সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত হলো আয়াতুল কুরসি। এ আয়াতের প্রতিটি বাক্যে আল্লাহর ক্ষমতা বর্ণনা করা হয়েছে। রসুল (সা) একে কোরআনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ আয়াত অভিহিত করেছেন।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘একদা রসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে রমজানের জাকাতের প্রহরী নিযুক্ত করেন। আমার কাছে এক আগমনকারী এসে ওই মাল থেকে কিছু কিছু করে উঠিয়ে নিয়ে সে তার চাদরে জমা করতে থাকে। আমি তাকে ধরে ফেলি এবং বলি, তোমাকে আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে নিয়ে যাব। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি খুবই অভাবী লোক। তখন আমি তাকে ছেড়ে দিই। সকালে রসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার রাতের বন্দী কী করেছিল? আমি বলি, হে আল্লাহর রসুল! সে তার ভীষণ অভাবের অভিযোগ করায় তার প্রতি আমার দয়া হয় তাই আমি তাকে ছেড়ে দিই। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। সে আবার আসবে। আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কথায় বুঝলাম যে সে সত্যিই আবার আসবে। আমি পাহারা দিতে থাকলাম। সে খাদ্য ওঠাতে থাকল। আমি আবার তাকে ধরে ফেলে বললাম, তোমাকে আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে নিয়ে যাব। সে আবার ওই কথাই বলল, আমাকে ছেড়ে দিন, আমি খুবই অভাবী। তার প্রতি আমার দয়া হলো। কাজেই তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে আমাকে রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে আবু হুরায়রা! তোমার রাতের বন্দীটি কী করেছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল! সে অভাবের অভিযোগ করায় আমি তাকে দয়া করে ছেড়ে দিয়েছি। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। সে আবার আসবে। আমি আবার তৃতীয় রাতে পাহারা দিই। এরপর সে এসে খাদ্য ওঠাতে থাকল। আমি তাকে বলি, এটাই তৃতীয়বার এবং এবারই শেষ। তুমি বারবার বলছ আর আসবে না, অথচ আবার আসছ। সুতরাং তোমাকে আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে নিয়ে যাব। তখন সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি আপনাকে এমন কতগুলো কথা শিখিয়ে দিচ্ছি যার মাধ্যমে আল্লাহ আপনার উপকার সাধন করবেন। আমি বললাম, ওইগুলো কী? সে বলল, “যখন আপনি বিছানায় শয়ন করবেন তখন আয়াতুল কুরসি শেষ পর্যন্ত পড়বেন। এতে মহান আল্লাহ আপনার রক্ষক হবেন এবং সকাল পর্যন্ত আপনার সামনে কোনো শয়তান আসতে পারবে না।” তারা ভালো জিনিসের খুবই লোভী। এরপর (আবু হুরায়রা থেকে এ কথাগুলো শোনার পর) নবী করিম (সা.) বললেন, সে চরম মিথ্যাবাদী হলেও এটা সত্যই বলেছে। হে আবু হুরায়রা! তুমি তিন রাতে কার সঙ্গে কথা বলেছ তা কি জান? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, সে শয়তান।’ বুখারি, ফাতহুল বারি।
আয়াতুল কুরসি পাঠ মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট রাখার উপায়। আমরা প্রতিদিন মহান স্রষ্টার গুণাবলিসংবলিত এ আয়াতটি বেশি বেশি পাঠের চেষ্টা করি।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।