সিরিয়ার যুদ্ধে অংশ নিতে গত বছর সেপ্টেম্বরে তুরস্কে গিয়েছিলেন মিনহাজ হোসেন (৩৮) নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কিন্তু সুবিধা করতে না পেরে ডিসেম্বর মাসেই ফিরে আসেন বাংলাদেশে। তবে এরই মধ্যে তার বিষয়ে তথ্য চলে আসে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে। রাজধানীর মালিবাগে কিছুদিন অবস্থানের পর খুলনায় আত্মগোপন করেন মিনহাজ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম (সিটি) ইনভেস্টিগেশন বিভাগের তৎপরতার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ফিরছিলেন ঢাকায়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। অবশেষে রাজধানীর দারুস সালাম থানার কোনাবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে শনিবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করে সিটিটিসির একটি দল। এ সময় তার কাছ থেকে ১টি মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পরে গতকালই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের নির্দেশে চার দিনের রিমান্ডে নেয় সিটিটিসি।
সিটিটিসির উপকমিশনার (ডিসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেফতার মিনহাজ নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির একটি অংশ নব্য জেএমবির সক্রিয় সদস্য। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক উগ্রবাদী সংগঠন হায়াত তাহরির আল শামের (এইচটিএস) সদস্যদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে বলেও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন তিনি। মিনহাজ ও তার পলাতক সহযোগীরা নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার জন্য ঘটনাস্থলে মিলিত হয়েছিলেন এমন কিছু তথ্য ছিল আমাদের কাছে।’
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মিনহাজ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সিরিয়ার উদ্দেশে তুরস্কে যান। তুরস্কে থাকাকালে তিনি সন্ত্রাসী সংগঠন হায়াত তাহরির আল শাম (এইচটিএস) সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে সিরিয়া যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সিরিয়ায় যেতে না পেরে তুরস্ক থেকে ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশে ফিরে আসেন মিনহাজ। কিছুদিন ঢাকার মালিবাগে থেকে খুলনা গিয়ে আত্মগোপন করেন তিনি। একই সঙ্গে বাংলাদেশে অবস্থানরত নব্য জেএমবির সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন।
সূত্র আরও বলেন, মিনহাজ বংশানুক্রমে বাংলাদেশের নাগরিক। তবে তিনি বাংলাদেশে জন্মগ্রহণের পর কিশোর বয়সেই মায়ের চাকরির সুবাদে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে পাকিস্তানে চলে যান। ‘ও’ লেভেল, ‘এ’ লেভেল এবং গ্র্যাজুয়েশন সেখানেই শেষ করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান থেকে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে মাস্টার্স শেষ করেন মিনহাজ। এর বাইরেও তিনি বিভিন্ন সময় মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, পাপুয়া নিউগিনিসহ একাধিক দেশ ভ্রমণ করেন এবং ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। পরে দেশে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, আইইউবিটিসহ আরও দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন তিনি। তবে তুরস্কে যাওয়ার আগেই চাকরি ছেড়ে দেন মিনহাজ।
সৌজন্যে : বাংলাদেশ প্রতিদিন