আশির দশকে রিচার্ড অ্যাটেনবরোর ‘গান্ধী’ সিনেমা আসার আগে পর্যন্ত মহাত্মা গান্ধীর কার্যকলাপ সম্পর্কে বিশ্ববাসী অবহিত ছিলেন না! একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ওই মন্তব্যের জেরে লোকসভা ভোটের আবহে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
নরেন্দ্র মোদির এইসব অলীক দাবি সঠিক ধরে নিলে, ২০১৪ সালের আগে ভারত আদিম যুগে পড়েছিল। তিনিই উদ্ধার করেছেন। ১৯৮২ সালে গান্ধীজিকে নিয়ে সিনেমা তৈরির আগে তাঁকে বিশ্বের কেউ চিনতই না! অর্থাৎ, রিচার্ড অ্যাটেনবরোর অস্কারজয়ী সিনেমা ‘গান্ধী’ই জাতির জনককে বিশ্বের দরবারে পরিচিতি দিয়েছে বলে মত তাঁর।
মোদির এই মন্তব্যের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় মঙ্গলবার থেকেই ভাইরাল। শুধু কংগ্রেস বা বিরোধী শিবির নয়, আম জনতাও মুণ্ডপাত শুরু করেছে বিজেপির পোস্টার বয়ের। কেউ বলছেন, ‘বয়স হয়ে গিয়েছে।’ কারও কটাক্ষ, ‘হারের ভয়ে মরিয়া’। কেউ আবার সাফাই দিয়েছেন, ‘মোদিজি আসলে মহাত্মা গান্ধীর ব্র্যান্ডিংয়ের কথা বলতে চেয়েছেন’। কিন্তু সত্যিটা হল, তাঁর ভোটাররা সেটা বোঝেননি। আর বিরোধীরাও এই মন্তব্যে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছে।
সাক্ষাৎকারে মোদি বলেছেন, ‘মহাত্মা গান্ধী বিশ্বের একজন মহান ব্যক্তি। তাঁর সম্পর্কে গোটা পৃথিবীকে অবগত করা কি গত ৭৫ বছরে আমাদের দায়িত্ব ছিল না? তাঁর সম্পর্কে কেউ জানত না। আমাকে ক্ষমা করবেন, কিন্তু মহাত্মা গান্ধী সম্পর্কে প্রথমবার বিশ্বের আগ্রহ তৈরি হয় গান্ধী সিনেমাটির (১৯৮২ সালের) পর। গোটা বিশ্বে ভ্রমণ করার পর আমি একথা বলছি।’ এরপরই বিরোধীরা তোপ দেগেছে, বিদেশ থেকে যে অসহযোগ আন্দোলনের সূত্রপাত, তার কাণ্ডারীকে গোটা বিশ্ব চিনত না? কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘জানি না প্রধানমন্ত্রী কোন বিশ্বে রয়েছেন, যেখানে ১৯৮২ সালের আগে মহাত্মা গান্ধীকে কেউ চিনত না!, আমেদাবাদে গান্ধীবাদী প্রতিষ্ঠানগুলিকে ধ্বংস করেছে। আরএসএস কর্মীরা গান্ধীর জাতীয়তাবাদকে বোঝেন না। এটাই তাঁদের হলমার্ক। তাঁদের মতাদর্শের কারণে সৃষ্ট পরিবেশের প্রভাবেই নাথুরাম গডসে খুন করেছিল গান্ধীজিকে। ২০২৪ সালের এই লোকসভা নির্বাচন গান্ধী অনুগামী বনাম গডসে অনুগামীদের লড়াই। বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর গডসে অনুগামী সহকর্মীদের পরাজয় নিশ্চিত।’ তাঁর আক্রমণ, ‘মহাত্মা গান্ধীর পরম্পরা যদি কেউ ধ্বংস করে থাকেন, তাহলে তিনি স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি।’ একই সুরে আক্রমণ করেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে। তাঁর তোপ, ‘যাঁর রাজনৈতিক পূর্বসূরিরা নাথুরাম গডসের সঙ্গে গান্ধীজির হত্যায় জড়িত ছিল, তাঁর থেকে এর বেশি কী আশা করা যায়। বাপুর দেখানো সত্যের পথে এরা হাঁটতে পারবে না। এবার ব্যাগপত্র গুছিয়ে রওনা দেওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে।’ রাহুল গান্ধী আবার এই ইস্যুতে সরসরি মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতাকে নিশানায় নিয়ে এসেছেন।
নরেন্দ্র মোদির দাবি, তিনি ‘এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স’ নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। সেটা কোথাকার স্বীকৃত ডিগ্রির বিষয়, এই প্রশ্ন তুলে বিরোধীরা আগে কম খোঁচা দেয়নি। তাকেই আবার উস্কে দিয়ে রাহুল গান্ধী পোস্ট করেছেন, ‘শুধু এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্সের ছাত্রেরই মহাত্মা গান্ধী সম্পর্কে জানতে সিনেমা দেখার প্রয়োজন পড়ে।’ আর প্রিয়াঙ্কা গান্ধী? তাঁর কটাক্ষ, ‘গুরুজনে বলে গিয়েছেন, যখন কোনও ব্যক্তির উপর আমিত্ব চেপে বসে, তাঁর কপালে হরি বা জন, কেউই জোটে না। কতটা দুরবস্থা হলে উনি বলতে পারেন, একজন ইংরেজ একটা সিনেমা বানানোর আগে কেউ গান্ধীজিকে চিনত না! বাহ! দুর্ভাগ্যজনক, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়কের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী এত কম জানেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বোধহয় গান্ধীজিও স্রেফ একটা পিআর স্টান্ট।’