কর্মীদের করোনার টিকা নিশ্চিত করতে হবে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে একের পর এক দেশ বাংলাদেশিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করছে কঠোর শর্তে সউদীগামী যাত্রীরা বিপাকে
করোনা মাহামারির সঙ্কট কাটিয়ে উঠছে মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলো। অথচ এশিয়ার দেশ ভারত করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে চার হাজারের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে ভারতে। ভারতের এই সংক্রমণের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের ঝুঁকি ঠেকাতে একের পর এক দেশ বাংলাদেশিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করছে। এতে সঙ্কুচিত হচ্ছে বহির্বিশ্বের শ্রমবাজার। বিভিন্ন দেশ কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে নতুন নতুন শর্ত আরোপ করা হচ্ছে। এতে জনশক্তি রফতানির বৃহৎ খাতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগছে।
এদিকে, একই কারণে বিমান ভাড়া কয়েকগুণ বৃদ্ধি এবং সউদীর নতুন শর্তে বিদেশগামী কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। এতে বিদেশগামী কর্মীরা চরম বিপাকে পড়েছেন।
বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, করোনার টিকা দিয়েই কর্মীদের রিসিভিং কান্ট্রিগুলোতে পাঠাতে হবে। এ ধরনের নিশ্চয়তা দেয়া হলেই জনশক্তি রফতানির বাজার ধরে রাখা সম্ভব হবে। তার মতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকেই এ ব্যাপারে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে যে করোনার টিকা দিয়েই কর্মীদের বিদেশে পাঠানো হবে। তাহলেই বাংলাদেশি কর্মী গমনের বাধা দূর হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সমস্যার দরুনই বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশিদের প্রবেশের ক্ষেত্রে ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করছে।
চলমান মহামারি পরিস্থিতিতে বহির্বিশ্ব থেকে ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। একের পর এক দেশের প্রবেশ দুয়ার বন্ধ হয়ে পড়ছে বাংলাদেশিদের জন্য। বিশ্বব্যাপী মহামারির নতুন প্রবাহ দেখা দেয়ায় গত ১৪ এপ্রিল আন্তর্জাতিক সব রুটের বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। পরে গত ৩০ এপ্রিল কর্তৃপক্ষ সীমিত আকারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দিয়ে সার্কুলার জারি করে। বেবিচকের ওই সার্কুলারেই করোনার উচ্চঝুঁকিযুক্ত ১২ দেশ থেকে বাংলাদেশে যাত্রী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। উল্টো করোনার ভারতীয় ধরনের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিভিন্ন দেশ এবার নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করছে বাংলাদেশকেই। এতে শ্রমবাজারে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
দেশগুলো বলছে, করোনার ভারতীয় ধরনের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে আগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল আগেই। সর্বশেষ এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে কুয়েতও।
অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কুয়েতের স্থানীয় বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (ডিজিসিএ)। এতে বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা থেকে আগতদেরও প্রবেশ বন্ধ করে দেয়ার কথা বলা হয়। অনির্দিষ্টকালের এ নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির সঙ্গে যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে পড়লেও কার্গো উড়োজাহাজ চলাচলে কোনো বাধা থাকছে না।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুয়েতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে এ নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নিষিদ্ধের তালিকায় থাকা এ চার দেশের নাগরিকদের কুয়েতে প্রবেশ করতে হলে এর আগে অন্য কোনো দেশে অন্তত ১৪ দিন অবস্থান করে ‘কভিড নেগেটিভ’ হতে হবে। এর আগে করোনার ভারতীয় ধরনের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ, নেপাল ও পাকিস্তান থেকে আগতদের প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করে থাইল্যান্ড। সংযুক্ত আরব আমিরাতও (ইউএই) বাংলাদেশসহ চারটি দেশ থেকে যাত্রী ও ফ্লাইট প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এতে শত শত বাংলাদেশি কর্মী আমিরাতে যাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। এসব কর্মী চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। নিষেধাজ্ঞার অধীন অন্য তিন দেশ হলো নেপাল, শ্রীলংকা ও পাকিস্তান। ইউএইর ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ক্রাইসিস অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটির (এনসিইএমএ) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১৩ মে থেকে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলংকার কোনো যাত্রী ও উড়োজাহাজ আমিরাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি এ চার দেশে ট্রানজিট নেয়া যাত্রীদের জন্যও আমিরাতের দুয়ার বন্ধ থাকবে। তবে দেশ চারটিতে ট্রানজিট নেয়া ফ্লাইট ইউএইতে প্রবেশ করতে পারবে। এ নিষেধাজ্ঞা কতদিন বহাল থাকবে, সে বিষয়ে কিছু জানায়নি এনসিইএমএ।
এর আগে ৮ মে দেশে প্রথম করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হওয়ার কথা জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। একই দিনে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মালয়েশিয়া। দেশটি বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিকদের প্রবেশে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়। যদিও এর আগে টানা দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর ৪ মে থেকে ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়েছিল। এ নিষেধাজ্ঞার দরুন মালয়েশিয়া থেকে ছুটিতে এসে আটকেপড়া কর্মীরা বিপাকে পড়েছেন। ফ্লাইট চলাচলের নিষেধাজ্ঞা কবে নাগাদ প্রত্যাহার হবে তা’ কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না।
ইউরোপের দেশ ইতালি বাংলাদেশীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে গত মাসেই। করোনার নতুন ধরনের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ ও ভারতের ওপর একযোগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভূমধ্যসাগরীয় দেশটি। গত ২৯ এপ্রিল জারি করা এ-সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়, ওইদিনের ঠিক ১৪ দিন আগে থেকে (১৫ এপ্রিল) যারা বাংলাদেশ ও ভারতে অবস্থান করেছে, তাদের কেউই ইতালিতে ঢুকতে পারবে না। তবে দেশটির নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নেই, তৃতীয় এমন কোনো দেশের যাত্রাীরা ১৪ দিন অবস্থানের পর ইতালিতে প্রবেশ করা যাবে।
করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিকে কারণ দেখিয়ে গত ১ মে রাত ১২টা থেকে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার চার দেশ থেকে যাত্রী ঢোকা নিষিদ্ধ করে সিঙ্গাপুর। অন্য দেশগুলো হলো নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা। এর আগে ২০ এপ্রিল ভারত থেকে প্রবেশের ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল দেশটি। এছাড়া অন্য দেশে যাওয়ার ক্ষেত্রেও ট্রানজিট সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে সিঙ্গাপুর। তবে কত দিনের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি।
ওমানও বাংলাদেশিদের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। গত ২৪ এপ্রিল থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে। দেশটির নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ভারত-পাকিস্তানও রয়েছে। এর আগে প্রবাসী কর্মীদের কর্মস্থলে ফেরাতে ওমানে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে মাস্কাটগামী বিশেষ ফ্লাইটগুলো শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। ওমানগামী আটকে পড়া প্রবাসী কর্মীদের অনেকেই ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় চাকরি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী দেশগুলোর প্রায় সবই দেশের বড় শ্রমবাজার। এ কারণে দেশের জনশক্তি রফতানি খাতের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বায়রার সাবেক অর্থ সচিব ফখরুল ইসলাম রাতে ইনকিলাবকে বলেন, হঠাৎ ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় নতুন কর্মীরা যেমন শঙ্কায় পড়ছেন, তেমনি বিপদে পড়ছেন ছুটিতে আসা কর্মীরাও। কারণ যারা ছুটিতে এসেছিলেন তাদের ভিসা, আকামার মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। ঠিক সময়ে ফিরতে না পারলে আকামার মেয়াদ নবায়ন করা নিয়েও সমস্যায় পড়বেন তারা। তিনি বলেন, বিদেশগামী কর্মীদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে করোনার টিকা দিতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, গোটা বিশ্বই করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত। এর মাঝেও বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে বাঁচতে হলে বিদেশগামী কর্মীদের জন্য করোনার টিকা বরাদ্দ রাখতে হবে। তিনি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বাংলাদেশের প্রধান শ্রমবাজার সউদী আরবের সঙ্গে এখনো ফ্লাইট চালু রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে করোনার টিকা না নেয়া যাত্রীদের প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর খরচও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকেই বহন করতে হবে। ২০ মে থেকে এ ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছে সউদী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আপাতত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের ন্যূনতম সময়সীমা রাখা হয়েছে সাতদিন। ওই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সউদীগামী প্রবাসী যাত্রীদের ভ্রমণ ব্যয় অনেকখানিই বেড়েছে। সউদী সিভিল এভিয়েশন অথরিটি জানিয়েছে, এরই মধ্যে এ নির্দেশনা সব এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সউদী পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত ও নির্ধারিত হোটেলগুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এজন্য এয়ারলাইনসগুলোকে টিকিটের মূল্যের সঙ্গে হোটেলে অবস্থানের চার্জও নিয়ে নিতে হবে। তবে ঢাকাস্থ সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের কর্তৃপক্ষ গতকাল ঘোষণা করেছেন সউদী কোম্পানীগুলো কর্মীদের সউদীতে হোটেলের সাতদিনের বুকিং নিশ্চিত করলে শুধু টিকিটের মূল্য পরিশোধ করেই যাত্রাীরা সউদী যেতে পারবেন।
