1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন

শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতে লাখো মানুষের ঢল

রিপোর্টার
  • আপডেট : সোমবার, ১৭ জুন, ২০২৪

কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়ায় কঠোর নিরাপত্তায় শান্তিপূর্ণভাবে ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি ছিল ঈদুল আজহার ১৯৭তম জামাত। এতে জেলা ও বিভিন্ন এলাকা থেকে লাখো মুসল্লি অংশ নেয়। আজ সোমবার (১৭ জুন) সকাল ৯টায় শুরু হয় জামাত।

এতে ইমামতি করেন জেলা শহরের মার্কাস মসজিদের ইমাম মাওলানা হিফজুর রহমান খান।

নামাজ শেষে মোনাজাতে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ, ফিলিস্তিন জনগোষ্ঠীর আত্মমর্যাদা ও তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন-গণহত্যা থেকে রক্ষায় দোয়া করা হয়। একই সঙ্গে বিশ্বশান্তি, মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐক্য-ভ্রাতৃত্ব ও দেশের সুখ-সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতা কামনা করা হয়। তা ছাড়া মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে যারা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, সেই সব শহীদের আত্মার শান্তি কামনাসহ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য দোয়া করা হয়।

জামাত শুরু হয় সকাল ৯টায়। কিন্তু ঈদুল আজহার ত্যাগের আদর্শ ও স্রষ্টার সন্তুষ্টি লাভের আশায় ভোর থেকে জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লিরা আসতে থাকে শোলাকিয়ায়। কেউ গাড়িতে চড়ে, কেউ ইজি বাইকে, কেউ সাইকেলে, কেউ বা হেঁটে। চারদিক থেকে আসা মানুষের ঢল যেন মিশে যায় শোলাকিয়া মাঠে।

জামাত শুরুর আগেই হাজার হাজার মুসল্লির পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে ঈদগাহ মাঠ। এ সময় শহরের প্রধান সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

জামাতে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান, পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, রাজনীতিকসহ সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয়।

শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি জানায়, এ ঈদে কোরবানির ব্যস্ততা থাকায় সাধারণত ঈদুল ফিতরের মতো লোকসমাগম হয় না। এর পরও ঐতিহ্য ও সুনামের টানে বিভিন্ন এলাকার লাখো মুসল্লি জামাতে অংশ নিয়েছে।

নিরাপত্তা ঝুঁকি না থাকলেও ২০১৬ সালে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতের সময় জঙ্গি হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে এবারও বাড়তি নিরপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয় মাঠে। ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের কাছে পুলিশের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে পুলিশের দুই সদস্য, স্থানীয় এক নারী ও এক জঙ্গিসহ চারজন নিহত হন।
ঈদের জামাতকে ঘিরে নজিরবিহীন কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয় শোলাকিয়া ও আশাপাশের এলাকা। তিন স্তরের নিরাপত্তাবেষ্টনী পার হয়ে মুসল্লিদের ঢুকতে হয় ঈদগাহ মাঠে। প্রত্যেক মুসল্লির দেহ তল্লাশি করেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা।

জানা গেছে, জামাত নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ রাখতে মাঠে দুই প্লাটুন বিজিবি, হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিলেন। তা ছাড়া এখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। সাদা পোশাকে নজরদারি করেছেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। পুরো মাঠ ও আশপাশের এলাকায় ছিল নিরাপত্তাচৌকি। বসানো হয় সিসি ক্যামেরাও।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেছেন, ‘ঈদুল ফিতরের তুলনায় লোকসমাগম কম হলেও শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা মুসল্লিদের নিরপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তা ছাড়া মাঠে তৎপর ছিল বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল টিম। স্বেচ্ছাসেবকরা মুসল্লিদের নানাভাবে সহযোগিতা করে।’

ঈদ জামাতে দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিদের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়। এর একটি ট্রেন ভোর পৌনে ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে এবং অপর ট্রেনটি সকাল ৬টায় ভৈরব থেকে ছেড়ে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি নিয়ে কিশোরগঞ্জ শোলাকিয়া মাঠের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে।

শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঈদের জামাত সফল করতে জেলা প্রশাসন পৌরসভার সহযোগিতায় সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে জামাত সম্পন্ন হয়েছে। প্রচুর মুসল্লি অংশ নিয়েছেন জামাতে। প্রকৃতপক্ষে শোলাকিয়ার ঐতিহ্য ও সুনাম মুসল্লিদের টেনে আনে এখানে।

হোসেনপুরের সিদলা গ্রামে থেকে শোলাকিয়ার জামাতে এসেছেন এরশাদ উদ্দিন (৬০)। তিনি বলেন, ‘অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল, শোলাকিয়ায় নামাজ আদায় করব। এবার আমার আশা পূর্ণ হয়েছে। হাজারো মুসল্লির সঙ্গে নামাজ অংশ নিয়ে অনেক শান্তি পেয়েছি। ইচ্ছে ছিল আমার দুই সন্তানকে নিয়ে আসার। কিন্তু কোরবানির কাজকর্মের জন্য তাদের রেখে এসেছি। আগামীতে ছেলেদের নিয়ে জামাতে অংশ নেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে।’

তাড়াইলের শাহবাগ গ্রাম থেকে সাইকেল চালিয়ে শোলাকিয়ায় এসেছেন মো. কাঞ্চন ভূঁইয়া (৫৫)। তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে জঙ্গি হামলার দিন মাঠে ছিলাম আমি। সেদিন খুব ভয় পেয়েছিলাম। ভয় পেলেও মাঠ ছেড়ে যাইনি। জামাত শেষে বিকল্প পথে বাড়ি ফিরেছি। যত দিন বেঁচে আছি ঈদের জামাতটি এখানে পড়তে চাই।’

করিমগঞ্জ সদরের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ৩০ বছর ধরে ঈদের নামাজটি শোলাকিয়ায় আদায় করেন। করোনার কারণে মাঝের দুই বছর আসা হয়নি। তিনি বলেন, ‘শোলাকিয়ায় ঐতিহ্যবাহী একটি মাঠ। এখানে ঈদের নামাজ পড়লে অন্য রকম একটা অনুভূতি কাজ করে। একটা শান্তির আবহ তৈরি হয় শরীর-মনে। মূলত এই অনুভূতির টানেই বারবার এখানে আসি।’

তাদের মতো আরো কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, মুসল্লিদের বিশ্বাস, বেশি লোক একসাথে নামাজ আদায় করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। এই বিশ্বাসে এ জেলাসহ সারা দেশ থেকে লোকজন শোলাকিয়ায় নামাজ আদায় করতে আসেন।

কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ বলেন, ‘আমরা জানি ঈদের দিনে দূর-দূরান্তের লোকজন আসে, তাই তাদের যেন কোনো কষ্ট না হয়, সেভাবে আতিথ্য দেওয়া হয়েছে।’

রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরুর পাঁচ মিনিট আগে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুটি এবং এক মিনিট আগে একটি বন্দুকের ফাঁকা গুলি ছুড়ে নামাজের জন্য মুসল্লিদের সংকেত দেওয়া হয়।

শোলাকিয়ার ঈদগাহের যাত্রা শুরু হয় ১৭৫০ সালে। তবে ১৮২৮ সালে প্রথম আনুমানিক সোয়া লাখ লোক শোলাকিয়ায় নামাজ আদায় করেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তখন থেকে এই ঈদগাহসহ পুরো এলাকার নামকরণ হয় ‘শোলাকিয়া’।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি