সীমান্তের ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভয়ংকর মোবাইল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে মিয়ানমার। বাংলাদেশে চোরাচালান ছড়িয়ে দিতে কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্তে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার।
মিয়ানমার পোস্টস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন্স বা এমপিটি মোবাইল সিমের কাভারেজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিস্তৃত করা হয়েছে।
এ অবস্থায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে মিয়ানমারের এই নেটওয়ার্ক প্রতিরোধে সীমান্তে জ্যামার বসিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পরামর্শ দিয়েছে চোরাচালান নিরোধ কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্স।
এ প্রসঙ্গে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধে আমাদের করণীয় কিছু নেই। নেটওয়ার্ক প্রতিরোধে সীমান্তে জ্যামার বসিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কাজ আমাদের নয়। এটি আইন-প্রয়োগকারী সংস্থা করবে।
এর আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরে গত ১১ নভেম্বর ময়মনসিংহ চোরাচালান নিরোধ আঞ্চলিক টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সংক্রান্ত অগ্রগতি প্রতিবেদনে কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্তে মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক বিস্তৃতির তথ্য উঠে এসেছে। ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মো. শফিকুর রেজা বিশ্বাস স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়- মিয়ানমার এমপিটি সিমের কাভারেজ বাংলাদেশ সীমান্তের ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে বিস্তৃত। এই সিমের কাভারেজ বিস্তারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ব্যবস্থা গ্রহণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি পর্যালোচনা করে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক সীমান্তের ওপারে যেন না থাকে সেজন্য দেশের নেটওয়ার্ক কন্ট্রোল করা হয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার তাদের মোবাইল নেটওয়ার্ক কন্ট্রোল করে না। বরং সীমান্তবর্তী এলাকায় তারা মোবাইল নেটওয়ার্কের টাওয়ার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি করছে। ফলে কক্সবাজারের টেকনাফে যারা মাদক চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত, তাদের বেশির ভাগের মোবাইলেই মিয়ানমারের অপারেটরের সিম পাওয়া যায়। এর আগে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি’র ২০১৯ সালের পর্যবেক্ষণে এমন তথ্য উঠে আসে।
বিটিআরসির এই পর্যবেক্ষণে বলা হয়- কক্সবাজারে ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে মোবাইল ফোনের প্রায় পুরো সুবিধাই ভোগ করছে। কক্সবাজার এলাকায় মিয়ানমারের একাধিক অপারেটরের সিমকার্ডও বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। তখন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের শরণার্থীবিষয়ক সেল থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে বলে জানানো হয়।
বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর সেখানে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে মিয়ানমারের বেতার তরঙ্গের কাভারেজ বাংলাদেশ সীমান্তের ভিতরে ঢুকে পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয় বিটিআরসি। মিয়ানমারে ব্যবহৃত বেতার তরঙ্গ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের বিষয়টি আন্তর্জাতিক টেলিকম ইউনিয়নের নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নেটওয়ার্ক কাভারেজ বন্ধ করতে মিয়ানমারকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। মিয়ানমারকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক টেলিকম ইউনিয়নের নীতিমালা অনুযায়ী এক দেশের জন্য বিভাজিত বেতার তরঙ্গের কাভারেজ কোনোভাবেই অন্য দেশের সীমান্তের ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ যেন এ ব্যাপারে দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ নেয়।
বিটিআরসির পর্যবেক্ষণে আরও দেখা গেছে, মিয়ানমার থেকে আগত মোবাইল নেটওয়ার্কের সিগন্যাল এখন বাংলাদেশের ১০ কিলোমিটারের বেশি এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে এ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশি মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা আরোপ করা হলেও মিয়ানমারের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সব ধরনের মোবাইল যোগাযোগ চালিয়ে যেতে পারছে রোহিঙ্গারা। কক্সবাজারের উখিয়া এলাকায় মিয়ানমারের একাধিক মোবাইল অপারেটরের সিমকার্ড কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। গোপনে এই সিমকার্ড বিক্রি হচ্ছে ক্যাম্প এলাকায়।