সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের অনলাইনে বদলির পাইলটিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বুধবার (২৭ জুলাই) সচিবালয় থেকে গাজীপুরের কালিকৈর উপজেলায় এই বদলি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
গত ২৯ জুন কালিয়াকৈর উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনলাইনে বদলির পাইলটিং কার্যক্রম শুরু হয়। গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত ২৩ জন আবেদন করেন। তাদের মধ্যে ১৭ জনের আবেদন গ্রহণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রাথামিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান জানান, আমরা এই পাইলটিং সিস্টেম এনালাইজ ও ত্রুটিমুক্ত করে আগামী মাসের মধ্যে সারা দেশে বদলি শুরু করবো।
করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর এক আদেশে শিক্ষক বদলি বন্ধ করে দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। গত ১৩ জুন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
অনলাইন বদলির আবেদন প্রক্রিয়া নিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, একজন শিক্ষককে নির্দিষ্ট আইডি দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবেদন করলে তা পর্যায়ক্রমে প্রধান শিক্ষক, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে যাবে। তিন দিনের মধ্যে আবেদন নিষ্পত্তি করতে হবে। না হলে তিন দিন পর অটোমেটিক পরবর্তী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে যাবে। নিষ্পত্তি না করলে শোকজের অপশন থাকবে। কেউ কোনো গাফিলতি করলে ডিজির কাছে অভিযোগ করা যাবে।
সচিব বলেন, আগে হাজার হাজার শিক্ষক ডিজি, মন্ত্রী, সচিবের নিকট আসতো। এখন আর আসা লাগবে না। সহজেই ঘরে বসে অনলাইনে আবেদন করা যাবে।
আগে বছরের প্রথম তিন মাস বদলির নিয়ম প্রচলিত ছিল জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মুহিবুর রহমান বলেন, এবার আগস্ট বা সেপ্টেম্বরে শুরু করে হয়তো আগামী বছর থেকে আমরা জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত করবো।
কর্মকর্তাদের বদলিও নির্দিষ্ট সময়ে করতে চাচ্ছি জানিয়ে তিনি বলেন, সেটা আলোচনা চলতেছে। আমরা জুন এবং ডিসেম্বরে তাদের বদলি করতে চাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, সাধারণভাবে সহকারী শিক্ষকদের উপজেলার বাইরে কোনো বদলি করবো না। যেহেতু তাদের উপজেলাভিত্তিক নিয়োগ। সেখানেই তাকে চাকরি করতে হয়। তবে মেয়েদের সংখ্যা বেশি, তারা অবিবাহিত অবস্থায় চাকরিতে ঢোকে। সেই বিষয়গুলো বদলির ক্ষেত্রে বিবেচনায় নিয়ে আসবো।
অনলাইন বদলিতে দুইবারের বেশি বদলির সুযোগ থাকছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেই সুযোগ থাকছে না।
মহানগরে (সিটি) বদলির বিষয়ে মহাপরিচালক বলেন, ঢাকা শহরে বা চট্টগ্রামে বা সিটি করপোরেশনে যারা একবার আসে তাদের স্বামীরা বদলি হয়ে গেলেও তারা আর বদলি হয় না। যার কারণে আমরা মারাত্মক সমস্যার মধ্যে আছি, যারা ঢাকাতে একবার ঢুকেছে তাদের বদলির কোনো রেকর্ড আপনারাও দিতে পারবেন না।
মুহিবুর রহমান বলেন, আমরা ঢাকাসহ ১১ মহানগর বাদ দিয়ে শুরু করবো। মহানগরের জন্য আলাদা একটা প্রসিডিউর আমরা শুরু করবো। সেটার কাজ চলছে। সেটা পরে শুরু করবো। এখানে (নগরে) মানবিক কেস নাই যে ঢাকা শহরে থাকতে হবে, এখানে শহরে পড়াতে হবে আমার ছেলে-মেয়ে। এগুলো প্রাথমিকের কেস না। যেখানে প্রত্যেকটা গ্রামকে শহর বানানোর জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন সেই ক্ষেত্রে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জনবল নিয়োগ করতেছি। আমরা রুট লেবেলে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেব। এখন যদি সব শিক্ষক চলে আসে ঢাকায়, ঢাকা থেকে কাছাকাছি গিয়ে পড়ায়, তাহলে সেই পড়ানো তো হবে না। এজন্য আমরা আপাতত মহানগরগুলো বাদ দিয়ে শুরু করবো। আগামী মাসের মধ্যে আমরা শুরু করতে পারবো।
তিনি বলেন, চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মৌখিক পরীক্ষা সেপ্টেম্বরে শেষ হবে। আশা করছি সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে ফল দিতে পারবো। নতুন নিয়োগের আগেই বদলি শেষ করতে পারবো।
এক প্রশ্নে সিনিয়র সচিব বলেন, যারা এনালগ পদ্ধতিতে আবেদন করেছিলেন তাদেরকে এখন নতুন করে আবেদন করতে হবে। তাতে তার স্কোরও বাড়বে। কারণ তার চাকরির মেয়াদ বেড়েছে।
শিক্ষকদের পদোন্নতির বিষয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, বিভিন্ন ধরনের মামলা যদি না থাকতো পদোন্নতির বিষয়গুলো স্মুথ থাকতো। যেখানে মামলা আছে সেখানে মামলা নিষ্পত্তি করে এটা করে ফেলবো।