1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৩ অপরাহ্ন

লোভনীয় বিজ্ঞাপনে প্লট বিক্রির নামে ‘ওয়েলকেয়ার গ্রীনসিটি’র ভয়াবহ প্রতারণা

বিশেষ প্রতিবেদন
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল, ২০২১

রাজধানীর অন্যতম অভিজাত এলাকা বারিধারা থেকে চার কিলোমিটারের মধ্যে কাঠাপ্রতি মাত্র ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার মধ্যে আবাসিক এলাকায় প্লট বিক্রির নামে ভয়াবহ প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে প্লট বুকিং দিলেই স্মার্ট টিভিসহ নানা পুরস্কারের লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ম্যাপ দেখিয়ে জমি বিক্রি শুরু করলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির নেই রাজউকের অনুমোদন বা পরিবেশ ছাড়পত্র। গ্রাহককে ধোঁকা দিতে ছাপানো হয়েছে আকর্ষণীয় একাধিক প্রচারপত্র। তাতে বড় করে লেখা হয়েছে রাজউক ও গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিবন্ধনকৃত প্রকল্প। ব্রুশিয়রের মধ্যে ঘোলা করে ছাপানো হয়েছে রাজউক কর্তৃক প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন সনদের ছবি, যা কোনোভাবেই ওই প্রকল্পের নিবন্ধনের প্রমাণ নয়। ওই সনদের মধ্যে লেখা রয়েছে, ‘‘এই নিবন্ধীকরণ/তালিকাভুক্তি কোনোক্রমেই প্রকল্পের অনুমোদন বুঝায় না এবং প্রকল্পের অনুমোদন ব্যতীত প্রকল্প সংক্রান্ত কোনো প্রকার বিজ্ঞাপন, পত্র-পত্রিকা, সাইনবোর্ড/বিলবোর্ড বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার প্রচারণা চালানো যাবে না। এ ধরনের বিধিবহির্ভূত কার্যক্রম গ্রহণ করলে কর্তৃপক্ষ অত্র নিবন্ধন বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। ’’ অথচ, এই সনদের ছবি দেখিয়েই গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণায় মেতেছে ওয়েলকেয়ার সিটি।

এদিকে বছরজুড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্লটের থ্রিডি ছবি ও ম্যাপ দিয়ে নামমাত্র মূল্যে প্লট বিক্রির লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। মাঝে মধ্যে সংবাদমাধ্যমেও বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। গ্রাহক টানতে আজ থেকে উত্তরায় চার দিনব্যাপী আবাসন মেলার আয়োজন করা হয়েছে। বালু নদীর ওপারে পূর্বাচল নিউ টাউনের কাছে ও জলসিঁড়ি আর্মি হাউজিংয়ের ঠিক পাশেই লোকেশন দেখিয়ে বাজারমূল্যের ১০ ভাগেরও কম মূল্যে জমি বিক্রির লোভনীয় প্রস্তাব দিয়েছে ওয়েলকেয়ার গ্রিনসিটি নামের প্রতিষ্ঠানটি। মেলায় প্রতি কাঠা জমির মূল্য ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ভিআইপি ব্লকে দাম ধরা হয়েছে ৫ লাখ টাকা। মেলা উপলক্ষে ৫০ শতাংশ মূল্যহ্রাসসহ হরেক মূল্যবান পুরস্কারের অফার ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ক্রেতা সেজে তাদের প্রকল্পে গেলে রাজউক অনুমোদন বা পরিবেশ ছাড়পত্র দেখাতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। তবে এ ব্যাপারে প্রকল্পের ডেপুটি ম্যানেজার মাহবুব হোসেন দাবি করেন, তাদের সব অনুমোদন আছে।

বেসরকারি ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা-২০০৪ অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সংশ্লিষ্ট বেসরকারি প্রকল্প অনুমোদনের পূর্বে প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকার কোনো প্লট বা ভূমি বা ইমারত বিক্রয় বা বরাদ্দ প্রদানের জন্য কোনো বিজ্ঞাপন প্রকাশ বা প্রচারকার্য করা যাবে না। এবং প্রকল্প সংক্রান্ত যে কোনো সাইনবোর্ড, বিজ্ঞাপন প্রচার বা যোগাযোগপত্রে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত অনুমোদন নম্বর উল্লেখ করতে হবে। অন্যদিকে রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এ বলা হয়েছে, কোনো ডেভেলপার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন এবং ডেভেলপার কর্তৃক হস্তান্তর দলিল সম্পাদনের ক্ষমতা বা অধিকার প্রাপ্তির পূর্বে রিয়েল এস্টেট ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য প্রকল্পের বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে প্রচার করতে পারবে না। প্রকল্প অনুমোদনের পূর্বে ক্রেতার নিকট ডেভেলপার কোনো রিয়েল এস্টেট বিক্রি করতে বা বিক্রয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে না।  প্রত্যেক ডেভেলপার ক্রেতাকে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও সংশ্লিষ্ট জমির মালিকানা সংক্রান্ত দলিলপত্র প্রদর্শন করবে। ডেভেলপার কোম্পানি এ আইন ভঙ্গ করলে দুই বছর কারাদন্ড বা অনূর্ধ্ব ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। তবে ওয়েলকেয়ার গ্রিনসিটি আইন ভঙ্গ করে প্রয়োজনীয় অনুমোদন ছাড়াই সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রচারণা, আবাসন মেলা ও জমি বিক্রি করছে। গতকালও বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচার করে প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে, ওয়েলকেয়ার গ্রিনসিটি যে জমি আবাসিক প্লট হিসেবে বিক্রি করছে তার অধিকাংশ জলাধার ও কৃষিজমি। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ৬ (ঙ) ধারায় বলা হয়েছে, জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা অন্য কোনোভাবে শ্রেণি পরিবর্তন করা যাইবে না : তবে শর্ত থাকে যে, অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থে অধিদফতরের ছাড়পত্র গ্রহণক্রমে জলাধার সম্পর্কিত বাধা-নিষেধ শিথিল করা যাইতে পারে। এই ধারা লঙ্ঘনে প্রথম অপরাধের ক্ষেত্রে অনধিক ২ (দুই) বৎসর কারাদন্ড বা অনধিক ২ (দুই) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড এবং পরবর্তী প্রতিটি অপরাধের ক্ষেত্রে অন্যূন ২ (দুই) বৎসর, অনধিক ১০ (দশ) বৎসর কারাদন্ড বা অন্যূন ২ (দুই) লক্ষ টাকা, অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। স্থানীয়রা বলছেন, বেশিরভাগ জমিই তাদের কেনা নয়। শুধু ছবি দেখিয়ে জমি বিক্রি করছে। কাউকে লোকেশন বুঝিয়ে দিতে পারছে না।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি