শরীয়তপুর জেলা জজ আদালতের সাবেক পিপি হাবীবুর রহমান ও তাঁর ভাই মনির হোসেন হত্যা মামলায় ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড, চারজনকে যাবজ্জীবন ও তিনজনকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. শওকত হোসাইন রোববার বেলা দুইটায় এই রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার পর আদালত চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন হাবীবুর রহমানের ছেলে পারভেজ রহমানের সমর্থকেরা। এরপর বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত মাদারীপুর-শরীয়তপুর সড়ক অবরোধ করে রাখেন তাঁরা। অবরোধকারীরা এ রায় প্রত্যাখ্যান করে সব আসামির মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন শহীদ কোতোয়াল, শাহিন কোতোয়াল, শফিক কোতোয়াল, শহীদ তালুকদার, সলেমান সরদার ও মজিবর রহমান তালুকদার। এ ছাড়া সরোয়ার হোসেন বাবুল তালুকদার, ডাব্লু তালুকদার, বাবুল খান, আবদুর রশিদ ওরফে টোকাই রশিদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং মন্টু তালুকদার, আসলাম সরদার ও জাকির হোসেনকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ মামলায় ৫২ আসামির মধ্যে ৩৯ আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে বাবুল তালুকদার কেন্দ্রীয় যুবলীগের তৎকালীন সদস্য ও বাবুল খান জেলা যুবলীগের তৎকালীন সভাপতি ছিলেন।
শরীয়তপুর জজ কোটের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মীর্জা মো. হযরত আলী বলেন, ২০ বছর আগে শরীয়তপুর জজ কোটের সাবেক পিপি ও তাঁর ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর এ রায় ঘোষণা করা হলো। দণ্ড পাওয়া আসামিদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া শহীদ তালুকদার, শাহীন কোতোয়াল এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া বাবুল তালুকদার, আবদুর রশিদ ও দুই বছর কারাদণ্ড পাওয়া জাকির হোসেন পলাতক।
মামলার এজাহার ও বাদীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন জাজিরা উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ। তখন আওরঙ্গের পক্ষে অবস্থান নেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ। ওই নির্বাচনে জাজিরা উপজেলার কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হয়।
স্থগিত হওয়া সেই নির্বাচন নিয়ে ৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় সাবেক পিপি হাবীবুর রহমানের বাসভবনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে সভা চলছিল। সেখানে হামলা চালান আওরঙ্গ-সমর্থক যুবলীগের সাবেক নেতা সরোয়ার হোসেন বাবুল তালুকদারের লোকজন। এ সময় তাঁর ভাই মন্টু তালুকদার সেখানে গুলিবিদ্ধ হন। কিছুক্ষণ পরে ওই বাসভবনে আবার হামলা হয়। তখন হাবীবুর রহমান ও তাঁর ভাই মনির হোসেন খুন হন।
জেলা জজ আদালতের সাবেক পিপি হাবীবুর রহমান তখন আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মনির হোসেন ছিলেন পৌরসভা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
এ ঘটনার পর হাবীবুর রহমানের স্ত্রী জিন্নাত রহমানের করা হত্যা মামলায় আওরঙ্গকে প্রধান আসামি করা হয়। এ মামলায় মোট ৫৫ ব্যক্তিকে আসামি করেন তিনি। পুলিশ তদন্ত শেষে আওরঙ্গর নাম বাদ দিয়ে ২০০৩ সালে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। মামলার বাদী তখন আদালতে নারাজি দেন। আদালত ওই আবেদন নামঞ্জুর করেন।