★ বাংলাদেশ ইলেকট্রিক এসোসিয়েশন এর ভূমিকা কি? ★নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সামগ্রী ব্যবহারে বাড়ছে শর্ট সার্কিট জনিত অগ্নিকান্ড ★ কি করছে বিএসটি আই ★ বাড়ছে বিদ্যুৎ এর অপব্যবহার ★ রাজস্ব হাড়াচ্ছে সরকার
মুস্তাকিম নিবিড়ঃ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এর ব্যাবসায়ীদের নাকি আলউদ্দিনের চেরাগ আছে। মুহূর্তেই জিরো থেকে হিরো, ফকির থেকে কোটিপতি বনে যেতে দেখা গেছে অনেককেই। তাইতো সবাই ঝুকে পড়ছে এই ব্যাবসায়। আর এদের আশ্রয় দিচ্ছে কিছু দরবেশ বাবা, যারা তাদের এসোসিয়েশন এর নেতা। সরেজমিনে এমন ভূইফোড় অসাধু অনুমোদনহীন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১০০০ টির ও বেশি। সূত্রমতে জানা যায় খোদ বাংলাদেশ ইলেকট্রিক এসোসিয়েশন এর আওতায় এমন বৈদ্যুতিক প্রস্তুতকারী ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সদস্য পদ রয়েছে প্রায় তিন হাজার। তারাই তৈরী করছে ক্যাবল,সুইচ,সকেট,সার্কিট ব্রেকার,মটর,জেনারেটর,বাল্ব সহ নানান গুরুত্বপূর্ণ বৈদ্যুতিক সামগ্রী। যার অভয়ারণ্যে পরিনত হয়েছে নবাবপুর, কাপ্তান বাজার।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) কর্তৃক পদত্ত তথ্যে জানা যায়, দেশে বর্তমানে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের ক্যাবল, আটটি প্রতিষ্ঠানের সুইচ-সকেট ও ৩৮টি প্রতিষ্ঠানের ফ্যান তৈরির লাইসেন্স আছে। এছাড়া, অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির লাইসেন্স আছে মাত্র ২২টি প্রতিষ্ঠানের। তাহলে অননুমোদিত বাকি হাজারের অধিক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গুলো কি অবৈধ? লাইসেন্স ছাড়া প্রায় দুই শতাধিক কারখানায় তৈরি হাজারের অধিক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নকল পণ্য দিয়ে বাজার সয়লাব। এরসঙ্গে কিছু ব্যবসায়ী যারা, বৈধ-অবৈধভাবে বিদেশ থেকে অতি নিম্নমানের পণ্য আমদানি করে দেশে বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের নামে বিক্রি করছে। এবং খুবই নিম্নমানের কাচামাল দিয়ে তৈরী করছে বৈদ্যুতিক সামগ্রী। বৈদ্যুতিকসামগ্রী তৈরীতে অপরিহার্য তামার পরিবর্তে ব্যবহার করছে লোহা, শিশা, দস্তা। অধিক মুনাফার লোভে এসব প্রস্তুত করছে প্রতিষ্ঠিত বৈদ্যুতিক পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে দেওয়া কিছু কারিগর এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে হঠাৎ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া মুনাফাখোর ব্যাবসায়ী।
নতুন মোড়কে দামি ব্র্যান্ডের লোগো হুবহু ব্যবহার করে বাজারজাত হচ্ছে এসব নকল পণ্য। দেশের বাইরে থেকেও আসছে নিম্নমানের পণ্যের একটা বড় অংশ। দেশি-বিদেশি যেকোনো প্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক পণ্য নকল করা হচ্ছে। খোদ রাজধানীতেই রয়েছে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান। রাজধানীর বংশাল, নবাবপুর, সিদ্দিকবাজার, জিনজিড়া, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরসহ সারাদেশেই নকল ও নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি তৈরির কারখানার সন্ধান মিলেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নকল বৈদ্যুতিক তার কিনে গ্রাহক শুধু আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তই হচ্ছেন না, এটার মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে মৃত্যুর ফাঁদ। ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে সাম্প্রতিক আগুনের ঘটনাগুলোর ৭৫ থেকে ৮০ ভাগের পেছনে দায়ী মানহীন বৈদ্যুতিক তার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি।
এসব নকল তারের ভোক্তা কারা এমন প্রশ্নে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিক্রেতারা জানান, ‘যেসব কোম্পানি ভবন নির্মাণের দায়িত্বে থাকেন, তারাই অতি লাভের আশায় মানের সঙ্গে সমঝোতা করেন। অন্যদিকে নিখুঁতভাবে নকল হওয়ায় মূল ভোক্তাও বুঝতে পারেন না আসল নকলের পার্থক্য। বেশিরভাগ ক্রেতাই কমদামি তার খোঁজেন। তাদের যা প্রয়োজন আমরা তা সরবরাহ করি, তবে এটা ঠিক-এসব নকল তারে শর্ট সার্কিটের ঝুঁকি বেশি।
দেশের ভয়াবহ সব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ধরন ও তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে ফায়ার সার্ভিস বলছে, বেশিরভাগ অগ্নিকাণ্ডের কারণই বৈদ্যুতিক গোলযোগ। অর্থাৎ নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারের কারণে সহজেই শর্টসার্কিট হয়ে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে। আবাসিক ভবন ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানেও এখন আগুন লাগার প্রধান কারণ নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার। এছাড়া আগুন লাগার আরেকটি বড় কারণ বিড়ি-সিগারেট ও রান্নার চুলা।
দেশের সবচেয়ে আলোচিত আগুন লাগার একটি হলো রাজধানীর বঙ্গবাজার, নিউ র্মাকেট, বনানীর বহুতল বাণিজ্যিক ভবন এফআর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ড।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের তথ্য মতে, ২০২৩ সালের প্রথম চার মাসেই (জানুয়ারি-এপ্রিল) দেশে অগ্নিকাণ্ডে ১০০ জনের মৃত্যু এবং এ র্পযন্ত আহত হন ৬ হাজার ২৭ জন, ২০২১ সালে মারা গেছেন ২১৯ জন এবং আহত হন ৫৭০ জন, ২০২০ সালে মৃত্যু ১৫৪ এবং আহত হন ৩৮৬ জন, ২০১৯ সালে মৃত্যু ১৮৫ এবং আহত হন ৫৮৬ জন, ২০১৮ সালে মৃত্যু ১৩০, আহত ৬৭৭ জন এবং ২০১৭ সালে ৪৫ জনের মৃত্যু ও আহত হন ২৮৪ জন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইলেকট্রিক এসোসিয়েশনের ভূমিকা ব্যাপক হতাশাব্যাঞ্জক। তাদের কাজ কি শুধুই সদস্য সংগ্রহ করা? মাসিক চাঁদা নেয়া? বিচার শালিশ? পৃষ্ঠপোষকতা? দোকান উদ্বোধন? এদের কে ছত্রছায়া দেওয়া?
অবৈধ অনুমোদিত ভেজাল নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সামগ্রী প্রস্তুতকারীরা কারা? এদের নেপথ্যে কারা? এ দায় কিভাবে এড়াবে বাংলাদেশ ইলেকট্রিক এসোসিয়েশন (বি,ই,এ) ? বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন দৈনিক জাতীয় র্অথনিতীতে।