সেঞ্চুরিয়নে ৩৮ রানের ব্যবধানে প্রথম ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে তামিম ইকবালদের সামনে সুযোগ ছিল সিরিজ জিতে নেয়ার। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতায় সেটা আর সম্ভব হলো না।
বরং, বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেয়া ১৯৫ রানের লক্ষ্য ৩৭.২ ওভারে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়েই টপকে গেলো প্রোটিয়ারা। ৭৬ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের সহজ জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা ফেরালো স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা।
আজ রোববার (২০ মার্চ) জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্সে স্বাগতিকদের কাছে ৭ উইকেটের ব্যবধানে হেরেছে তামিমবাহিনী। শুরুতে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৯৪ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে ৩ উইকেট হারিয়ে ৭৬ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাভুমাবাহিনী।
এর আগে সেঞ্চুরিয়নে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩৮ রানে জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ, যা আবার প্রোটিয়াদের মাটিতে যেকোনো ফরম্যাটে টাইগারদের প্রথম জয়। দুই ম্যাচ শেষে এখন ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা বিরাজ করছে।
১৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুটা দুর্দান্ত হয় দক্ষিণ আফ্রিকার। দুই ওপেনার কুইন্টন ডি কক ও জানেমান মালান মিলেই তুলে ফেলেন ৮৬ রান। ২৬ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৮তম ফিফটির দেখা পান ডি কক। তবে অপরপ্রান্তের ব্যাটার জানেমান মালান বেশিদূর যেতে পারেননি। বোলিংয়ে প্রচুর রান খরচ করা মেহেদী হাসান মিরাজের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন স্বাগতিক দলের ডানহাতি ওপেনার (২৬)। মিরাজের আঘাতের পর প্রোটিয়াদের রানের গতি কিছুটা শ্লথ হয়ে আসে। তবে এক প্রান্তে তখনও আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছিলেন ডি কক।
প্রোটিয়া বাঁহাতি ওপেনারকে নিজের দ্বিতীয় ওভারেই ফেরান সাকিব। বাঁহাতি স্পিনারের বলে স্লগ-সুইপ শট খেললেও ডিপ মিড উইকেটে আফিফ হোসেনের দারুণ এক ক্যাচে পরিণত হন ডি কক। ৪১ বল স্থায়ী তার ৬২ রানের ইনিংসটি ৯টি চার ও ২টি ছক্কা সাজানো। বাংলাদেশের সাফল্য বলতে ওই পর্যন্তই। কারণ এরপর কাইল ভেরেইনে ও টেম্বা বাভুমার ৮২ রানের দারুণ এক জুটিতে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ।
বাভুমা অবশ্য ৩৭ রান করে আফিফের বলে শরিফুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। কিন্তু কাইল ভেরেইনে আফিফের বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে নিজের চতুর্থ ফিফটি তুলে নেন। শেষ পর্যন্ত দলের জয় নিশ্চিতের সময় ৫৮ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
এর আগে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ভালো সংগ্রহ পায়নি বাংলাদেশ। সেঞ্চুরিয়নে ব্যাটাররা দারুণ পারফর্ম করলেও জোহানেসবার্গে আফিফ ও মিরাজ ছাড়া কেউই উল্লেখযোগ্য রান পাননি। বিশেষ করে প্রথম ম্যাচে যাদের (সাকিব, লিটন, তামিম, ইয়াসির) ব্যাটে বড় রানের দেখা পাওয়া গিয়েছিল, তাদের সবাই আজ ব্যর্থ হয়েছেন। বল হাতেও দেখা মেলেনি প্রথম ম্যাচের ছন্দ।
টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবাল। কিন্তু তার এমন সিদ্ধান্ত শুরুতেই ভুল প্রমাণিত জয় তার নিজের হাত ধরেই। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দলীয় তৃতীয় ওভারে আসা লুঙ্গি এনগিডির দ্বিতীয় বলে ফিরে যান এই বাঁহাতি ওপেনার (১)। প্রোটিয়া পেসারের বাউন্সে পরাস্ত হলে বল ব্যাটের কানায় লেগে উপরে উঠে যায়। সহজ ক্যাচ লুফে নেন কেশভ মহারাজ। পরের ওভারেই কাগিসো রাবাদার বলে শূন্য রানে ফিরে যান আগের ম্যাচের সেরা সাকিব আল হাসান।
এরপর বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি আগের ম্যাচে ফিফটি হাঁকানো লিটন দাসও। ডাক মেরে সাকিবের বিদায়ের পর রাবাদার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে দেন লিটন দাস। ২১ বলে ১৫ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি। এদিন ব্যাট হাতে আলো ছড়াতে পারলেন না ইয়াসির আলীও। দ্বাদশ ওভারের শেষ বলে রাবাদার বলে কেশব মহারাজের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। ১৪ বলে মাত্র ২ রান করে বিদায় নেন এই ব্যাটার। পরের ওভারেই পার্নেলের বলে এলবিডব্লিউ হন মুশফিকুর রহিম। ৩১ বলে ১২ রান করে সাঝঘরে ফেরেন তিনি।
একসময় ৩৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। দল যখন ব্যাটিং বিপর্যয়ে তখন হাল ধরলেন আফিফ হোসেন ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। থিতু হয়ে ৮৭ বলে ৬০ রানের জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটার। কিন্তু ২৮তম ওভারে প্রথম বলেই ব্রেকথ্রু এনে দেন তাবরাইজ শামসি। জানেমান মালানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ২৫ রানে বিদায় নেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক।
মাহমুদউল্লাহর ফেরার পর মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে দলের হাল ধরেন আফিফ। ৭৯ বলে ৭ চারে তুলে নেন অর্ধশতক। অপরপ্রান্তে থাকা মিরাজকে নিয়ে যখন ৮৬ রানের জুটি গড়েন তিনি, তখনই রাবাদার বলে উইকেট হারান তিনি। ১০৭ বলে ৭২ রান করে সাঝঘরে ফেরেন এই ব্যাটার। একই ওভারে রাবাদার পঞ্চম শিকার হন মিরাজ। মালানের হাতে ক্যাচ তুলে ৪৯ বলে ৩৮ রান করে বিদায় নেন তিনি।
শেষদিকে এসে ভ্যান ডার ডুসেনের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে এইডেন মার্করামের তালুবন্দি হন শরিফুল ইসলাম (২)। এরপর তাসকিন ও মোস্তাফিজের ব্যাটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৯৫ রানের লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ। তাসকিন ৯ ও মোস্তাফিজ ২ রানে অপরাজিত থাকেন। স্বাগতিকদের হয়ে একাই ৫ উইকেট শিকার করেন রাবাদা।