সেনাবাহিনীর সাথে আধা-সামরিক বাহিনীর চলমান সংঘাতের কারণে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠা সুদানে নিজেদের দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে সুইজারল্যান্ড। সুদানের নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে খার্তুমে সুইজারল্যান্ডের দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সুইস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে খার্তুম থেকে সুইস দূতাবাসের কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় এই তথ্য জানিয়েছে সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইগনাজিও ক্যাসিস বলেছেন, আমাদের সব কর্মী ও তাদের পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং তারা নিরাপদে আছে।
সুইস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এখন পর্যন্ত দূতাবাসের সাতজন কর্মী ও তাদের সঙ্গে থাকা পাঁচজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তারা সুস্থ আছে। তাদের মধ্যে দু’জনকে সুদানের প্রতিবেশী ইথিওপিয়া যাওয়ার পথে রয়েছে। বাকিদের ফ্রান্সের সহায়তায় জিবুতিতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ক্যাসিস বলেছেন, আমাদের অংশীদারদের— বিশেষ করে ফ্রান্সের সহযোগিতার কল্যাণে খার্তুম থেকে দূতাবাসের কর্মী ও তাদের পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে।
সুদানে আটকা পড়া সুইস নাগরিকদের সাহায্য করার কাজ অব্যাহত রয়েছে। এর আগে, শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুদানে প্রায় ১০০ জন সুইস নাগরিকের নিবন্ধন সম্পন্ন করে। এছাড়াও দেশটিতে আরও কিছু সুইস নাগরিক পর্যটক হিসাবে লোহিত সাগর তীরবর্তী এলাকা পরিদর্শন করছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ক্ষমতার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গত ১৫ এপ্রিল সংঘাত শুরু হয় সুদানের সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) সদস্যদের মধ্যে।
সংঘাতে সামরিক বাহিনীর পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুদানের প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং আরএসএফের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট আরএসএফের শীর্ষ নির্বাহী জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালু, যিনি জেনারেল হেমেদি নামেই বেশি পরিচিত।
২০২১ সালে অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশির, যিনি প্রায় ৩ দশক সুদানের ক্ষমতা আঁকড়ে ধরেছিলেন। দেশটির সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে ঘটে এই অভ্যুত্থান।
আরএসএফকে মূল সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে অনেক দিন ধরে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় ১০ বছর বিলম্ব চায় আরএসএফ। অন্যদিকে সেনাবাহিনী দুই বছরের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া উচিত বলে মনে করে।
সুদানে বেসামরিক শাসনে ফেরার প্রস্তাবিত পদক্ষেপের মূলে আছে আরএসএফকে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার এ বিষয়টি। কিন্তু এর সময়সূচি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধের জেরেই শুরু হয়েছে সংঘাত।
দুই পক্ষের মধ্যকার লড়াইয়ে ইতোমধ্যে মানবিক সংকটে পড়েছে উত্তর আফ্রিকার এই দেশটি। সংঘাতের কারণে রাজধানী খার্তুমে বাড়ির ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন লাখ লাখ বাসিন্দা। দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে খাবার ও পানির অভাবে রয়েছেন বহু মানুষ। অনেক স্থানে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গত কয়েকদিনের এই সংঘাতে দেশটিতে অন্তত ৪২০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।