ছেলের প্রেমের খেসারতে বাবাকে নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় ফুসে উঠেছে সর্বস্তরের মানুষ । ছেলের প্রেমের খেসারত হিসাবে গাইবান্ধার জেলার সাদুল্লাপুরে রিকশাচালক ছকু মিয়াকে নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসি ও প্রহসনের সালিশ বৈঠককারীদের আইনের আওতায় আনার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে সর্বস্তরের সচেতন এলাকাবাসী।
২৭ জুন সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সাদুল্লাপুর শহীদ মিনারের সামনের পাকা সড়কে এই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে সচেতন নাগরিক সমাজ ও ৩নং দামোদরপুর ইউনিয়নবাসী। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধনে অংশ নেয় নিহতের স্বজন, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাসহ বিভিন্ন এলাকার শতশত নারী-পুরুষ। মানববন্ধন শেষে তারা বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, প্রভাবশালী আলমগীর ও মন্টু মিয়াসহ তার ভাইয়েরা পরিকল্পিতভাবে ছকু মিয়াকে রাতভর আটকে রেখে নির্যাতন করে। সালিশ বৈঠক বসিয়ে দরিদ্র ছকুর কাছে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাসহ গ্রাম ছাড়ার সিন্ধান্ত দেয়া হয়। এমনকি তার একটি মাত্র ঘরও ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন প্রভাবশালী পরিবারটি। বাকি টাকা সংগ্রহে গাজীপুরের মৌচাক এলাকায় গিয়ে গত ৩ জুন মৃত্যু হয় ছকুর। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হলেও পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। উল্টো প্রভাবশালী আসামিরা বিভিন্ন হুমকি-ধামকিসহ ঘটনা ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। অবিলম্বে জড়িত আসামিদের গ্রেফতার করে তাদের ফাঁসির দাবি জানানো হয়’। একই সঙ্গে মানববন্ধনে নিহতের স্বজন ও বক্তারা প্রহসনের সেই সালিশ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের দাবি করেন। এসময় তারা অভিযুক্ত ৩নং দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এজেডএম সাজেদুল ইসলাম স্বাধীনসহ জড়িত সালিশকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবিও জানান।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, নিহত ছকুর ছেলে মোজাম্মেল হক, ভাতিজা একরামুল হক জিতু, সাদুল্লাপুর নাগরিক কমিটির আহবায়ক আবুল বাশার মো. হান্নান পিন্টু, বাংলাদেশ ওয়াকার্স পাটির সাদুল্লাপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক কমরেড কামরুল ইসলাম, সাদুল্লাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের সভাপতি আহসান হাবীব নাহিদ, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন সাদুল্লাপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান মিলন, সাংবাদিক পিয়ারুল ইসলাম হুমায়ন ও ব্যবসায়ী আজাহার আলী। মানববন্ধনটি পরিচালনা করেন জাতীয় কৃষক সমিতির সাদুল্লাপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মণ্ডল।
উল্লেখ্য, প্রেমের টানে গত ১৫ মে রিকশা চালক ছকু মিয়ার ছেলে মোজাম্মেল হকের হাত ধরে পালিয়ে যায় পূর্ব দামোদরপুর গ্রামের প্রভাবশালী মন্টু মিয়ার মেয়ে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ছকুকে আটকে রেখে রাতভর নির্যাতন চালায় প্রভাবশালী মন্টু ও আলমগীরসহ তার ছয় ভাই। পরদিন ৯৯৯ ফোন করলে পুলিশের সহায়তায় ছকুকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। চারদিন হাসাপাতালে চিকিৎসা নিয়ে গত ৩১ মে সাদুল্লাপুর থেকে গাজিপুরের মৌচাকে ছেলে মোজাম্মেল হকের কাছে যান ছকু মিয়া। সেখানে গত ৩ জুন মারা যান তিনি। এ ঘটনায় হত্যার অভিযোগ এনে গত ১৬ জুন ৯ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন ছকুর ছেলে মোজাম্মেল হক। আদালতের নির্দেশে গত ২১ জুন ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হয় ছকুর।