সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত নগরীর কুমারগাঁওস্থ ১৩২ / ৩৩ কেভির মেইন গ্রিডের চার ইঞ্চি নিচে রয়েছে পানি। চারটি উপকেন্দ্রের মধ্যে পানি ঢুকে যাওয়ায় বরইকান্দি ও উপশহর উপকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সুনামগঞ্জের সবকটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও বৈদ্যুতিক খুঁটি পানিতে তলিয়ে গেছে।
আজ শুক্রবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত দুই জেলার প্রায় আড়াই লাখ পরিবার বিদ্যুৎহীন রয়েছেন।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে কুমারগাঁও ১৩২ / ৩৩ কেভি গ্রিডও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনটা হলে পুরো সিলেট বিভাগ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়বে। নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্নও হয়ে পড়বে এই জনপদ। তবে কুমারগাঁওস্থ ১৩২ / ৩৩ কেভির মেইন গ্রিডটি চালু রাখার জন্য কাজ করছে সেনাবাহিনীর একটি দক্ষ টিম।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সূত্রে জানা গেছে, বাসাবাড়ির মিটার পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় নগরীর উপশহর এলাকায় এরই মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। দক্ষিণ সুরমা বিদ্যুতের সাবস্টেশনে পানি ওঠায় পুরো দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে।
সিলেটের চার জেলায় পিডিবির অধীন প্রায় সাড়ে চার লাখ গ্রাহক আছেন। এর মধ্যে সিলেটের দেড় লাখেরও বেশি ও সুনামগঞ্জের ৯০ হাজার গ্রাহক বর্তমানে বিদ্যুৎহীন আছেন।
সিলেট পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি জানায়, সমিতির সিলেট-১-এর অধীন ৪ লাখ ১৩ হাজার গ্রাহকের মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক এবং সিলেট-২-এর অধীন ২ লাখ ১২ হাজার গ্রাহকের মধ্যে অন্তত ৯০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন আছেন।
বিউবো সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেট নগরীর কুমারগাঁও ১৩২ / ৩৩ কেভির মেইন গ্রিডের ভেতরেও বন্যার পানি ঢুকেছে। নিয়ন্ত্রণকক্ষ ছুঁই ছুঁই করছে বন্যার পানি। পানি বেড়ে নিয়ন্ত্রণকক্ষের ভেতরে ঢুকলে পুরো সিলেট বিভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কুমারগাঁও ১৩২ / ৩৩ কেভির মেইন গ্রিড রক্ষার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখতে কাজ করছে সেনাবাহিনীর একটি দক্ষ টিম। ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা ও সিটি করপোরেশনের লোকজনও কাজ করে যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টদের আশা সেনাবাহিনীর মাধ্যমে অন্তত বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখার একটি উপায় বের হবে।
বিউবো সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। যদি আরও দুই থেকে তিন ঘণ্টা এমনভাবে চলে, তাহলে নিয়ন্ত্রণকক্ষে পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা আছে। এতে পুরো সিলেট বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।’
এদিকে বিকেলে সিটি করপোরেশন থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে, সিলেটের কুমারগাঁও বিদ্যুৎ স্টেশন এলাকা বন্যাকবলিত হওয়া ঠেকাতে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি অবলোকন করে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণে সিলেট জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেন। শুক্রবার সকাল থেকে সেখানে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজ চলছে।
কুমারগাঁও বিদ্যুৎ স্টেশন থেকে ন্যাশনাল পাওয়ার গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এখানে সরবরাহ বন্ধ হলে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহে সংকট দেখা দেবে। পাশাপাশি সিলেট অঞ্চল পুরোটা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দেবে। এরই মধ্যে একাংশ বন্যাকবলিত হওয়ায় সিলেট নগরীর একাংশ ও সুনামগঞ্জ জেলা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় পড়েছে।
বিদ্যুৎ স্টেশনে বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যে সকল যন্ত্রপাতি রয়েছে, সেগুলো বন্যাকবলিত হয়ে পড়লে পুনরায় মেরামত সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ জন্য কোনোভাবে যেন পানি না ঢোকে সেই ব্যবস্থা করার কাজ চলছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়-এ ব্যাপারে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, এই মুহূর্তে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি কুমারগাঁও বিদ্যুৎ স্টেশনকে। আর ৫ / ৬ ইঞ্চি পানি বাড়লে এই কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন না হলে গোটা সিলেট বিভাগের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। এমনটি হলে কার্যত সিলেট বন্যার ক্ষতির পাশাপাশি বড় ধরনের সংকটে পড়বে।
মেয়র বলেন, ‘গত রাত থেকে এই সংকট মোকাবিলায় আমি প্রশাসনের সকল বিভাগ ও শাখার সহযোগিতা চেয়েছি। সিটি করপোরেশনের, জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিদ্যুৎ পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কুমারগাঁও বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্যার কবল থেকে বাঁচাতে কাজ শুরু করেছে। এখানে আমার সঙ্গে সিলেটের জেলা প্রশাসক, সেনা কর্মকর্তাসহ সকল দপ্তর সংস্থার কর্তারা আছেন। আমরা বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ও মাটি দিয়ে সুরমা নদীর পানি যাতে কেন্দ্রে না ঢুকতে পারে তার জন্য অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ শুরু করেছি।’
সিসিক মেয়র জানান, বাঁধ নির্মাণ হলেই সিসিকের সাকার মেশিন দিয়ে কুমারগাঁও স্টেশনের ভেতরের পানি নিষ্কাশনের কাজ শুরু করব। আশা করছি সকলে সহযোগিতায় সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পারলে বড় ধরনের সংকট থেকে রক্ষা পাব।