নিজস্ব প্রতিবেদক
বর্তমানে বাংলাদেশে যে বিভাজনের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে যার কুফল সর্বক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি। যার ফলে সমাজ বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে, মানুষ বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। যেটা আমাদের জন্য সুখকর বিষয় নয়।
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি চত্বরে সংগঠনটির রজতজয়ন্তী উপলক্ষে র্যালি উদ্বোধন করার আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ঐক্য ধরে রেখেছে এমন মন্তব্য করে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দের প্রশংসা করেন তিনি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা বিশ্বাস করি দেশের গণতন্ত্র ও সামগ্রিক সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম গণমাধ্যম। যে দেশের গণমাধ্যম যত স্বাধীন ও শক্তিশালী সেই দেশের গণতন্ত্র তত বেশি শক্তিশালী।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দুর্ভাগ্য আজকে সারাবিশ্বে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপরে একটা চাপ সৃষ্টি শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে সেই চাপ অনেক বেশি আমরা লক্ষ্য করছি। আমরা দেখেছি শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে অনেক সংবাদকর্মীকে নিগৃহীত হতে হয়েছে, প্রাণ দিতে হয়েছে। তাদেরকে অনেক সময় কারাগারে যেতে হয়েছে। সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক সময় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সব সময় বলে আসছি যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র এখন প্রায় অনুপস্থিত। এখানে মানুষের স্বাধীনতা-সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্র, সংসদীয় গণতন্ত্র ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে এসেছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে একটি ব্যতিক্রমী সংগঠন। এটা সংবাদকর্মীদের নিজস্ব সংগঠন এবং এখানে এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক বিভাজনের মধ্যে নিজেদেরকে ডুবিয়ে দেননি। তারা গত ২৫ বছর ধরে পেশাদার সংগঠন হিসেবে নিজেদের ঐক্যকে ধরে রাখতে পেরেছেন। এজন্য তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ফখরুল বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যে বিভাজনের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে যার কুফল সর্বক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি। যার ফলে সমাজ বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে, মানুষ বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। যেটা আমাদের জন্য সুখকর বিষয় নয়। আমাদের ভবিষ্যতের জন্য আনন্দময় নয়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি যেভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা আমাদের জন্য আশার একটা আলো দেখায়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সব সদস্যকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যখন একদিকে কোভিড-১৯ সারাবিশ্বকে গ্রাস করে ফেলেছে, মানবসভ্যতাকে বাধাপ্রদান করছে, সেই সময়ে তারা অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ফ্রন্টলাইনার হিসেবে কাজ করছেন। এসময় অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও মাগফিরাত কামনা করছি। সেই সঙ্গে যারা বিপদকে সামনে নিয়ে লড়াই করছেন তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি এই প্রত্যাশায় যে আপনাদের যে চরিত্র আপনারা রেখেছেন সেই চরিত্র আপনারা অক্ষুণ্ন রাখবেন এবং সত্যিকার অর্থেই গণতন্ত্র ও জনগণের সেবা করার জন্য আপনারা সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা মনে করি গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে আইনগুলো করা হয় এগুলো গণমাধ্যমের স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য কখনও উপযোগী নয়। দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি বাংলাদেশে গণমাধ্যম মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভিন্নমতকে সহ্য করার যে সহনশীলতা সেটা ধীরে ধীরে একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।
ফখরুল বলেন, আজকে লজ্জার সঙ্গে একটা খবর লক্ষ্য করলাম যেটা পত্রিকায় এসেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের ১০জন সদস্য তাদের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছে যে, বাংলাদেশের একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ৪০০ মানুষ বিনা বিচারে নিহত হয়েছেন। তা নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে একটা স্যাংশন দেওয়ার অনুরোধ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে। আমাদের দুঃখ হয় আজকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে এই বিষয়গুলো আজকে বিদেশের কাছে যাচ্ছে, বিশ্বসভার কাছে যাচ্ছে, যা আমাদের জন্য কখনই সুখকর বিষয় নয়।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদের সভাপতিত্বে র্যালিপূর্ব সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী, সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, ইলিয়াস হোসেন, ডিআরইউর সিনিয়র সদস্য শাহনেওয়াজ দুলাল, নজরুল ইসলাম মিঠু, মনিরুল ইসলাম, সাহাবউদ্দিন চৌধুরী, মশিউর রহমান, রাশেদুল হক, ডিআরইউর বর্তমান কমিটির দপ্তর সম্পাদক জাফর ইকবাল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাইদুর রহমান রুবেল, কল্যাণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ প্রমুখ।