বায়রার সূত্র মতে, সউদীতে শ্রমবাজারের প্রচুর বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা রয়েছে। ২০২০ সালে সউদীতে ১ লাখ ৬১ হাজার ৭২৬ জন নারী-পুরুষ কর্মী চাকরি লাভ করেছে। চলতি বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দেশটিতে ৬৫ হাজার ৪৬ জন নারী-পুরুষ কর্মী কর্মসংস্থান লাভ করেছে। ১৯৯১ সাল থেকে দেশটিতে গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ৩ লাখ ৬১ হাজার ৬শ’ নারী গৃহকর্মী কর্মসংস্থান লাভ করেছে।
বিমানের টিকিটের উচ্চ মূল্য এবং সউদী আরবে পৌঁছার সাথে সাথে সাতদিন হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকা-খাওয়ার ব্যয় বহন করতে হিমসিম খাচ্ছেন প্রবাসী কর্মীরা। এতে বিমান ভাড়ার ৬০ হাজার টাকার সাথে অতিরিক্ত সউদীর হোটেলের সাতদিনের ব্যয় আরো ৭০ হাজার টাকা কর্মীকেই বহন করতে হচ্ছে। এয়ারলাইন্সগুলো একজোট হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের ওয়ানওয়ে টিকিট ৬০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করছে। জনশক্তি রফতানির খাতকে ধরে রাখতে না পারলে রেমিট্যান্স প্রবাহে ধাক্কা লাগতে পারে। একাধিক জনশক্তি রফতানিকারক এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ ইরাকের শ্রমবাজারে আবারো অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ইরাকী পুলিশের ধরপাকড় শুরু হওয়ায় অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীরা চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। করোনা মহামারি সংক্রমণ চলাকালে ইরাকের বিভিন্ন অঞ্চলে বাংলাদেশি অপহরণকারী মাফিয়া চক্রের উৎপাত অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। দেশটিতে পুলিশি তল্লাশী এবং মাফিয়া চক্রের কালো থাবা থেকে বাঁচার জন্য অনেক অসহায় অবৈধ প্রবাসী কর্মী চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। বাগদাদ থেকে একাধিক সূত্র এতথ্য জানিয়েছে।
প্রাচীন ব্যাবিলনীয় সভ্যতার ধারক ইরাকে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে দুই লক্ষাধিক বাংলাদেশি কর্মরত। এসব প্রবাসী প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন। ভালো বেতনে চাকরি দেয়ার মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে মাফিয়া চক্র অবৈধ কর্মীদের অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আটকে নির্যাতন চালিয়ে লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করছে। এসব চিহ্নিত মাফিয়া চক্রদের নির্মূলে বাগদাদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের তৎপরতা চোখে পড়েনি। ইরাকের বিভিন্ন প্রদেশের কারাগারে শত শত প্রবাসী বাংলাদেশি দীর্ঘ দিন যাবত মানবেতর জীবন-যাপন করছে। আইনী সহায়তার মাধ্যমে এসব প্রবাসী কর্মীদের দেশে প্রেরণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে ইরাক থেকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। অপহরণ আতঙ্ক আর পুলিশি অভিযান থেকে রক্ষা পেতে প্রবাসী কর্মীদের মাঝে বাড়ছে হতাশা।
এদিকে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র নিজ নাগরিকদের উদ্দেশে ১১৬টি দেশে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার সুপারিশ করে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এ তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। তালিকায় যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, ইসরাইল, মেক্সিকো, জার্মানিসহ আরো কিছু রাষ্ট্রকে কভিড-১৯-এর অতিউচ্চ সংক্রমণের ঝুঁকিযুক্ত দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় নেপালকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে বেবিচক। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। গত সপ্তাহে এক সর্কুলারে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে বলে জানিয়েছে বেবিচক।
অন্যদিকে, সিঙ্গাপুর আরো আগে থেকেই ভারত থেকে আসা যাত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত থেকে আগত যাত্রীদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় এখন বিপদে পড়েছে দেশটির শ্রমখাত। বাংলাদেশি আর ভারতীয় শ্রমিক কমে যাওয়ায় সিঙ্গাপুরের কোম্পানিগুলোর মাথায় হাত পড়েছে। বেশ কয়েকটি সংস্থা সিঙ্গাপুরের ইংরেজি চ্যানেল সিএনএকে বলেছে, যেসব কোম্পানি ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ এবং ভারত থেকে আসা অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল ছিল তারা এখন বিকল্প দেশের শ্রমিক খুঁজছে। তবে তারা এটাও বলেছে যে, তারা কেবলই বিকল্প অন্বেষণ করতে শুরু করেছে এবং আপাতত ধরে নিচ্ছে যে প্রকল্পগুলোর কাজ বাধাগ্রস্ত হবে এবং সেগুলো শেষ করতে বিলম্ব হবে।