বিশ্বে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব প্রথম খুঁজে পাওয়া যায় চীনের উহানে। তারাই প্রথম ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে, যদিও সব বড় দেশ এখনো ভাইরাস সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। এমনকি ২০২০ সালে চীনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০২১ সালে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করছে চীন।
চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং সম্প্রতি ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছেন। গত বছর কোভিডের মধ্যেও তারা ২ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। যদিও গত কয়েক দশকের মধ্যে এটাই তাদের সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি, বড় অর্থনীতিগুলোর মধ্যে গত বছর কেবল তারাই প্রবৃদ্ধি করতে পেরেছে। ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ সংকোচনের পরও তারা এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
বছরের প্রথম দুই মাসে চীনের শিল্পোৎপাদন বেড়েছে ৩৫ দশমিক ১ শতাংশ। এই পরিস্থিতির ভিত্তিতে বিশ্লেষকেরা বলছে, বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের প্রবৃদ্ধির হার ১৫-২০ শতাংশে উঠতে পারে। তাতে বাৎসরিক প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। অবশ্য গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি সংকোচন হওয়ার কারণে এবারের ভিত্তি এমনিতেই দুর্বল।
গত কয়েক দিনে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্টের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকারের সংকট তৈরি হয়েছে। তাঁদের ভাষ্য, চীনা কোম্পানিগুলো ব্যাপক হারে ক্লিংকার কিনে নেওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে এই সংকট তৈরি হয়েছে। চীনের শিল্পোৎপাদনের এই পরিসংখ্যান ব্যবসায়ীদের কথার সাক্ষ্য দেয়।
নতুন এফডিআইয়ে শীর্ষ স্থানে ওঠার অর্থ হচ্ছে, চীন এখন বিনিয়োগকারীদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যেসব কোম্পানি অন্য দেশে ব্যবসা করতে চায়, তাদের প্রথম লক্ষ্য এখন চীন।
২০২০ সালে সামগ্রিকভাবে বৈশ্বিক এফডিআই প্রবাহ কমেছে ৪২ শতাংশ। যুক্তরাজ্যের মতো দেশে কমেছে শতভাগ। চীন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে, তার বলেই এত বিনিয়োগ পেয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এসব কারণে বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যেও চীন প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের মূল কেন্দ্র হয়ে উঠতে পেরেছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের (সিইবিআর) এক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২৮ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি হয়ে উঠবে চীন। কারণ হিসেবে তারা বলছে, কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনায় কুশলতার পরিচয় দিয়েছে চীন। এতে আগামী কয়েক বছরে চীন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশকে ছাড়িয়ে যাবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারি কাটিয়ে উঠে ২০২২-২৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ১ দশমিক ৯ শতাংশ। এরপর তা ১ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চীনা অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে গড়ে বাৎসরিক ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। এরপর ২০২৬-৩০ সালের মধ্যে তা দাঁড়াবে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ।