বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপ নিয়ে বিদেশিরা কাউকে কোনো ধরনের তাগাদা দেয়নি বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
আজ রোববার (১৬ জুলাই) সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।
কয়েক দিনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে রাজনৈতিক সংলাপের প্রশ্নটি এসেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘দেখুন, সংলাপ নিয়ে বিদেশিরা আমাদের কাউকে কোনো তাগাদা দেয়নি। সংলাপের কথা এক-এগারোর কুশীলবরা ও অন্য কিছু ব্যক্তিবিশেষ বলছেন। বিএনপিও তো সংলাপের কথা বলছে না। তারা তো বলছে না যে আমাদের সঙ্গে সংলাপ করতে চান। এটা কারা বলছে, সেটা আপনারা কিছুটা জানেন, আমরাও জানি।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। সেখানে তারা দেশের আইন ও সংবিধানের আলোকে দেশে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চেয়েছেন। সেই নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে এসেছেন তারা।’
তিনি বলেন, ‘২০০৭ সালের এ দিনে আওয়ামী লীগের সভাপতি, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার বাসভবন সুধাসদন তছনছ করা হয়েছিল। তার প্রয়াত স্বামী বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছিল।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সত্যিকার অর্থে এক-এগারোর পরিবর্তনের পর যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল, তারা দুর্নীতি-দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলে ক্ষমতাগ্রহণ করেন। কিন্তু নিজেরাই দুর্নীতি ও দুঃশাসনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ধারণা করা হয়েছিল, যাদের বিরুদ্ধে কথা বলে তারা ক্ষমতাগ্রহণ করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন। কিন্তু যে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি-দুঃশাসনের কারণে তারা ক্ষমতাগ্রহণ করেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ না করে বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন দুর্নীতি-দুঃশাসনে জড়িয়ে পড়ে, তাদের বিরুদ্ধে যখন শেখ হাসিনা সোচ্চার হোন, তখন তার কণ্ঠ স্তব্ধ করার জন্য গণতন্ত্রের পথচলা থামিয়ে দিতে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে সেদিন গণতন্ত্রের পায়ে শিকল পরানো হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা বুঝতে পারেননি, মুক্ত শেখ হাসিনার চেয়ে কারাবন্দি শেখ হাসিনা কম শক্তিশালী নয়। শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করার পর হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন সাধারণ জনগণও। সে কারণে এগারো মাস পরে শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল তারা।’
হাছান মাহমুদ বলেন, প্রকৃতপক্ষে আমাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়াও মুক্তি লাভ করেছিলেন। আজকে সেইদিন। বাংলাদেশের মানুষ আর কখনো সেই ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় না। বাংলাদেশের মানুষ এক-এগারো পরিবর্তনের পর যে ধরনের সরকার এসেছিল, সেই ধরনের সরকার আর কখনো চায় না। কিন্তু আমরা দেখছি, ইদানীং এক-এগারোর কুশীলবরা আবার সক্রিয় হয়েছে। তারা নানা জায়াগায় প্রকাশ্যে-গোপনে বৈঠক করছে। বিভিন্ন দূতাবাসে গিয়ে ধরনাও দিচ্ছে। এক-এগারোর কুশীলবরা সক্রিয় হয়ে নানা ধরনের প্রেসক্রিপশনও দেওয়া শুরু করেছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আর কখনো কাউকে সেই ধরনের সরকার গঠনের সুযোগ করে দেবে না। এটি সার্বভৌম বাংলাদেশ, আমাদের দেশ চলবে আমাদের সংবিধান ও জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী। অন্য কারও প্রত্যাশা কিংবা প্রেসকিপশনে আমাদের দেশ চলবে না।’