আবু তাহের বাপ্পা : সাবেক কেবিনেট সচিব কবির বিন আনোয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দোসর এর ক্ষমতার দাপট খাটাতেন ছোট বোন শ্যামলী হোসেন (প্রভাষক)। তিনি ভাইয়ের ক্ষমতা বলে উইলস্ লিট্ল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজে একক আধিপত্য বিস্তার করে ছিলেন। শ্যামলী এখনো আছেন ফুরফুরে মেজাজে। অধ্যক্ষ শামসুল আলম-শ্যামলী সিন্ডিকেট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে পতিত সরকারের পক্ষে নগদ ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আন্দোলন ঠেকাতে তৎপর ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা শিক্ষার্থীদের কে আন্দোলনে না যেতে নানাভাবে নিরুৎসাহিত করতেন বলেও জানা গেছে।সম্প্রতি এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা অন্তবর্তী সরকারের বিরুদ্ধে একটি গোপন বৈঠক করে সরকারকে হঠানোর ষড়যন্ত্র করেন বলে গোপন সূত্রে খবর জানা গেছে । ওই বৈঠকের মূল নেতৃত্বে ছিলেন শ্যামলী। শামসুল-শ্যামলীর কারণে উইল লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ ধ্বংশের মুখে। পতিত সরকার আমলে বড় ভাইয়ের বদৌলতে শ্যামলী হোসেন অবৈধ শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্নসাৎ করা সহ এমন কোন অনিয়ম নেই যে তিনি করেন নি। কবির বিন আনোয়ার ছিলেন হাসিনার দোসর। তেলবাজ আনোয়ার গণভবনে গিয়ে শেখ হাসিনাকে তেল মেরে কেবিনেট সচিব পদটি বাগিয়ে ছিলেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক কেবিনেট সচিব কবির বিন আনোয়ার বোন শ্যামলী ও তার স্বামীকে তার দূর্নীতির কাজে ব্যবহার করতেন। সরকারের প্রতিটি সেক্টরে তাদের বিচরণ ছিলোনা। শ্যামলী সিন্ডিকেট দূর্নীতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার অবৈধ অর্থ সম্পদ করেছেন।
কবির বিন আনোয়ার অষ্টম বিসিএস ব্যাচের ম্যাজিষ্ট্রেট হিসাবে যোগদানের পর হতেই দূর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে ২০১২ সালে যুগ্ম সচিব হিসাবে আওয়ামীলীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরে মহাপরিচালক প্রশাসন হিসাবে দায়িত্ব পান। এরপর হতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ভাঙ্গিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য, বদলী বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য শুরু করেন। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগ দলের পদ ও কমিটি বাণিজ্য এবং জাতীয় সংসদের সদস্য মনোনয়ন বাণিজ্য করে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। অবৈধভাবে অর্জনের সব টাকাই বিদেশে পাচার করেছেন। কবির বিন আনোয়ারের অজ্ঞাত অবৈধ টাকা এবং ক্ষমতার কারণে বোন শ্যামলী সব সময় উপরের দিকে মাথা উচু করে চলেন। আর স্কুলে সবাইকে এখনো ভাইয়ের ভয় দেখানোর চেষ্টা করেন। সব কিছুই তার কাছে থোরাই কেয়ার।
কবির বিন আনোয়ার ২০১৮ সালে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসাবে যোগদান করেই বোন শ্যামলী হোসেন ও তার স্বামী, ছোট বোন ইমেলদা হোসেন ও তার স্বামীসহ অন্য তিন বোন এবং তাদের স্বামীদের নামে লাইসেন্স করে দেন। বিনা টেন্ডারে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নদী খননের ড্রেজিংসহ বাঁধ নির্মাণ, নদী ভাঙ্গন রোধে পাথরের স্লাব এর কাজ করার জন্য ৬ বছরে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়। বাস্তবে ১০ হাজার কোটি টাকার কাজ না করে বাকী ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ টি এখন সামনে এসেছে। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার কাজ বিনা টেন্ডারে দেয়া হয়েছে। উক্ত ব্যক্তিরা কোন কাজ না করে সমুদয় টাকা আত্মসাত করে এবং কাজের আত্মসাতকৃত টাকা থেকে ৮০% টাকা সাবেক পানি সম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ার এবং তার ৫ বোন ও স্বামীরা ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়। কবির বিন আনোয়ার পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে থাকাকালীন ৬ বছরে নিয়োগ ও বদলী বাণিজ্য করে দুই হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ জানা গেছে ।
কবির বিন আনোয়ার এর বিরুদ্ধে অঢেল সম্পদ এবং ৯টি রিসোর্ট কেনার অভিযোগ রয়েছে । জমি ক্রয়সহ রিসোর্ট নির্মানে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। রাজধানীতে তার ২৫ থেকে ৩০টি ফ্লাট ও বাড়ি রয়েছে বলেও জানা গেছে। কানাডা, আমেরিকা, লন্ডন, দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, তুরস্কে তার নিজের নামে স্ত্রীর নামে, বোনদের নামে, বোনদের স্বামীদের নামে বাড়ি, ফ্লাট আছে এমন অভিযোগও উথাপিত হচ্ছে। তিনি ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকার শেয়ার ক্রয় করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে, নিজ জেলা সিরাজগঞ্জের নিজেদের জমির মাটি খুঁড়ে ট্রাক ভর্তি করে মাটির নিচে রাখা হয়েছে অঢেল টাকা, ডলার এবং স্বর্ণালংকার। যা তার দুই বোন শ্যামলী হোসেন ও ইমেলদা হোসেন ছাড়া কেউ জানেননা। বিভিন্ন ব্যাংকে কবির বিন আনোয়ার তার স্ত্রী, সন্তান, ৫ বোন ও তাদের স্বামীদের নামে এবং কবির বিন আনোয়ারের স্ত্রীর ভাই বোনদের নামে এফডিআর এর দুই হাজার কোটি টাকা উঠিয়ে ওই গোপন স্থানে পুতে রাখা হয়েছে। বিদেশে অর্থ পাচার করে বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে ২০১২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে কবির বিন আনোয়ার তার স্ত্রী-সন্তান, ৫ বোন ও তাদের স্বামীদের নামে এবং তার স্ত্রীর ভাই বোনদের নামে ব্যাংকে গচ্ছিত রেখেছেন প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা।
সম্প্রতি শ্যামলী হোসেন তাদের অবৈধ সম্পদ রক্ষার্থে পরামর্শ করার জন্য তুরস্কে অবস্থানরত কবির বিন আনোয়ারের সাথে দেখা করতে গিয়েছেন। সেখানে বসে তারা ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথেও যোগাযোগ করেছেন বলে শ্যামলী স্কুলের এক গোপন বৈঠকে আলাপ করেন। গোপন ওই বৈঠকে অন্তর্বতী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের নক্সাও করেন শ্যামলী সিন্ডিকেট।
কবির বিন আনোয়ার তার বোন শ্যামলী হোসেন ও স্বামীর নামে পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানাধীন ৬০০ বিঘা জমি ক্রয় করে নুরজাহান গার্ডেন নামে একটি রিসোর্ট ও বাগান বাড়ি করেছেন। জমি ক্রয় সহ নির্মান ব্যয় খরচ হয়েছে দুই হাজার পাঁচশত কোটি টাকা। শেয়ার মার্কেটের একটি ব্রোকার হাউস ক্রয় করেছেন ১ শত ৫০ কোটি টাকায়। বিভিন্ন কোম্পানীর শেয়ার ক্রয় আছে কবির বিন আনোয়ার তার স্ত্রী, স্ত্রীর ভাই-বোন, সন্তান, ৫ বোন এবং তাদের স্বামীদের নামে ১২ হাজার কোটি টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শ্যামলী হোসেন ও তার বোন ইমেলদা হোসেন তাদের স্বামীদের নামে গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি সহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় ১৫/২০টি বাড়ি ও ফ্লাট ক্রয় করেছেন। তাদের আয়ের উৎস কি? কিভাবে দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ করে এতো সম্পদের মালিক হয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্ব মহলে।
প্রভাষক শ্যামলী হোসেন ২০১৩ সালে ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থাকাকালীন সময়ে স্কুলের এডহক কমিটির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেননের সাথে আতাত করে ২৭ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে প্রত্যেকের নিকট থেকে ৮/ ১০ লাখ করে টাকা নিয়ে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই সময় রাশেদ খান মেননকে ৮১ লাখ টাকা এবং তৎকালীন অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেনকে ২৭ লাখ টাকা প্রদান করে বিধি বহির্ভূতভাবে তাদেরকে প্রভাষক পদে পদোন্নতি দেয়ার অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।
প্রকাশ থাকে যে, প্রভাষক শ্যামলী হোসেন গাহ্যস্থ বিজ্ঞান বিষয়ে প্রভাষক হিসাবে পদোন্নতি নিয়ে ছিলেন। অথছ এ বিষয়ের অনুমোদন ছিল না। দুই বছর পর উক্ত বিষয়ে তদবির করে অনুমোদন নেয়া হয়। তার বোন ইমেলদা হোসেন এর নিয়োগ অবৈধ এবং তার বিএড সনদ জাল । সহকারী অধ্যাপক আসিফ রহমান এর নিয়োগ অবৈধ এবং তার এম বি এ পাশের সনদ জাল। আসিফ রহমানের ঢাকায় ৬ তলা ৪টি বাড়ী আছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকা অবস্থায় ইমেলদা হোসেন হয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য। এই সংগঠনের প্রত্যক্ষ ছত্রছায়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতা হত্যা সংগঠিত হয়। ২০১৩ সালে শ্যামলী হোসেন ছিলেন স্কুলের সহকারী শিক্ষক, পরিচালনা পর্ষদে শিক্ষক প্রতিনিধি ও কলেজে নিয়োগ কমিটির সদস্য। তখন গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিষয়টি কলেজে না থাকলেও ভাই কবির বিন আনোয়ারের( যুগ্ম সচিব হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক থাকা অবস্থায়, ১৯/০২/২০১২ থেকে ০৫/০৪/২০১৫) ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রভাষক হিসেবে নিজের পদোন্নতি করিয়ে নেন এবং বিধিবহির্ভূতভাবে জ্যেষ্ঠতার সিরিয়ালে নিজের নাম প্রথমে রাখেন। কোন পদোন্নতির বিধান না থাকলেও অনৈতিকভাবে নিজের দল ভারি করার জন্য আরো ২৫ জন সহকারী শিক্ষকে প্রভাষক পদে পদোন্নতি করিয়ে নেন।পদোন্নতিপ্রাপ্তদের অনেকে তৎকালীন বিজ্ঞপ্তির আলোকে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে অকৃতকার্য হলেও আশ্চর্য জনক ভাবে তাদেরকেও প্রভাষক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। আবার অনেকের স্কুলে সহকারী শিক্ষকপদে ৮ বছর পূর্ণ না হলেও তাদেকেও অনৈতিকভাবেপ্রভাষক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এভাবেই শ্যামলী হোসেন গড়ে তোলেন অনিয়মের বিশাল বাহিনী।
মেধাস্থান পরিবর্তন করা বর্তমান শিক্ষক প্রতিনিধি লায়লা নুর বেগম এসব অনিয়মের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন এবং সম্প্রতি পরিচালনা পর্ষদের মিটিংএ কলেজে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্তদের তথ্য গোপন করে তাদের পূর্বে অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে স্কুলের সহকারী শিক্ষক থেকে পদোন্নতীপ্রাপ্ত প্রভাষকদের জ্যেষ্ঠতা দেওয়া হয়। তৎকালীন সভাপতি মহোদয়ের (মুহাম্মদ শাহ্ আলম) কাছে জানতে চাওয়া হলে মিটিংএ তথ্য গোপন করে জ্যেষ্ঠতা পরিবর্তন করে নেওয়া হয়েছে যা বিধিমোতাবেক হয়নি বলে তিনি মতামত দেন, এবং সরকারের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সভাপতি পদ বাতিল না করলে পরবর্তী মিটিংএ ঠিক করে দেওয়ার জন্যও মতামত দেন।
২০১১ সালের ১২ এপ্রিল হতে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এডহক কমিটির সভাপতি ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন। নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষক-কর্মচারী এডহক কমিটি দ্বারা নিয়োগের ক্ষমতা না থাকলেও শুধুমাত্র সিবি নিয়ে কোন ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে,প্রত্যেকের নিকট থেকে সাত থেকে দশ লাখ টাকা ঘুষ নেয়া হয়। এই নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা উঠানোর দায়িত্তে ছিলেন প্রভাষক শ্যামলী হোসেন । কবির বিন আনোয়ারের বোন হওয়ায় শামলীকে সব কিছুর দায়িত্ব দেয়া হতো।
অভিযোগে প্রকাশ, প্রভাষক শ্যামলী হোসেন তার বড় ভাই সাবেক কেবিনেট সচিব কবির বিন আনোয়ারকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে অবৈধভাবে আ.ন.ম শামসুল আলম খানকে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ এর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেন। শ্যামলী হোসেনের কথামত আ.ন.ম শামসুল আলম খান প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে ১২ লাখ টাকা অয়াত্নসাত করেন। এই টাকার ভাগ পেয়েছেন শ্যামলী হোসেন এবং সাবেক গভর্নিং বডির এক সদস্য। সংঘবদ্ধ এই চক্র ২০২১ সালে কিছু শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেন । তারা কয়েক মাস চাকুরী করার পর শ্যামলী হোসেনর কথামত টাকা না দেয়ায় তাদেরকে প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে দেয়া হয়নি। তাদেরকে কোন বেতন ভাতাও দেয়া হয়নি। আ.ন.ম শামসুল আলম খান ক্ষমতার দাপট খাটিয়ে তাদেরকে বিতাড়িত করেন। আওয়ামী সরকারের পতন হওয়ার পরও আ.ন.ম শামসুল আলম খান, শ্যামলী হোসেন, ইমেলদা হোসেন আছেন ফুরফুরে মেজাজে। ভুক্তভোগীরা তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নিয়ে বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
