টাকা দিয়ে ব্যবসায়ীরাও ঋণপত্র খুলতে পারছেন না।

সিপিডির নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সঞ্চালনাও করেন তিনি। নিবন্ধে বলা হয়, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়েছে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র এখন বন্ধ আছে। জ্বালানি আমদানি করা যাচ্ছে না। বিপুল পরিমাণ ঋণ করা হচ্ছে জ্বালানি খরচ মেটাতে। এর মধ্যে কয়লানির্ভরতা বাড়ছে। এটি আমদানি খরচ আরও বাড়াবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এখন ৪০ শতাংশ বাড়তি আছে। আরও বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। এত বাড়তি সক্ষমতা দিয়ে কী করা হবে?

বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ) বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) লোকসানের অন্যতম বড় কারণ বলে মনে করছে সিপিডি। সংস্থাটি বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়ায় পিডিবির খরচ হয়েছে ১৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। পরের বছর (২০২১-২২) এটি প্রায় ৮২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এটি ২৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়লে এটি বাড়তেই থাকবে। ২০২৫ সালে অতিরিক্ত সক্ষমতা ৪৬ শতাংশ হবে। তাই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া কমানোয় জোর দেওয়া উচিত।

সিপিডির নিবন্ধে বলা হয়, শুল্ক ও কর বাবদ বিপিসি সরকারি কোষাগারে টাকা দিচ্ছে। আবার নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প নিচ্ছে। অথচ লোকসানের কথা বলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়াচ্ছে। এসব হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তোলা দরকার। দাম বাড়িয়ে বিপিসি মুনাফা করেছে। কিন্তু তা দিয়ে তো জ্বালানি তেল আমদানি করা যাচ্ছে না। আমদানির জন্য ডলার লাগবে। সামনে জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারে বাড়তে পারে। উচ্চমূল্যে কত দিন জ্বালানি কেনা সম্ভব হবে? গ্যাসঘাটতি উত্তরোত্তর বাড়ছে। এলএনজি আমদানি করে ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তার মানে জ্বালানি আমদানি খরচের বড় অংশ যাবে এলএনজি খাতে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি