দেশের শেয়ারবাজারে আগামী দু-এক বছরের মধ্যে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে ২৪ ঘণ্টা লেনদেন করা যাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ২০২১-২২ অর্থবছরে শীর্ষ ব্রোকারদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিমসহ অন্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশের শেয়ারবাজারকে বিশ্বমানের ডিজিটালাইজড করতে এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন পেয়েছি। ফলে এ বছরের শেষের দিকে বা আগামী বছরের শুরুর দিকে সুইস ও ইউরোপিয়ান কনসালটেন্টদের সাহয্যে কাজ শুরু হবে। এতে আগামী দু-এক বছরের মধ্যে দেশের শেয়ারবাজারের চেহারা পাল্টে যাবে। ওই সময় পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে ২৪ ঘণ্টা লেনদেন করা যাবে। ব্যাংক যখন খোলা থাকবে, তখন লেনদেন কার্যকর হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে সিএসইর পর্ষদের কাছে ডিএসইর সঙ্গে লেনদেনের এত পার্থক্য কেনো জিজ্ঞেস করেছিলাম। যেখানে (চট্টগ্রাম) এত ব্যবসা-বাণিজ্য হয়, সেখানে তো এত কম লেনদেন হওয়ার কথা না। তখন আমি তাদেরকে লেনদেন বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছি।’
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘আজকে যারা পুরস্কৃত হলেন, তাদেরকে অভিনন্দন। পুরস্কারের ব্যবস্থা যেখানে আছে, সেখানে প্রতিযোগিতা আছে। প্রতিযোগিতা থাকলে সেখানে উন্নয়ন হবেই। যেখানে প্রতিযোগিতা নেই বা একচেটিয়া, সেখানে কখনও ভালো বাজার হয় না। আজকে সিএসই যাদেরকে পুরস্কৃত করে উৎসাহিত করলেন, তারা আগামীতে আরও ভালো করতে চাইবেন। অবস্থা ধরে রাখতে চাইবেন। অন্যদিকে যারা পাননি, তারা আগামীতে পাওয়ার চেষ্টা করবেন।’
নতুন গভর্নর ক্যাপিটাল মার্কেটের প্রতি যত্নবান উল্লেখ করে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘ওনি মন্ত্রণালয়ে থাকতেই আমার কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। যিনি গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার একমাসের মধ্যেই শেয়ারবাজারের ১০ বছরের বিনিয়োগ সীমার সমস্যার সমাধান করে দিয়েছেন। দেশের ক্যাপিটাল মার্কেট ও মানি মার্কেট একসঙ্গে কাজ না করলে দেশের অর্থনীতির মূল লক্ষ্য যে পূরণ হবে না, সেটা ওনি বুঝতে পেরেছেন।’
চট্টগ্রামে যাওয়ার আগে গভর্নরের সঙ্গে আলাপ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগ সীমা থেকে বন্ডকে বাদ দিতে হবে। আপনি ইক্যুইটি মার্কেটে একটি কোম্পানিকে ২০ কোটি, ৫০ কোটি বা ১০০ কোটি টাকা দিতে পারবেন। কিন্তু একটি ভালো টাইলস, টেক্সটাইল, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি করতে গেলে ৫০০-১০০০ কোটি টাকা দরকার পড়ে। এ অর্থ যদি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে করা হয়, তাহলে কয়েকটি কিস্তি দিতে না পারলে উভয় প্রতিষ্ঠান বিপদে পড়বে।’
‘এমন সমস্যা কাটিয়ে তুলতে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন বন্ডের মাধ্যমে করার বিষয়ে গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এখন বন্ড কিনতে গেলে আবার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগ সীমার সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এজন্য যেসব বন্ড গ্যারান্টেড ও অ্যাসেট ব্যাকড থাকবে, সেগুলো বিনিয়োগ সীমার বাইরে নেওয়া হবে। যেসব ঝুঁকিপূর্ণ বন্ড আছে, সেগুলো হয়তো বিনিয়োগ সীমার মধ্যে থাকবে’ বলে উল্লেখ করেন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
অধ্যাপক শিবলী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে আমাদের এ বাজারকে ক্যাপিটাল মার্কেট মনে করতাম না। কারণ একটি ক্যাপিটাল মার্কেটে যেসব পণ্য থাকা দরকার, তা আমাদের নেই। আমরা ক্যাপিটাল মার্কেট বলতে শুধু ইক্যুইটিকে (শেয়ার) বুঝি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জিডিপির তুলনায় ক্যাপিটাল মার্কেট বড় বলে আমাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়। ওইসব দেশে কিন্তু ইক্যুইটি মার্কেট দিয়ে জিডিপির বড় অংশ ক্যাপিটাল মার্কেট হয়নি। অথচ আমাদের দেশে শুধু ইক্যুইটি নির্ভর ক্যাপিটাল মার্কেট।’
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত কমিশন সভায় অলটারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) রুলস পাস করা হয়েছে উল্লেখ করে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখানে সরকারি ট্রেজারি বন্ডগুলো লেনদেন হবে। এর সঙ্গে বাজারে ৫০ বা ৫৮ বিলিয়ন ডলার যোগ হবে। সুতরাং আজকে যারা জিডিপির তুলনায় বাজার মূলধন ১৫ বা ১৮ শতাংশ বলেন, সেটা চলতি মাসেই চলে যাবে ২০-৩০ শতাংশে। তখন সবাই অবাক হবেন।’