প্রকৃতির উপর প্লাস্টিকের প্রভাব যে কী ভয়াবহ, তা তো হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি আমরা। পরিবেশে দূষণ ছড়ানো ক্ষতিকর জিনিষগুলির মধ্যে অন্যতম উপাদান এই প্লাস্টিক। এই যে বিশ্ব উষ্ণায়ণ বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সমস্যা, তারও একটা মূল কারণ নাকি এই প্লাস্টিকই। প্লাস্টিক দূষণের ফলে সামুদ্রিক প্রাণী বা জন্তুজানোয়ারদের কী ভাবে ক্ষতি হচ্ছে তা তো প্রায়শই শুনেই থাকি আমরা। কিন্তু এই প্লাস্টিক যে মানবশরীরের কী ভাবে ক্ষতি করছে তার খবর রাখেন কি!
এই যে দিনরাত নানা রকম ভাবে আমরা প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ব্যবহার করি। খালি চোখে দেখা না গেলেও সেসব প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু-পরমাণু জমা হয় আমাদের শরীরের, যাকে বলে মাইক্রোপ্লাস্টিক। পরিবেশ দূষণের মূলেও কিন্তু এই মাইক্রোপ্লাস্টিকই। আর এই মাইক্রোপ্লাস্টিকই যে প্রতিনিয়ত আমাদের শরীরে যে কী নয়ছয় ঘটিয়ে চলেছে, তা কিন্তু যথেষ্ট উদ্বেগে ফেলেছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
সম্প্রতি একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে, রক্তের মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতির ফলে বদলে যাচ্ছে মানব শরীরের কোষের বৈশিষ্ট্য, যা কিন্তু যথেষ্ট চিন্তায় ফেলার মতোই একখানা বিষয়।
নেদারল্যান্ডসের একদল বিজ্ঞানীর গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। সম্প্রতি ২২ জন সুস্থ সবল ব্যক্তির শরীর থেকে রক্তের নমুনা নিয়ে তাঁরা পরীক্ষাটি চালান। যেখানে দেখা গিয়েছে, ওই ২২ জন ব্যক্তির মধ্যে অন্তত ১৭ জনের রক্তেই মিলেছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি। আর সেই মাইক্রোপ্লাস্টিকের ব্যাস নাকি ৫ মিলিমিটারের চেয়েও ছোট বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।
এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত নেদারল্যান্ডসের বিজ্ঞানী প্রফেসর জিক বেথাক জানিয়েছেন, পরীক্ষানিরিক্ষায় এখনও পর্যন্ত পাঁচ ধরনের আলাদা আলাদা প্লাস্টিকের নমুনা মিলেছে রক্তে। তার মধ্যে রয়েছে পাতি পলিথিন, পিপি এবং পেট প্লাস্টিকও। সাধারণত প্লাস্টিকের কৌটো বা বোতলের তলায় শব্দগুলো দেখতে পাই আমরা। প্লাস্টিকের গুণগতমান ও প্রকারভেদ বোঝাতেই এই শব্দগুলি ব্যবহৃত হয়। গবেষকেরা জানিয়েছেন, যেসব রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, তার ৩৬ শতাংশ জুড়েই নাকি রয়েছে এই পেট প্লাস্টিক।
তা শরীরের কী কী ক্ষতি করছে এই মাইক্রোপ্লাস্টিক? এ ব্যাপারে কী বলছেন বিশেষজ্ঞেরা?
স্বাস্থ্যবিদেরা জানাচ্ছেন, সাধারণ ভাবে আমাদের ইনটেসটাইন বা অন্ত্রে প্রদাহের কারণ হতে পারে এই মাইক্রোপ্লাস্টিক। ২০১৯ সালের একটি গবেষণা বলছে, প্রতি বছরই নানা জিনিসের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক মানবশরীরে প্রবেশ করে। তার কিছুটা অংশ প্রাকৃতিক নিয়মে শরীরের বাইরে বেরিয়েও যায়। তবে রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিক কী ধরনের ক্ষতি করে, তা এখনও তেমন ভাবে জানা যায়নি। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও জানিয়েছে, এ বিষয়ে তাদের কাছে বিশেষ তথ্য নেই। বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি কিন্তু বেশ কঠিন। এখনও যদি প্লাস্টিক ব্যবহারে আমরা রাশ টানতে না পারি, তবে যে আরও ঘোরতর বিপদের দিন আসতে চলেছে তা বোধহয় বলার অপেক্ষা রাখে না।