গাইবান্ধা বিশেষ প্রতিনিধি : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার সচিব এসএম মাজহারুল আনোয়ার এবং হিসাবরক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আশরাফুল মওলার বিরুদ্ধে ভুয়া বিল ভাউচার ও প্রকল্পের মাধ্যমে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, ডাম্পিং স্টেশনের জমি ক্রয় বাবদ ৮৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তারা। এছাড়াও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে তফসিল ঘোষণার পর রাজস্ব ও উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের বিভিন্ন ভুয়া বিল ভাউচারসহ কয়েকটি প্রকল্পের নামে কোটি টাকার উপরে হাতিয়ে নেন তারা।
জানা গেছে, চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি নব-নির্বাচিত মেয়র আব্দুর রশীদ রেজা সরকার শপথ নেয়ার পর বিষয়টি তার নজরে আসে। পৌর কর্মচারীদের এক বছরের বেতন-ভাতা বকেয়া, পরিষদের আয়-ব্যয়সহ একাধিক বিষয়ে অসঙ্গতি থাকায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি পৌরসভার রাজস্ব ও উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের আয়-ব্যয়ের হালনাগাদ তথ্য প্রদানের জন্য তিনদিনের সময় দিয়ে সচিব ও হিসাবরক্ষককে চিঠির মাধ্যমে নির্দেশ দেন মেয়র।
চিঠিতে উক্ত সময়ের মধ্যে হিসেব দিতে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়। কিন্তু চিঠি ইস্যু করার ২৫ দিন পার হলেও আয়-ব্যয়ের কোনো হিসেব দিতে পারেননি তারা। পরে এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন রংপুর বিভাগে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন সুন্দরগঞ্জ পৌরবাসী ও সচেতন নাগরিক সমাজ।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, পৌরসভার বার্ষিক আয় তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা। অথচ পৌর কর্মচারীদের এক বছরের বেতন ভাতা বকেয়া রয়েছে। উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের টাকা বিধি-বর্হিভূতভাবে রাজস্ব তহবিলে স্থানান্তর করে নামমাত্র বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় দেখিয়ে ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত, বিভিন্ন ইজারা প্রক্রিয়ার অনিয়ম করে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা আদায় হলেও তা পৌর কোষাগারে জমা দেয়া হয় নি। এছাড়াও, উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম করে টাকার বিনিময়ে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেয়াসহ নানান অসঙ্গতির বর্ননা দেওয়া হয় অভিযোগপত্রে।
তবে দুর্নীতির বিষয় ও মেয়রের চিঠি অনুযায়ী জবাব না দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব মাজহারুল আনোয়ারের মুঠোফোনে বলেন, ‘মেয়র সাহেব যেসব বিষয়ে হিসাব চেয়েছে তা আমি সঠিকভাবে উপস্থাপন করেছি।’ অপরদিকে হিসাবরক্ষক আশরাফুল মওলা বলেন, ‘মেয়র সাহেবের চিঠির জবাব আমি রেকর্ড অনুযায়ী দেইনি। তবে তাকে কিছু ম্যামো ও রেজিস্ট্রার খাতা দেখিয়েছি।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিক্ষা পর্যবেক্ষক কমিটির চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার হিসাবরক্ষক ও সচিব পদের কর্মকর্তাদের সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগটি যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে এর দায় সাবেক মেয়র কখনোই এরাতে পারে না। আমি মনে করি, এই দুর্নীতির পেছনে যারা বা যেই যুক্ত থাকুক না কেন তদন্ত করে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা দরকার। আমরা প্রত্যশা করব, নব নির্বাচিত মেয়র সকল দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবেন।’
এদিকে মেয়র আব্দুর রশিদ রেজা সরকার বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী আচরন বিধি না মেনে সচিব ও হিসাবরক্ষক কিভাবে লাখ লাখ টাকা চেকের মাধ্যমে উত্তোলণ করে এটি আমার জানা নেই। এছাড়াও, শপথ গ্রহণের দিন যথাযথ তথ্য উপাত্ত সম্বলিত ফরমেটে আমাকে দায়িত্ব বুঝিযে দেওয়া হয়নি। এমনকি পৌরসভার ব্যাংক স্টেটমেন্ট অনুযায়ী স্থিতির বিষয়ে হালনাগাদ কোনো তথ্য দেখাতে পারেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন খাতে হিসাব-নিকাশের অসংগতি থাকায় সচিব ও হিসাব রক্ষককে আমি তিন দিনের সময় দিয়ে সঠিক তথ্য উপাত্ত উপস্থাপনের নির্দেশ দিলেওতারা সময়মতো তা উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়। তারপর আমি মৌখিকভাবে তাদের আরও ছয় দিনের সময় দেই। এই সময়ের অনেক পরে তারা শুধু আমাকে ব্যাংকের স্থিতি দেখিয়েছে। আমি তাদের কাছে অন্যান্য হিসাবের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলে, এটার উপর আপনাকে রান করতে হবে!’
মেয়র দুঃখ করে বলেন, ‘আমি পৌর মেয়র। কিন্তু এই দুই কর্মকর্তাসহ তাদের কিছু অনুসারী আমাকে মানতে চায় না। আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ বিষয় জানাব। পাশাপাশি তাদের সীমাহীন দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করে বিধি মেতাবেক ব্যাবস্থা নেব।’