শরীয়তপুর সদর উপজেলায় বিয়ের দাবিতে এক ইতালি প্রবাসী যুবকের বাড়িতে অনশন করছেন এক নারী। শুক্রবার সকাল থেকে ওই নারী যুবকের বাড়ির সামনে বসে অবস্থান নিয়ে অনশন করছিলেন। ওই প্রবাসী যুবকের নাম নুরুল হক ব্যাপারী (২৭)। তার বাড়ি সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের দাঁতপুর উত্তরভাষান চর গ্রামে। এর আগেও ওই নারী তিনবার নুরুল হকের বাড়িতে আসেন।
নুরুল হকের পরিবার সূত্র জানায়, নুরুল হক ২০১০ সালে কাজের সন্ধানে জর্ডান যান। পরে সেখান থেকে লিবিয়া যান। লিবিয়া থেকে ২০২০ সালের জুন মাসে ইতালি পাড়ি জমান। ওই নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নড়িয়া পৌরসভার শালাল বাজার এলাকায় নুরুল হকের বোন সাবিনার শশুর বাড়ি। একই এলাকায় ভাড়া থাকেন ওই নারী। সেই সুবাদে ওই নারীর সঙ্গে বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে উঠে সাবিনার। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নুরুল হক লিবিয়া থাকাকালীন অবস্থায় ওই নারীর মুঠোফোনের ইমুতে ভিডিও কলে নুরুল হকের সঙ্গে কথা বলতেন বোন সাবিনা। তখন নুরুল হকের সঙ্গে ওই নারীর মাঝে মধ্যে কথোপকথন হতো। কথা বলতে বলতে তাদের মধ্যে প্রথমে বন্ধুত্ব, পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে ।
ওই নারী বলেন, ২০১১ সালে ১৭ জুলাই নড়িয়া বিঝারি কান্দাপাড়া গ্রামে আমার একটি বিয়ে হয়। স্বামী গ্রিসে থাকে। আমাদের নয় বছরের একটি ছেলে আছে। ছেলে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। স্বামীকে তালাক দিলে নুরুল হক আমাকে বিয়ে করবে বলে আশ্বাস দেয়। তাই আমি স্বামীকে তালাক দিয়েছি। বিষয়টি আমাদের দুজনেরই জানা ছিল। হঠাৎ একদিন আমাকে ফোনে বিয়ের কথা বলে নুরুল হক। আর তার গ্রামের ঠিকানা দেয়। আমি তাদের বাড়িতে যাই, পরিবারের সকলের সঙ্গে আমার পরিচয়ও হয়। আমাকে ফোনে বিয়ে করবে বলে জন্মনিবন্ধন, দুই কপি ছবি ও পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে তার ভাই আমিনুল হক ব্যাপারীর কাছে যেতে বলে। আমি সদরের আংগারিয়া বাজার গিয়ে আমিনুলের দোকানে এগুলো দেই। তারপর নুরুল হকের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে একটি ফর্মে স্বাক্ষর দেই। কিছুদিন পর নুরুল হকের কাছে কাবিন নামা চাইলে তিন মাস পরে পাবে বলে জানায়।
তিনি আরো বলেন, আবার জমি কিনবে বলে নুরুল আমার কাছ থেকে ৬ লাখ টকা চায়। আমি দুই দফায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দেই। টাকাটা আমিনুলের দোকানে গিয়ে দিয়ে আসি। আবারও কাবিন নামা চাইলে এখন নুরুল হকসহ তার পরিবার বলছে, কে তুই? তোকে চিনি না। আমাকে তারা চিনে না। এখন ইতালি থেকে নুরুল হক সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি বাধ্য হয়েই আমার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ওর বাড়িতে গিয়ে উঠেছি।
তিনি বলেন, এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আমি নুরুল হকের বাড়িতে আসি। তখন তার ভাই আমিনুল, বোন তানজিলাসহ বেশ কয়েকজন আমাকে মারধর করে। আমি শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হই। পরে সদরের পালং মডেল থাকায় একটি অভিযোগ করি।
নুরুল হকের বোন তানজিলা বলেন, আমার ভাইয়ের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলতো ওই নারী। ভাইকে বলেছে তার বিয়ে হয়নি। এখন জানতে পারি তার বিয়ে হয়েছে। একটি ছেলেও আছে। ওই নারী আমার ভাইয়ের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এখন আমাদের বাড়িতে এসেছেন তিনি। বলছে ভাইয়ের কাছে বিয়ে বসবে। আমরা বলেছি বিয়ে করলে ইতালি যাও।
আংগারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, এ ব্যাপারে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। কেউ অভিযোগ করলে, আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা যেত।
শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, অনশনের বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি। বিষয়টি খবর নিয়ে দেখছি। এর আগের অভিযোগের ব্যাপারটি দেখে বলতে হবে।