প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৩ বছর গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। সবার ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়ার যে ওয়াদা আমরা করেছিলাম, সেটা পূরণ করলাম।
সোমবার (২১ মার্চ) পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় দেশের বৃহত্তম পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
এর আগে বেলা ১০টা ৪৫ মিনিটে হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তাকে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা গার্ড অব অনার প্রদান করেন। এরপর কোল জেটিতে ২০০ নৌকা থেকে পতাকা নাড়িয়ে ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে তাকে অভিবাদন জানানো হয়। বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের প্রতিটি ঘর আলোকিত হয়েছে এটাই স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর বড় প্রাপ্তি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ২১ বছর এবং ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা সবসময় দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মানুষ সামনের দিকে এগিয়ে যায়, কিন্তু বাংলাদেশ সবসময় পিছিয়ে যাচ্ছিল। (৯৬ সালের আগে) ২১টা বছর এবং এরপরে ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত সময়ে যারা ক্ষমতায় ছিল, দেশকে এগিয়ে নেওয়ার কোনও আন্তরিকতাই তাদের ছিল না; এটাই হচ্ছে এদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর সরকার গঠন করি। সেসময় বিদ্যুতের জন্য হাহাকার, সামান্য কিছু লোক বিদ্যুৎ পায়, গ্রামে গ্রামেতো বিদ্যুৎ ছিলই না। আমরা উদ্যোগ নিলাম, শুধু সরকারি না, বেসরকারি খাতেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করবো। মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাবো। ১৫শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম, ৫ বছরের মধ্যেই আমরা ৪ হাজার ৩শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হলাম। দুর্ভাগ্য আবার ২০০১ এ সরকারে আসতে পারি নাই। ২০০৯ এ যখন সরকার গঠন করি তখন দেখলাম, বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে ৩ হাজার ২শ মেগাওয়াট উৎপাদনে নেমে গেছে বিদ্যুৎ।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী ও বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘সবার জন্য বিদ্যুৎ- এ ধারণা বঙ্গবন্ধুর। আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন ও দিক-নির্দেশনা ছাড়া এটি সম্ভব হতো না।’
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা শতভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পেরেছি। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন। বর্তমানে বিদ্যুতের আওতার বাইরে দেশে কেউ নেই। এটা অনেক বড় সাফল্য।’
করোনা মহামারির কারণে প্রায় দুই বছর পর এই প্রথম কোনও প্রকল্প উদ্বোধনে সরাসরি অংশ নিলেন প্রধানমন্ত্রী।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্য দিয়ে দেশে শতভাগ দূষণমুক্ত কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে আল্ট্রা সুপারক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় এবং সারা বিশ্বে ১১তম দেশ।
বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) তত্ত্বাবধানে নির্মিত এই পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রথম ৬৬০ মেগাওয়াট ইউনিটটি ২০২০ সালের মে মাসে বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়, এটি ৪০০ কেভি পায়রা-গোপালগঞ্জ পাওয়ার ট্রান্সমিশন ব্যবহার করে এবং দ্বিতীয়টি গত বছরের ডিসেম্বরে উৎপাদন শুরু করে।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘‘২০০৯ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনও দেশে মাত্র ৪৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পেতো। মাত্র এক যুগের ব্যবধানে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর সময় আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন শতভাগ বিদ্যুতায়ন। ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’- এই মূলমন্ত্রে দুর্গম পাহাড় থেকে বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল- সব জায়গাতে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। দেশের দুর্গম ও বিচ্ছিন্ন চরে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। দুর্গম পাহাড়ে গ্রিড লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। যেখানে সম্ভব হয়নি সেখানেও সোলার সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুতায়ন করেছি আমরা।’’