ইয়েভগেনি প্রিগোজিন, যিনি চুরি, ডাকাতির অভিযোগে একাধিকবার জেল খেটেছেন। পরবর্তীকালে বিশ্ব রাজনীতিতে তার পরিচয় হয় ‘পুতিনের পাচক’ হিসেবে, সেই প্রিগোজিনের ভাড়াটে বাহিনীর ‘মস্কো চলো’ অভিযানে তোলপাড় পড়ে গেছে ক্রেমলিনের অন্দরে। এতে আনন্দে আত্মহারা গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে রাশিয়ার আগ্রাসনের শিকার ইউক্রেন। শেষ মুহূর্তে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় আরও বড় রক্তক্ষয় এড়ানো গেছে বটে, কিন্তু তাতে শেষরক্ষা হবে কি? এখন এই প্রশ্নই উড়ে বেড়াচ্ছে মস্কোর আকাশে-বাতাসে। কী এই ওয়াগনার বাহিনী? ইয়েভগেনি প্রিগোজিনই বা কে? কী তার আসল পরিচয়? তার এই স্বল্পস্থায়ী অভ্যুত্থানের পরিণতিই বা কী হতে পারে?
মূল বিবাদের শুরু কোথায়?
গত শুক্রবার প্রিগোজিন অভিযোগ তুলেছিলেন, রাশিয়ার সেনারা তার ওয়াগনার গ্রুপের উপরই আক্রমণ চালাচ্ছে। এতে ভাড়াটে বাহিনীর বহু সৈন্যের মৃত্যু হয়েছে। সেই সময়ই প্রত্যাঘাতের হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন প্রিগোজিন। বলেছিলেন, যেকোনও বাধাবিপত্তি উড়িয়ে মস্কোকে নিজের জায়গা চেনানোর সময় এসেছে। বস্তুত, তারপরই মস্কো অভিমুখে যাত্রার শুরু। সে পথে হাঁটতে হাঁটতেই দক্ষিণ রাশিয়ার রস্তভ-অন-ডন শহর বিনা বাঁধায় দখল করে তার বাহিনী। এরপর আবার মস্কোর দিকে এগোয় অভিযান।
এখন কী হচ্ছে?
বেলারুশের নেতার সঙ্গে ‘সফল’ আলাপের পর শনিবার রাতে প্রিগোজিন জানিয়েছেন, তিনি তার বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন- মস্কোমুখী পথ থেকে ফিরে আসতে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, মস্কো দখলে যে রক্তপাত হবে, তা এড়াতেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ক্রেমলিনের মুখপাত্রও জানিয়েছেন, ওয়াগনারের প্রধান রাশিয়া ছেড়ে বেলারুশ যেতে সম্মত হয়েছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে প্রিগোজিন কোথায়? কেউ জানে না। কিন্তু সত্যিই কি শুধু রক্তক্ষয়ের কারণেই মাঝপথে রণে ভঙ্গ দিলেন প্রিগোজিন?
এরপর কী করবেন প্রিগোজিন?
স্বল্পস্থায়ী বিদ্রোহে আপাতত এক বালতি পানি! লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে প্রিগোজিনের হওয়া ‘চুক্তি’ অনুযায়ী, রাশিয়ার আইন মেনে তার বিরুদ্ধে যেকোনও রকম ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া আটকাতে প্রিগোজিন বেলারুশে চলে যাবেন। বিদ্রোহের কারণে তার উপর যেসব ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছে, তা-ও প্রত্যাহার করবে ক্রেমলিন। তার বাহিনীর যোদ্ধাদের বিরুদ্ধেও কোনও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে না। কিন্তু এতেও সম্ভবত বিপদ এড়াতে পারবেন না প্রিগোজিন।
সিএনএনের মস্কোর প্রাক্তন ব্যুরো প্রধান জিল ডগার্টি বলেছেন, “ভ্লাদিমির পুতিন বিশ্বাসঘাতকদের ক্ষমা করেন না।”
প্রিগোজিনের অদৃষ্টে কী আছে, তা এখনও অস্পষ্ট। তবে প্রিগোজিনের বাহিনী যখন ঝড়ের গতিতে মস্কো অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন কিন্তু প্রবল প্রতাপান্বিত পুতিনকে যথেষ্ট অসহায় এবং দুর্বল দেখিয়েছে।
কী করবেন পুতিন?
ক্ষমতায় বসার পর থেকে এমন চাপের মুখে পড়তে দেখা যায়নি পুতিনকে। গত ২৩ বছর ধরে পুতিনের একছত্র আধিপত্যে মাত্র ৩৬ ঘণ্টার স্বল্পস্থায়ী বিদ্রোহ যে ক্ষতের সৃষ্টি করল, তার উপশম হবে কী করে? আদৌ কি তা উপশমযোগ্য? বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, প্রিগোজিন কাজের কাজ করতে না পারলেও পুতিনের ‘স্ট্রংম্যান’ ভাবমূর্তিতে জোর ধাক্কা দিয়ে গেলেন। ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে করতে তা কী করে সামলাবেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট? না কি এই ঘটনাই পুতিনের ২৩ বছরের সাম্রাজ্যের পতনের শুরু?
কী বলছেন জেলেনস্কি?
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, “ওয়াগনার দেখিয়ে দিয়েছে, রাশিয়া আসলে কতটা দুর্বল! পুতিন খুব ভয় পেয়ে গেছেন। ওয়াগনারের হাত থেকে বাঁচতে গা ঢাকা দিয়েছেন। এই মুহূর্তে ক্রেমলিনের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা, গৃহযুদ্ধের সুযোগ নিয়ে পশ্চিমরা কী করে বসে!”