শ্রীপুর(গাজীপুর) প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজে আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক কোচিং ফি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিনা রসিদে বিশেষ ক্লাশের নামে কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগটি করেছেন খোদ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
এইচএসসি বোর্ড পরীক্ষা অনুষ্ঠানের আগেভাগে তড়িঘড়ি করে মুলত: বাণিজ্য করার উদ্দেশেই এসব করা হয়েছে বলে দাবী করেন ভুক্তভোগীরা। বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানায়, বিজ্ঞান বিভাগের পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, ইংরেজী, আইসিটি, ব্যবসায় শিক্ষা শাখার হিসাববিজ্ঞান, ইংরেজী, আইসিটি এবং মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ইংরেজী ও আইসিটি প্রতি বিষয়ে ১ হাজার এবং কোচিং পরীক্ষার নামে ২’শ করে টাকা নেওয়া হয়েছে। কোচিং ফি ছাড়া এসব পরীক্ষায় (নির্বাচনী) অনুত্তীর্ণ কোনো শিক্ষার্থীকে ফরম পূরণের সুযোগ দেয়া হয়নি। সরকারি কলেজে এরকম ফি দেওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীদের পরিবার রীতিমতো হিমশিম খেয়েছেন।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জিম্মি করে এসব অনিয়ম করা হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। একটি সরকারি কলেজে বিধি বহির্ভূতভাবে এসব অর্থ আদায়ে অভিভাবক মহলে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। কিছু বিষয় নিয়ে এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অধ্যক্ষের (সংযুক্তি) বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও করা হয়েছে।
অভিযোগের বিবরণ, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আসন্ন এইচএসসি নির্বাচনী পরীক্ষায় পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, ইংরেজী, আইসিটি, হিসাববিজ্ঞান বিষয়সমূহে কেউ ১টি আবার কেউ ২ বা ৩টি বিষয়ে ফেল করা শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিনা রসিদে কোচিং ক্লাশের জন্য বিষয় প্রতি ১ হাজার টাকা কোচিং ফি আদায় করা হয়। আনুমাণিক হিসেবে কমপক্ষে ৬ লক্ষ টাকা কোচিং ফি বাবদ রসিদ ছাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। কোচিং ফি প্রদান করা ওইসব শিক্ষার্থীরা পরে ফরম পূরণের সুযোগ পায়।
অভিভাবকেরা জানায়, একটি সরকারি কলেজে কোচিং ক্লাশের নামে এভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে যেমনি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে তেমনি অনেক অভিভাবক ওই টাকা পরিশোধ করতে হিমশিম খেয়েছেন। তারা দাবী করেন, কোনো বেরসকারি কলেজেও এমনভাবে কোচিংয়ের নামে টাকা নেওয়া হয়না। যেসব শিক্ষার্থী নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়নি এরকম ৩’শ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অনুত্তীর্ণের প্রকারভেদে ২’শ এবং ৩’শ করে টাকা আদায়ের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ। পরে ওইসব বিষয়ে ফেল করা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আবারও বিষয় প্রতি ১’শ টাকা করে ফি নিয়ে একাধিকবার পরীক্ষা নেওয়া হয়। এইচএসসি নির্বাচনী পরীক্ষার দায়িত্বে ছিলেন প্রভাষক ওয়ালিউল্লাহ। পরে পুন: পরীক্ষার দায়িত্বে ছিলেন প্রভাষক আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে ৪/৫জন শিক্ষক। ওইসব শিক্ষকেরা ফরম পূরণে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিনা রসিদে কোচিং ফি আদায় করে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা জানায়, কোচিং ফি নেওয়ার আগে তাদেরকে একটি চুক্তিপত্রে সই নিয়ে হাতে হাতে বিষয় প্রতি ১ হাজার ও কোচিং পরীক্ষা ফি বাবদ ২’শ টাকা করে নিয়ে তারপর ফরম পূরণের সুযোগ দেওয়া হয়। প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ, আওলাদ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান শামীমসহ কয়েকজন শিক্ষক এ কাজে নিয়োজিত ছিলন।
গাজীপুরের বিভিন্ন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি কলেজ সমূহে কোচিং ক্লাশ সম্পূর্ণ নিষেধ। বিধি বহির্ভূত কোনো কাজে কাজের শিরোনাম পরিবতন, চুক্তি বা চুক্তি না করার বিষয়টি মূখ্য নয়। যেটা বিধিতে নিষেধ রয়েছে সেটা নিষিদ্ধ।
এ ব্যাপারে প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ ও আওলাদ হোসেন অবশ্য কোচিং ফি নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, তারা প্রাইভেটের ফি নিয়েছেন। প্রভাষক মোস্তাফিজুর রহমান শামীমের কাছে জানতে চাইলে তিনি উল্টো জানতে চান কোন বিভাগ। পরে বিভাগের নাম বললে গণমাধ্যমকর্মীর প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (সংযুক্তি) প্রফেসর পিয়ারা নার্গিস কোচিং ক্লাশের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তাঁর কলেজে কোনো কোচিং ক্লাশ হয় না বলে দাবী করেন তিনি। একইসাথে বিস্তারিত জানার জন্য তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের কলেজে যেতে বলেন।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুন নূর মোহাম্মদ আল ফিরোজের সাথে মুঠোফোনে (০১৭১১-০৭০৭৩৮) যোগাযোগ করলে তিনি অপর প্রান্ত থেকে রিসিভ করেননি।