জানা যায়, অধক্ষ্য আ.ন.ম শামসুল আলম খান জালিয়াতির মাধ্যমে চাকুরীতে নিয়োগ, প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাত এবং এমপিওভুক্তি ছাড়াই দীর্ঘদিন যাবৎ বে-আইনীভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ত পালন করছেন। তিনি অবৈধভাবেনিয়োগ নিয়ে কর্মরত আছেন। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ছাড়া এবং ডিজির প্রতিনিধি অনুমতি না নিয়ে জাল সীল ও নাম ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে এমপিওভুক্ত হয়ে ২০১২ সালে অবৈধ পন্থায় এডহক কমিটি কর্তৃক সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি নেন। অবৈধভাবে জেলা প্রশাসক ঢাকা কর্তৃক বিধি বহির্ভূত ভাবে অধ্যক্ষ ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।
আ.ন.ম শামসুল আলম খান সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত থেকে ২০০৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রভাষক পদে নিয়োগ পান।
অভিযোগ রয়েছে, ওই নিয়োগে পত্রিকায় কোন বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়নি। ডিজির ভুয়া প্রতিনিধি দেখিয়ে প্রভাষক পদে এমপিওভুক্ত হন তিনি । যার ইনডেক্স নং-ডি-৩০৭৮৯১৪। রেজাল্ট শীটে ভুয়া ডিজির প্রতিনিধির স্বাক্ষর নিজেই করেন। পরবর্তীতে ২০০৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী সিটি এলাউন্স এর টাকার জন্য আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৯৯৪ সালের ১আগষ্ট হতে ২০০৬ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত পাচশত টাকা করে সিটি এলাউন্স গ্রহন করেন। ২০১২ সালের ১৭ নভেম্বর গভর্নিং বডির ৬৯ নং সিদ্ধান্তের আলোকে ২০১২ সালের ১ডিসেম্বর হতে এডহক কমিটি কর্তৃক সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি নেন। সাথে আরো ১৫ জন সহকারী অধ্যাপককে পদোন্নতি দেয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী ৩ জন সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়ার কথা ছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং-শিম/শাঃ/১১/১০-১১/২০০৯/১৭১ তাং-১২/০৪/২০১১ইং এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের স্মারক নং-৩৭/ক/স¦ী/৯৯/(অংশ-১) /৮৮৬ তাং-২০-১০/২০১৯ইং মূলে এ পদোন্নতি বিধি সম্মত হয় নহে।
আ.ন.ম শামসুল আলম খান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ত নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে । তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে, ২০১৯ সালে নিরাপত্তা প্রহরী ধনু মিয়ার জাল সনদের চাকুরীচ্যুত হন। তাকেও দূর্নীতির মাধ্যমে অবসর সুবিধা প্রদান করেন। তাছাড়া অবসর প্রাপ্ত শিক্ষকদের অবসর ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে মোটা অংকের ঘুষ গ্রহন এবং অবসর ভাতা প্রদানের অভিযোগ রয়েছে ।
মোঃ তারিকুল আযম খান কেয়ার টেকার হিসাবে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজে যোগদান করেন তার সহযোগিতায়। পরবর্তীতে প্রভাষক শ্যামলী হোসেন মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পেতে তদবির করেন। প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক দূর্নীতি করায় প্রশাসনিক পদ হতে অপসারন করা হয় তাকে। পরবর্তীতে অর্থের বিনিময়ে মানবিক কারনে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। একজন অবৈধ সহকারী শিক্ষককে ২০১৮ সাল হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অত্র প্রতিষ্ঠানের কো-অর্ডিনেটর (প্রশাসন) পদে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর হতে নিয়োগ, ভুয়া বিল ভাউচার, প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাত, ভর্তি বাণিজ্য সহ নানা ধরনের দুর্নীতে জড়িয়ে পড়েন। গত ৭ বছরে ৫ কোটি টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে । তরিকুলের অর্থের ভাগ প্রভাষক শ্যামলী হোসেন, শাখা প্রধান ইমেলদা হোসেন, সহকারী শিক্ষক ফয়সাল শামীম, মিথুন সুলতানা সেকশন হেড ইংলিশ মিডিয়াম মিথুন সুলতানা , সহকারী অধ্যাপক আসিফ রহমান এবং প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আ.ন.ম.শামসুল আলম খান পেয়ে থাকেন।
আরো অভিযোগ রয়েছে, কবির বিন আনোয়ার পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকাকালীন টেন্ডার বাণিজ্য ও বদলী বাণিজ্য করে কমিশন নিতেন শ্যামলী সিন্ডিকেট। সরকার পরিবর্তন হলেও শামসুল আলম-শ্যামলী সিন্ডিকেট আছেন বহালতবিয়তে।