শান্তি ও নিরাপত্তা বিশ্বের প্রায় সব দেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) ৪৬তম ইন্দো-প্যাসিফিক আর্মিস ম্যানেজমেন্ট সেমিনার (আইপএএমএস) ২০২২-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৭ দেশের অংশগ্রহণে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৪৬তম ইন্দো-প্যাসিফিক আর্মিস ম্যানেজমেন্ট সেমিনার। উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তা বিশ্বের প্রায় সব দেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। আর তা দেশগুলোকে টেকসই উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী সহযোগিতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বেসামরিক ও সামরিক কূটনৈতিক চ্যানেলে পারস্পরিক যোগাযোগ, সংলাপ ও বৈঠকের পথও প্রশস্ত করেছে এটি। ঠিক সেভাবে আইপিএএমএস এমন একটি বহুজাতিক প্ল্যাটফর্ম, যা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির মধ্য দিয়ে অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বন্ধুত্ব, শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আইপিএএমএস সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমি মনে করি, এ ফোরামের মাধ্যমে বাস্তব সম্মত উপায়ে বহুপাক্ষিক সমাধানে অভিন্ন স্বার্থ নিয়ে আলোচনার সুযোগ তৈরি করবে।
তিনি বলেন, যেকোনো দেশের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার প্রধান হাতিয়ার দেশটির সেনাবাহিনী। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আজ বিকশিত হয়েছে। শান্তি সহায়তা কার্যক্রমে অবদানের জন্য বাংলাদেশ আজ বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত। জাতিসংঘ মিশনে কিংবা বিশ্বের যেকোনো স্থানে দেশ ও বিশ্ব শান্তির জন্য সব সময় প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার ৫১ বছরে পা দিয়েছে বাংলাদেশ। আর্থ-সামাজিক খাতে গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। বিশেষ করে দারিদ্র্য দূরীকরণ, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লিঙ্গ সমতা, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে আনা, লিঙ্গ সমতার মতো অর্জনগুলো বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে ‘উন্নয়ন বিস্ময়’ নামে পরিচিত করেছে। আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। কারণ আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি এবং আমরা আমাদের জনগণের সম্মিলিত শক্তির ওপর নির্ভর করি। আমাদের পররাষ্ট্র নীতি অনুযায়ী আমরা সব সময় বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছি, যা আমাদের একটি জাতি হিসেবে গড়ে ওঠা এবং বিশ্ব সভায় আমাদের অধিকার আদায়ের সক্ষমতা দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে, এ ধরনের ফোরামের মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একে অপরের সঙ্গে কথা বলা, আলোচনা করা ও পরস্পরকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান বিশ্বে সিকিউরিটি ডায়নামিক্স দিন দিন বদলে যাচ্ছে এবং জটিলতর হচ্ছে। যেকোনো সংঘাত বা সংকট বিশ্বের প্রতিটি দেশকে প্রভাবিত করে। আর তা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীল উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ১২ লাখেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের আশ্রয় দিয়েছে। তাদের নিজেদের দুর্দশা ছাড়াও এখানে দীর্ঘ উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা ও সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। এটি আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা যে বাংলাদেশ সব সময় বিশ্ব শান্তি বজায় রাখতে সহায়তা করবে। জাতিসংঘের অধীনে বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আমাদের সেনাবাহিনী প্রধান ভূমিকা পালন করে আসছে। আমরা এটি অব্যাহত রাখতে চাই।