1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৬ অপরাহ্ন

সুবিধাভোগী ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশনেই বাড়ছে ভেজাল বিদেশি ঔষধের প্রয়োগ

মুস্তাকিম নিবিড়
  • আপডেট : সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
সুবিধাভোগী ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশনেই বাড়ছে ভেজাল বিদেশি ঔষধের প্রয়োগ
★ ব্যাবস্থাপনা পত্রে ঔষধের নাম লিখাতে ডাক্তার কে মাসিক উপঢৌকন ★ কোম্পানি প্রতিনিধি দ্বাড়া ডাক্তারদের দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমানে ঔষধ লেখাতে বাধ্য করা ★ ঔষধ ইমপোর্টারদের দ্বারা বছর শেষে ডাক্তারদের বিদেশ ট্যুর কিংবা হজ্বে পাঠানো ★ চেম্বার সাজিয়ে দেয়া, ফ্ল্যাট ও গাড়ি কিনে দেয়া ★ কি করছে ঔষধ প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট জনেরা?

মুস্তাকিম নিবিড়ঃ রোগ নিরাময়ের জন্য ওষুধ। সেই ওষুধ যদি হয় ভেজাল, নকল ও নিম্নমানের তা হলে নিরাময় নয়, হবে মরণ! বিশব্যাপী বাংলাদেশের উৎপাদিত ওষুধের সুনাম ও চাহিদা বাড়লেও দেশের চিত্র ভিন্ন। গত কয়েক দশকে ধাপে ধাপে উন্নতি করে ওষুধশিল্পে বাংলাদেশ অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। নিজেদের চাহিদার প্রায় ৯৮ ভাগ মিটিয়ে ১৬৮টির মতো দেশে ওষুধ রফতানি করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে। ওষুধ শিল্পের অভাবনীয় উন্নতি অথচ দেশের বাজারে সয়লাব হয়ে গেছে ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধে। সু-চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে ভেজাল ওষুধ কিনে উল্টো নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ওষুধের মান নিয়ে তাই প্রতিনিয়ত বিভ্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এক শ্রেণির ওষুধ কোম্পানি ও সিন্ডিকেট বেশি মুনাফার লোভে তৈরি করছে বিভিন্ন ধরণের ভেজাল ওষুধ। শুধু দেশিয় ওষুধই ভেজাল হচ্ছে এমন নয়; এখন বিদেশি ওষুধও ভেজাল করে, নকল বিএসটিআইয়ের লোগো ও ডিআর নম্বর ব্যাবহার করে অভিজাত ফার্মেসিগুলোতেই দেদারছে বিক্রি করছে প্রতারক চক্র। লাজ ফার্মা, তামান্না ফার্মাসহ নামিদামি ফার্মেসিগুলোতেই বিদেশি বড় বড় কোম্পানির ওষুধের হুবহু নকল লেবেল ছাপিয়ে ওষুধের গায়ে লাগিয়ে বাজারজাত করছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। প্রতিদিনই বাড়ছে এই চক্রের দৌড়াত্ম। যার কারণে হুমকিতে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। এসব ওষুধ সেবন করে রোগীরা আক্রান্ত হচ্ছে জটিল ও কঠিন রোগে। অনেক সময় এসব ওষুধ সেবনে মারাও যাচ্ছে রোগী। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালালেও কোনভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না ভেজাল ওষুধের দৌরাত্ম্য। কমিশন প্রলুব্ধ অনেক ডাক্তার অপ্রয়োজনীয় ওষুধ এবং টেস্ট লিখে দিচ্ছেন রোগীকে। বিনিময়ে আমদানি কারক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চিকিৎসকগন পাচ্ছে কারি কারি টাকা, গাড়ি, ফ্ল্যাট এমনকি ঘড়ের কাঁচা বাজার। বিশেষ করে চর্ম ও যৌন রোগে ব্যবহার করা হচ্ছে অনুমোদিত ভেজাল বিদেশী ঔষধ। যার দাম সাধারন মানুষের নাগালের বাহিরে। এমন কি দাউদ, একজিমা, ফাঙ্গাস ইফেকশনের ঔষধ  আছে যার এক পাতার মূল্য ১৫ থেকে ২০,০০০ টাকা ও ব্রনের চিকিৎসা করতে লাগছে ২০,০০০ টাকার ট্যাবলেট ও লোশন, ক্রীম। এসব ঔষধ সামগ্রী ইন্ডিয়া থাইল্যান্ড হয়ে আসছে বাংলাদেশে, যা আনতে খরচের ও বিশ গুন দাম হাঁকাচ্ছেন ইম্পোর্টার রা, যা প্রলোভিত ডাক্তাররা লিখেছেন ব্যাবস্থা পত্রে। দাম নির্ধারনে মানছে না কোন নীতিমালা, ড্রাগ লাইসেন্স ও বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ।  এতে অতিরিক্ত টাকা খরচ করেও পর্যাপ্ত সুফল পাচ্ছেন না রোগী। এসব নিয়ম-নীতির ফাঁক দিয়ে বাজারে ঢুকে পড়ছে নিম্নমানের ভেজাল ওষুধ। রাজধানীর মিটফোর্ডের ওষুধ মার্কেটের একটি চক্রের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে মানহীন ওষুধ। ওষুধ সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রচারে আইনগত বাধা এবং ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাই এর জন্য দায়ী বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।জাতীয় ওষুধ নীতির বাধ্যবাধকতার কারণে ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের ওষুধ সম্পর্কে ক্রেতাদের জানাতে পারে না। ফলে কোম্পানিগুলো বিক্রয় প্রতিনিধির মাধ্যমে ডাক্তারদের প্রভাবিত করে অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লেখাচ্ছেন ব্যবস্থাপত্রে।

