এম এ রশীদ: ৮ই মে শেষ হওয়া উপজেলা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন নিকটতম প্রার্থীরা। করছেন কারচুপির অভিযোগও। প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েও তাদের সন্দেহ ও সংশয় রয়েছে। এ অবস্থায় কেউ কেউ আইনি লড়াইয়ে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। ওই দিন সিলেট জেলার সদর, বিশ্বনাথ, দক্ষিণ সুরমা ও গোলাপগঞ্জে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে গোলাপগঞ্জে সশস্ত্র মহড়া হয়েছে। আর সদরে সেন্টার দখল করে জালভোটের অভিযোগে কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত ছিল। বিশ্বনাথে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয় রাত পৌনে একটায়। তার আগে সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন ইউএনও’র উপস্থিতিতে নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলেছিলেন। এ সময় তার বক্তব্য ধারণ করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের পক্ষপাতের অভিযোগও করেন গিয়াস। এ উপজেলায় নির্বাচনী কর্মকর্তা বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করেছেন জেলা বিএনপি’র সাবেক সহ- সভাপতি সুহেল আহমদ চৌধুরী। খুব কম ভোটের ব্যবধানে তৃতীয় স্থানে থাকা আরেক প্রার্থী ও বহিষ্কৃত যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা মো. সেবুল মিয়া সংবাদ সম্মেলন করে ভোট কারচুপির অভিযোগ করে পুনরায় ভোটগ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থী সেবুল মিয়া বলেছেন- একই সময়ে অনুষ্ঠিত সিলেট বিভাগের ১১টি উপজেলার নির্বাচন ফলাফল রাত ১০টার মধ্যে ঘোষণা করা হলেও রহস্যজনক কারণে ‘নোয়ারাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ ভোটকেন্দ্রের ভোটে গরমিল থাকায় বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল আটকে রাখা হয়। অবশেষে রাত ১টায় নাটক সাজিয়ে প্রশাসন ১ প্রার্থীর কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করে। একই সঙ্গে বিশ্বনাথের মানুষ প্রহসনের এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকি সর্বস্তরের মানুষ উপজেলা সদরে এসে প্রতিবাদ জানিয়েছে। কিন্তু পুলিশ বাহিনী সাধারণ জনগণের ওপরে লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দিয়েছে। ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার বরাবরে ফলাফল বাতিল করে পুণঃভোটের দাবি জানিয়ে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন ‘দোয়াত-কলম’ প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত) প্রবাসী সেবুল মিয়া। একই অভিযোগ এনে ‘আনারস’ প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন আহমদও নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে কয়েকটি কেন্দ্রে পুনঃভোট ও পুনঃগণনার দাবিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। সেবুল মিয়া অভিযোগ করেন- ফলাফল ঘোষণার পর থেকে বিজয়ী প্রার্থী ও কর্মীরা আমার (সেবুল) এজেন্ট-কর্মীদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। গত শুক্রবার উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের হাবড়াবাজারের ঝুমন আহমদ নামের এক কর্মীকে প্রাণে হত্যার হুমকি দিয়েছে বিজয়ী প্রার্থীর সন্ত্রাসীরা। এ ব্যাপারে আমরা থানার অভিযোগ করেছি এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছি। এদিকে- গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সন্ত্রাস আর জালভোটের মহোৎসব হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পরাজিত দুই চেয়ারম্যান ও একজন ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ পুরো প্রশাসন নির্লজ্জভাবে এলিম চৌধুরীর পক্ষে কাজ করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা। আর তাই তারা এ উপজেলায় পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। শনিবার দুপুরে সিলেট মহানগরীর একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঘোড়া প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহিদুর রহমান চৌধুরী জাবেদ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গোলাপগঞ্জে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের নামে প্রহসন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর এই প্রহসনের নেতৃত্বে ছিলেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আহসান ইকবাল। সকাল থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্র দখল করেন মঞ্জুর কাদির শাফি চৌধুরী এলিমের কর্মী- সমর্থকরা। উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের বরায়া, হিলালপুর, হাজীপুর, মোল্লাগ্রাম ও কালিদাসপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে আনারস ও ঘোড়া প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দিয়ে দোয়াত-কলম মার্কায় ব্যাপক জালভোট দেয়া হয়। এমনকি এসব কেন্দ্রে প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসাররাও জালভোট দিয়েছেন। মসজিদের ইমামকে দিয়েও দোয়াত-কলমের পক্ষে জালভোট দেয়ানো হয়েছে। গুণ্ডা বাহিনী ভাদেশ্বর ইউনিয়নের শেখপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করতে গেলে প্রতিরোধের মুখে পড়ে। তারা ছোরা চাকু দা নিয়ে হামলা চালিয়ে আনারসের ৩ কর্মীর ওপর হামলা করলে তারা মারাত্মক আহত অবস্থায় এখনো মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। তিনি বলেন- কেন্দ্র পরিদর্শন করার সময় কায়স্ত গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে গেলে এলিম চৌধুরীর সন্ত্রাসী বাহিনী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিকাল ৩টার দিকে আনারস ও ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থীকে অবরোধ করে রাখে। এ সময় তারা ওই কেন্দ্রসহ আশপাশের কেন্দ্রগুলোতে টেবিল কাস্ট করেছে। মীরগঞ্জ, শেখপুর, নিয়াগুলসহ আরও কয়েকটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ফুরিয়ে গেছে বা আসতে দেরি হচ্ছে- এমন হাস্যকর কারণ দেখিয়ে ভোট গ্রহণের গতি একেবারেই শ্লো করে দেয়া হয়েছে। এতে আমাদের অনেক ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন নি। সংবাদ সম্মেলনে আনারস প্রতীকের প্রার্থী আবু সুফিয়ান উজ্জ্বল বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তা, পুলিশ প্রশাসনসহ সবাই এলিম চৌধুরীর পক্ষে কাজ করেছেন। তারা তাকে নির্বাচিত করার নীল নকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেছেন। স্কুলের শিক্ষক ও মসজিদের ইমামকে দিয়েও জালভোট দিয়ে আমার জয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। এমন প্রহসনে গোলাপগঞ্জবাসী হতাশ। তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।