বগুড়া প্রতিনিধি :
বগুড়ায় শাশুড়ির শতকোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন রানা ও স্ত্রী আকিলা সরিফা সুলতানাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে এ নির্দেশ দেন বগুড়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী রেজাউল করিম মন্টু।
এর আগে গত ১ অক্টোবর রাতে বগুড়ায় আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা পরিষদ সদস্য আনোয়ার হোসেন রানার বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেন তার শাশুড়ি দেলওয়ারা বেগম। মামলায় রানার স্ত্রী আকিলা সরিফা সুলতানাসহ সরিফ উদ্দিন সুপার মার্কেট লিমিটেডের ৩ ব্যবস্থাপক যথাক্রমে নজরুল ইসলাম, হাফিজার রহমান ও তৌহিদুল ইসলামকে আসামি করা হয়। পরে ৫ অক্টোবর মামলাটি সদর থানায় রেকর্ড করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবীর নিজেই দায়িত্ব পান।
মামলা রেকর্ড হওয়ার পর গত ১১ অক্টোবর রানা ও তার স্ত্রী উচ্চ আদালতে জামিন প্রার্থনা করেন। তবে সেখানে শুনানি শেষে আদালত তাদের ৪ সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কোর্টে হাজির হতে বলেন।
এর আগে দেলওয়ারা বেগমের অপর ৪ কন্যা গত ২৪ সেপ্টেম্বর বগুড়ার পুলিশ সুপারের কাছে আনোয়ার হোসেন রানার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও হুমকি প্রদানের লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
পুলিশ সুপারের কাছে দাখিল করা লিখিত অভিযোগ এবং থানায় করা মামলার এজাহারে বলা হয়, দেলওয়ারা বেগমের স্বামী সেখ সরিফ উদ্দিন শহরের কাটনাপাড়া এলাকায় সরিফ বিড়ি ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৬ সালে তার মৃত্যু হলে দেলওয়ারা বেগম শহরের নওয়াববাড়ি এলাকায় অবস্থিত বহুতল মার্কেট ‘দেলওয়ারা-সরিফ উদ্দিন সুপার মার্কেট’ কিনে নেন। এরপর তিনি সরিফ সিএনজি লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। দেলওয়ারা বেগম এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং তার ৫ কন্যা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আনোয়ার হোসেন রানাকে সুযোগসন্ধানী উল্লেখ করে অভিযোগ বলা হয়, তিনি দেলওয়ারা বেগমের বড় জামাতা সাইফুল ইসলামের মালিকানাধীন ‘দৈনিক দূর্জয় বাংলা’- পত্রিকায় বিজ্ঞাপন শাখার একজন কর্মী ছিলেন। ২০০৬ সালে সাইফুল ইসলামের মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রী (দেলওয়ারা বেগমের বড় মেয়ে) আকিলা সরিফা সুলতানার দিকে চোখ পড়ে আনোয়ার হোসেন রানার। নিজের স্ত্রী ও সন্তান থাকা সত্ত্বেও তিনি আকিলা সরিফা সুলতানাকে ভুল বুঝিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে সবার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
মামলার এজাহারে দেলওয়ারা বেগম অভিযোগ করেন, তার বয়স এবং অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে আনোয়ার হোসেন রানা এবং তার স্ত্রী আকিলা সরিফা সুলতানা তার মালিকানাধীন সব প্রতিষ্ঠানের দেখাশোনার দায়িত্ব মৌখিকভাবে গ্রহণ করেন। শহরের কাটনারপাড়া এলাকায় একই বাড়িতে থাকার কারণে রানা বিভিন্ন সময় নানা ধরনের কাগজপত্রে তার স্বাক্ষরও গ্রহণ করেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পর তিনি জানতে পারেন যে, এর আগেই আনোয়ার হোসেন রানা অন্য আসামিদের সহযোগিতায় বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরি করে ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে ব্যাংকে রাখা ৫০ কোটি টাকার এফডিআর এবং অন্যান্য ব্যাংকে রাখা আরও ৫০ কোটি টাকাসহ মোট ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।