সচেতন নাগরিকরা বলছেন, অ্যালোপ্যাথিক থেকে শুরু করে আয়ুর্বেদিক সব ওষুধেই মিলছে ভেজাল। ওষুধ কোম্পানিগুলো ডাক্তারদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে, ও মাসিক উপঢৌকন দিয়ে  রোগীদের এসব ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। এসব ওষুধ খেয়ে কিডনি বিকল, বিকলাঙ্গতা, লিভার, মস্তিষ্কের জটিল রোগসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। পাশাপাশি রোগী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কোন কোন ডাক্তার এক প্রেসক্রিপশনেই লিখে দিচ্ছেন দশ থেকে বিশ হাজার টাকা মূল্যের বিদেশ হতে আমদানকৃত নকল ঔষধ।  তাদের মতে, নিম্নমানের ওষুধ খেয়ে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রতিকার পাওয়ার সুনির্দষ্ট আইনও নেই বাংলাদেশে। এ কারণে ভেজাল ওষুধের ব্যবহার বাড়ছে। এছাড়া ওষুধ খাতের দুর্নীতি, চিকিৎসকদের কমিশনের লোভ, আইন প্রয়োগের শৈথিল্য, প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবে ভেজাল ওষুধ বাজারজাতকরণের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন অনেকেই। সরকার ও প্রশাসনের নজরদারি ও কঠোর পদক্ষেপে লাগাম টেনে ধড়া সম্ভব এসকল অসাধু চক্রের।  তাতে মানুষও জীবন রক্ষাকারী ওষুধের ওপর আস্থা পাবে। যদিও বিষয়টি যার দেখার কথা সেই ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কর্মকর্তারাও এ কাজে বিভিন্ন সময়ে সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে মুনাফালোভী ভেজাল ঔষধ আমদানি কারক প্রতিষ্ঠান ও মুনাফাভোগী ডাক্তারদের তালিকা এসেছে দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি পত্রিকার অফিসে, চলছে অনুসন্ধান। একে একে উন্মোচিত হবে তাদের মুখোশ, যারা জীবন রক্ষাকারী ঔষধ ও জনস্বাস্থ্য নিয়ে নগ্ন খেলায় মেতেছে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি