বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নীলফামারী জেলার নব-নির্বাচিত আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার বলেছেন, ২০১২ সালে মিডিয়াকে কব্জা করার জন্য সাগর-রুনি হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছিলো। এই হত্যাকান্ডের আসল ইতিহাস লুকায়িত রয়েছে। এখন পর্যন্ত ১১২ বার তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। নিঃসন্দেহে এই হত্যাকান্ডের সাথে বিগত সরকারের উচ্চ মহলের লোকেরা জড়িত। গণমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হলে অনতিবিলম্বে সাগর-রুনি হত্যা বিচার করতে হবে।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে নীলফামারীর ডোমার পৌরশহরের বাটার মোড়ে উপজেলা জামায়াতের আয়োজনে ঐতিহাসিক ২৮ অক্টোবর পল্টন ট্র্যাজেডি দিবস উপলক্ষে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মাওলানা আব্দুস সাত্তার আরও বলেন, ২০১২ সালের ০৯ ডিসেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিশ্বজিৎ-কে হত্যা করা হয়েছে। যারা হত্যা করেছে তারা ওই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী, ইতিমধ্যে তাদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেদিন বিশ্বজিৎ নিজেকে অরাজনৈতিক হিসেবে পরিচয় দিলেও সেদিন সে ফ্যাসিস্টদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। এ ঘটনা ঘটিয়ে জামায়াত-শিবিরের উপর চাপাতে চেয়েছিলো কিন্তু মিডিয়া ও সংবাদকর্মীদের কারনে তাদের পরিচয় পাওয়া গিয়েছে তারা ছাত্রলীগের সদস্য। এ সময় বিশ্বজিৎ হত্যার সাথে যারা জড়িত ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের শাস্তির মুখোমুখি করার দাবী জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর খন্দকার আহমাদুল হক মানিকে এর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি হাফেজ আব্দুল হক এর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এই দুটি বাহিনীকে দুর্বল করে দিয়ে ধ্বংস করার পায়তারা করা হয়েছিলো। যাদের দ্বারা এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করেছে তাদেরকেই জেলখানায় ঢুকিয়েছে। সেনাবিদ্রোহের সেই হত্যাকান্ডের তথ্য উদঘাটনের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল কিন্তু আজও সেই তদন্ত প্রতিবেদন জাতি জানতে পারেনি। ৫৭ জন নিহত সেনা সদস্যদের হত্যার নেপথ্যে যারা ছিলো তাদের পরিচয় জাতী জানতে চায়। এবং হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে চায় এ জাতী।
প্রধান অতিথি বলেন, ২০১৩ সালের ৫ই মে হেফাজতে ইসলামের ঢাকায় একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন গোটা দেশ থেকে হেফাজতের নেতাকর্মীরা ঢাকায় জমায়েত হলো। রাতের অন্ধকারে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালানো হলো। সেই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিলো কিন্তু সেই ঘটনায় কতজন মারা গেছে সঠিক প্রতিবেদন এখনো আসেনি। আমরা সেই হত্যাযজ্ঞের বিচার চাই।
প্রধান অতিথি আরো বলেন, ২৮ অক্টোবর পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্টতম একটি দিন। ২০০৬ সালের এই দিনে জামায়াতে ইসলামীর পূর্বঘোষিত কর্মসূচীতে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার প্রকাশ্যে নির্দেশে তার সন্ত্রাসী বাহিনী লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষকে সাপের মত পিটিয়ে হত্যা করেছিলো। সেদিন লগি বৈঠার তান্ডবে বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল এবং সেই সাথে মানবতার মৃত্যু হয়েছিল। এসময় তিনি ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সকল হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করেন।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল হাকিম, উপজেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য আবু বকর সিদ্দিক, পৌরসভার আমীর নুর কামাল, সদর ইউনিয়ন আমীর আব্দুল কুদ্দুছ, পৌরসভা সেক্রেটারী সোহেল রানা, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ডোমার আদর্শ থানা সভাপতি রাকিব ইসলাম, বোড়াগাড়ি থানা শাখার সভাপতি মাসুদ রানা সহ জামায়াত ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতার্মীরা জনসভায় বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় সাত হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহন করেন। সমাবেশ শেষে ২০০৬ সালের ২৮অক্টোবরের স্মৃতিচারণ শেষে সেদিনের সেই ভয়াল ঘটনার আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এছাড়াও একই দিনে জেলার ৫ উপজেলায় জামায়াতের আয়োজনে এই কর্মসূচী পালিত হয়।