কয়রা উপজেলা প্রতিনিধি: খুলনার কয়রায় ‘কয়রা সাংবাদিক ফোরাম’ নামের একটি ভুঁইফোড় সংগঠনের নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তারা বিভিন্ন মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়ের পাশাপাশি নানা হয়রাণি করে চলেছে। আত্মসম্মানের ভয়ে তাদের নির্যাতন নীরবে সহ্য করছে, এমনকি ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও বিতর্কিত সম্মাননা নিতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ২ মে খুলনার বিভাগীয় কমিশনার বরাবর আবেদন করেছেন কয়রার বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষ।
আবেদন ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, তারা সাংবাদিক সংগঠনের নামে ফেসবুক, হোয়াটঅ্যাপসসহ বিভিন্ন অনিবন্ধিত অনলাইনে স্থানীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অপপ্রচার চালিয়ে ব্লাক মেইলের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করছেন। এছাড়া অনুমতি না নিয়ে যাকে-তাকে আইডল, গুণীজন সম্মাননা দিয়ে স্টিকার তৈরি করে ফেসবুকে পোস্ট করেন। কোন যাচাই ছাড়াই যাকে-তাকে গুণীজন উপাধিতে ভূষিত করছেন। এই গুণিজন সংবর্ধনার নামে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই চক্রটি অ্যাওয়ার্ড-উপাধির মোড়কে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনকে জিম্মি করে অর্থ আদায় করে আসছে। ইচ্ছা না থাকার পরেও অনেক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সম্মাননা নিতে বাধ্য হচ্ছে।
এই চক্রের প্রধান গোবরা গ্রামের হাফিজুর রহমানের এর পুত্র তারিক লিটু। তিনি ছাত্রজীবনে ২০১৬ সালে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)তে জঙ্গিবাদের উসকানি ও অপ-সাংবাদিকতার দায়ে প্রতিষ্ঠানের আবাসিক হল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার এবং একাডেমিক হতে সাময়িক বহিষ্কারের শাস্তি পান। তার বিরুদ্ধে ১৮ জানুয়ারি কয়রা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের মিজানুর রহমান নামের এক ব্যবসায়ী। ভয়-ভীতি দেখিয়ে চাঁদা দাবি করেন বলে মিজানুর রহমানের অভিযোগ। ১৮ এপ্রিল সংগঠনটি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে প্রধান অতিথি ও আওয়ামীগের কয়েকজন নেতাকে বিশেষ অতিথি রেখে গুণিজন সংবর্ধনা-২০২৪ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কিন্তু সংসদ সদস্য তাদের সম্পর্কে নেগেটিভ তথ্য জানতে পেরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। ওই অনুষ্ঠানে অনেকেই সম্মাননা নিতে যাননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এবছর সম্মাননা পাওয়া একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতা বলেন, ফেসবুকে তাদের সম্পর্কে নেগেটিভ কমেন্ট দেখলে ঘৃণা লাগে। তাদের মত ভুইফোঁড় সংগঠন থেকে সম্মাননা নেওয়ার কোন ইচ্ছাই ছিল না। তবে তাদের কথা না শুনলে আমাদের আত্মমর্যাদা নিয়ে টানা হেঁচড়া করবে। এজন্য অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিতে বাধ্য হয়েছি।
গত বছর সেরা কবি সাহিত্যিক হিসেবে পদক দিতে চান বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা এক শিক্ষার্থীকে। তিনি একাধিক বইয়ের লেখক ও একজন স্বনামধন্য প্রচ্ছদশিল্পী। তিনি পদক নিতে অসম্মতি জানালে তাকে ভয়-ভীতি দেখানোর পাশাপাশি নানা ভাবে হয়রানি চেষ্টা করেন।
এসব বিতর্কিত কর্মকান্ডে প্রকৃত পেশাজীবী সংবাদকর্মীদের ভাবমূর্তি নষ্টের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়ছে।