মো: মহসিন ,উপজেলা সংবাদদাতা বেগমগঞ্জ নোয়াখালী: গতকাল রাতে র্যাব-১১, এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জের চৌরাস্তা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ক্লুলেস হত্যা মামলার প্রধান আসামী মোঃ জামাল উদ্দিন (৪০) গ্রেফতার করেছে। সে চরজব্বার থানার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ০৮ নং ওয়ার্ডের চরমাকছুমুল (জামাল মাঝির বাড়ি) মোস্তফা সওদাগরের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৩০মে সকাল আনুমানিক ১১:৩০ ঘটিকায় নোয়াখালীর চরজব্বার থানার সুবর্ণচরের এক জেলের মরদেহ চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের উড়িরচর ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডের মেঘনা নদী সংলগ্ন কামল মিয়ার পুকুর থেকে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা উদ্ধার করে।
নিহত ভিকটিম মোঃ রিপন (৫২) নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডস্থ চরমাকছুমুল গ্রামের মৃত মোঃ হাবিব উল্যার ছেলে। গত ২৮মে রাতে নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নস্থ চরমাকছুমুল গ্রামের মেঘনা নদী সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
উক্ত ঘটনার দিন ভিকটিম মোঃ রিপন তার নিজ বাড়ি থেকে তার ভগ্নিপতি ধৃত আসামী জামাল উদ্দিন পৃথক সময়ে মেঘনা নদীতে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর ২৯মে ভিকটিমের বোনের স্বামী মোঃ জামাল উদ্দিন (৪০) বাড়িতে ফিরলেও ভিকটিম মোঃ রিপন ফিরে আসে নাই।
উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের ছেলে আরমান হোসেন অভিযোগ করে বলেন,”গত কিছু দিন আগে আমার ফুফা জামাল উদ্দিন ও তার সহযোগীরা একটি মাছ ধরার ফিশিং বোট চুরি করে নিয়ে আসে। পরে বোটটি আমার বাবা স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় মালিকের কেছে ফিরিয়ে দেয়। গত উপজেলা নির্বাচন শেষ হলে এলাকায় আমার ফুফা কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটায়। বিষয়টি আমার বাবা স্থানীয়দের জানালে তারা তাকে পুলিশে সোপর্দ করে। এরপর ফুফা দু’দিন জেল খেটে বেরিয়ে এসে আমার বাবাকে তার সহযোগী একই এলাকার দিদার, রবি, সোহাগ ও নিজামের সহযোগিতায় কুপিয়ে হত্যা করে মরদেহ মেঘনা নদীতে ফেলে দেয়। বর্তমানে আমার ফুফা পলাতক রয়েছে।”এ প্রেক্ষিতে র্যাব-১১, এর আভিযানিক দল উক্ত কুলেস হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে ছায়া তদন্ত আরম্ভ করে। পরবর্তীতে র্যাব-১১, ৩১মে তথ্য প্রযুক্তি ও সোর্সের সহায়তায় উক্ত ক্লুলেস হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী মোঃ জামাল উদ্দিন (৪০) কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।গ্রেফতারকৃত আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করে এবং সে জানায় যে, পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার স্ত্রী এবং স্ত্রী’র বড় ভাই ভিকটিম মোঃ রিপন (৫২) এর সাথে বিরোধ চলে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ২৮মে আসামী মোঃ জামাল উদ্দিন ভিকটিম মোঃ রিপনকে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সে রাত আনুমানিক ০০:৩০ ঘটিকার সময় একটি লোহার রড নিয়ে চরজব্বার থানাধীন মোহাম্মদপুর ইনিয়নস্থ শিউলী একরাম বাজার থেকে দক্ষিণে বেলাল কোম্পানী মসজিদের পাশে অন্ধকারে আড়ালে ওঁৎ পেতে থাকে। একপর্যায়ে ভিকটিম মোঃ রিপন (৫২) বর্ণিত ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ধৃত আসামী জামাল উদ্দিন (৪০) তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে ভিকটিমের মাথায় সজোরে উপর্যুপরি আঘাত করলে ভিকটিম রাস্তায় পড়ে যায়।
তখন বাজার থেকে কতিপয় পথচারী ঘটনাস্থলের রাস্তা দিয়ে আসতে দেখে ভিকটিমকে টেনে রাস্তার পাশে ডুবার পনিতে ফেলে দিয়ে আসামী জামাল উদ্দিন বাড়িতে চলে আসে। বাড়িতে এসে তার পরিহিত জামা কাপড় পরিবর্তন করে রাত আনুমানিক ০১:৩০ ঘটিকার সময় পুনারায় বর্ণিত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভিকটিম মোঃ রিপন এর মৃত্যু নিশ্চিত দেখে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে লাশটি সে নিজে কাঁধে নিয়ে অনতি দূরে মেঘনা নদীর কিনারায় ফেলে দেয়। পরবর্তীতে পুনরায় বাড়িতে এসে ৩০মে সকাল আনুমানিক ০৬:৩০ ঘটিকার সময় ধৃত আসামী তার স্ত্রীকে বিশেষ প্রয়োজনে চট্টগ্রামে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে ভিকটিমের ছেলে মোঃ আরমান হোসেন (৩০) বাদী হয়ে চরজব্বার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। হত্যা মামলায় ধৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নোয়াখালী জেলার চরজব্বার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।