প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আইন কানুন যেটা আছে, সরকার আমাদের সহযোগিতা করতে বাধ্য। সংসদ নির্বাচনে প্রচণ্ড সহিংসতা হলে আমরা পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করে দেবো, আমাদের সেই ক্ষমতা আছে।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনীকালীন সরকার, বর্তমান যে সরকার তার ধরন পাল্টে যাবে। তখন পলিসি নিয়ে উনারা কাজ করবেন না। পৃথিবীর সব দেশেই এটা আছে। নির্বাচনের কাজে আমাদের সহায়তা করতে হবে।
তিনি বলেন, টিআইবির প্রতিনিধি দলকে আমরা বলেছি, আইন কানুন যেটা আছে সরকার আমাদের সহযোগিতা করতে বাধ্য। সব নির্বাচনে আমরা সরকারের কাছে সহায়তা চাইবো এবং অবশ্যই সরকার সেটা করবে বলে আশা করি। সহায়তামূলত পুলিশ প্রশাসন ও জনপ্রশাসন কেন্দ্রিক আর ডিফেন্স মিনিস্ট্রি। অন্য কোনো মিনিস্ট্রি নিয়ে আমাদের মাথাঘামনোর কোনো দরকার নেই। জনপ্রশাসন যেহেতু জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে হেন্ডেল করে, তারপর পুলিশ প্রশাসনকে হেন্ডেল করে হোম মিনিস্ট্রি, আর সশস্ত্র বাহিনীকে যদি ইনভলব করা হয়, তাহলে ডিফেন্স মিনিস্ট্রি লাগবে।
সিইসি বলেন, একই কথা অসংখ্যবার বলেছি, নির্বাচনটা অংশগ্রহণমূলক হওয়া খুবই প্রয়োজন। যেভাবেই হোক যদি মূল বিরোধী দল নির্বাচনে না আসে, তাহলে নির্বাচন স্বচ্ছ হোক, অস্বচ্ছ হোক, যাই হোক ওটার কিন্তু গুরুত্ব, গ্রহণযোগ্যতা অনেক কমে যাবে। কারণ ডেমোক্রেসির মূল কথাই হচ্ছে পজিশন এবং অপজিশন। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে যেটা দেখি সেটা কিন্তু গভমেন্ট নয়। তারপর জয়ী হয়ে যেটা পার্লামেন্টে আসে দ্যাট ইজ পার্ট অব দ্য গভমেন্ট, লেজিসলেটার। লেজিসলেটার কিন্তু বিরোধী দলে যারা থাকেন তারা ট্রেজারি বেঞ্চ। তাদের কাজই হচ্ছে সমালোচনা করা। এই সমালোচনার মাধ্যমেই কিন্তু এক ধরনের জবাবদিহিতা গড়ে ওঠে এবং সতর্কতা হয়। এজন্য আমরা চাই নির্বাচনটা অংশহগ্রহণমূলক হোক।
তিনি আরও বলেন, উনাদের বলেছি, আপনারা যারা পলিটিক্স করেন না, পলিটিক্সের ঊর্ধ্বে একটা অবস্থান আপনাদের আছে। দলগুলো প্রতিদিন যে আক্রমণাত্মক কমেন্টগুলো করছে, সেখান থেকে সরিয়ে যদি টেবিলে মুখোমুখি করা যায়, তাহলে আলোচনা হবে গঠনমূলক। টেবিলের বাইরে গিয়ে যদি ধারাবাহিকভাবে আক্রমণাত্মক বক্তব্য পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে দেয়, তাহলে কিন্তু দুরত্ব কমবে না। কারণ আমরা চাচ্ছি নির্বাচনে সব পার্টি অংশগ্রহণ করুক।
সিইসি বলেন, সরকার হিসেবে যখন সরকার থাকবে, আমাদের জানা আছে আইনে আমাদের কী ক্ষমতা আছে, আমরা কিন্তু সে সহায়তা নিতে পারবো, সেটা হলো পুলিশ প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। নির্বাচন যদি সহিংসতার কারণে বিঘ্নিত হয়ে যায় আমাদের ক্ষমতা আছে, যে কোনো একটি সেন্টার বা নির্বাচনটা বাতিল করে দেবো। আমরা সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবো। বিরূপ পরিবেশ যাতে না হয়, আমরা চাইবো নির্বাচনে যাতে ভোটারা যেতে পারেন এবং নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, সেই খবরটা আমরা রাখবো। আর সহিংসতা যদি প্রচণ্ড রকম হয়ে যায়, তাহলে আমরা ক্ষমতা ও দায়িত্ব যেটা রয়েছে সেই অনুযায়ী কাজ করবো।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনে নমিনেশন নিয়ে কত খরচ হয়, এর ফলে একটা মনস্তাত্ত্বিক বিষয় দাঁড়ায় যে জয়ী আমাকে হতেই হবে। যে পয়সা খরচ করেছি, তা তুলে আনতেই হবে। এর ফলে কিন্তু একটা সহিংস চরিত্র গড়ে ওঠে। এই জায়গা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে জানি না। তবে দলগুলোর নেতৃত্বকে উপলিব্ধ করা উচিত, নির্বাচনটা যেন বাণিজ্য না হয়। নমিনেশনটা এনে যে করেই হোক নির্বাচনে জিততে হবে, এই মানসিকতা যদি সরিয়ে আনা যায়, তাহলে আমাদের গণতন্ত্র, নির্বাচনী ব্যবস্থা ও বর্তমান অবস্থা থেকে তা উন্নত অবস্থায় পৌঁছাতে পারবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনের সময় যে সরকার থাকবে সেটাই নির্বাচনকালীন সরকার। অপজিশন থেকে যে দাবিগুলো করা হচ্ছে এগুলো নিয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই, যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেটা কিন্তু আমাদের বিষয় নয়। এটা সাংবিধানিক বিষয়। পলিটিক্যাল লিডাররা যদি একমত হন তারা দেখবেন। আমার কাছে মনে হয় নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বর্তমানে যে আইন আছে, সেটাই নির্বাচনকালীন সরকার। নির্বাচনের সময় তার সঙ্গে আমাদের ইন্টারঅ্যাকশন বেড়ে যাবে।
কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্যকে (এমপি) কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশনা দিলেও তিনি মানেননি। এক্ষেত্রে সংসদ নির্বাচনে এমপিদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো কিনা জানি না। কতগুলো বিষয় আছে উনাকে চিঠি দিয়েছিলাম যেন উনি না থাকেন, যে যারা ভিভিআইপি তারা পারবেন না। কিন্তু সংসদ নির্বাচন যখন হবে, তখন তো তারা এলাকায় থাকবেন। উনারা সংসদীয় এলাকায়, নির্বাচনী এলাকায় থাকবেন। কিন্তু কিছু আচরণ ফলো করতে হবে। এই বিষয়টা তো আপেক্ষিক আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো কি পারবো না। সুতরাং আমাদের চেষ্টা থাকবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, সব দেশেই তো নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনেই হচ্ছে। ভারতেও হচ্ছে, আমেরিকাতে হচ্ছে। আমরা যদি এই বিভাজনটা স্পষ্ট করতে পারি, এই মেসেজটা দিতে পারি, যখন কেবিনেট যেটাকে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি থেকে বা প্রধানমন্ত্রী থেকে ডেপুটি.., এটাই কিন্তু মূল সরকার। বাকি যারা আছে সেটা কিন্তু আমলাতন্ত্র। কাজেই যে সরকার আছে, তারা কিন্তু শপথ নিয়েছেন- সংবিধানিক অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবো, সমআচরণ করবো, পক্ষপাতিত্ব করবো না। উনারা বলেন নাই, যে আমরা আমাদের দলকে আগামীতে আরও বেশি করে হেল্প করবো। উনারা বলেন না। আমার বিশ্বাস উনারা উনাদের শপথটা জানেন। নির্বাচনের সময় অন্তত একটা সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচনের স্বার্থে উনারা নির্বাচনকালীন সরকারের মতোই আচরণ করবেন। সরকারের মন্ত্রী হিসেবে বা কোনো দলের মন্ত্রী হিসেবে নয়।
শপথ নিয়েও এর আগের কমিশন বা অনেকে শপথ রক্ষা করেননি এ বিষয়ে সিইসি বলেন, সেটা দেখা যাবে।
এর আগে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সিইসিসহ অন্য কমিশনারদের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানান সিইসি