1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন

সৃষ্টি  রায়ের আত্মহত্যা নাকি হত্যাকান্ড, খুলছে না জট

মুস্তাকিম নিবিড়
  • আপডেট : রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪
সৃষ্টি  রায়ের আত্মহত্যা নাকি হত্যাকান্ড, খুলছে না জট
‘মামলার ১নং আসামি আপন রায়ের বিপক্ষে মৃত সৃষ্টি রায়কে আত্মহত্যার প্ররোচণা দেওয়ার অভিযোগ ও সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকলেও নেওয়া হয়নি আইনের আওতায়’

মুস্তাকিম নিবিড়ঃ একমাত্র কন্যা সৃষ্টি রায়কে পরিকল্পিতভাবে খুন করে আত্মহত্যা বলে প্রচার করা হয়েছে বলে বরাবরই অভিযোগ করে আসছে মা সীমা রানী রায়। মেয়ের লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দিতে ১ বছরের বেশি বিলম্ব হওয়ায় আদালতে মামলা করতে দেরি হয়েছে বলে জানান তিনি। ময়না তদন্তের রিপোর্ট দিতে দেরি হওয়া এবং টাকার বিনিময়ে রিপোর্ট পাল্টানোর দায়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে ডাক্তার সোহেল মাহমুদের নামে অভিযোগ করেছিলেন সৃষ্টির রায়ের মা ও তার অভিভাবকরা। মৃত সৃষ্টির মা দাবি করে সেই অভিযোগের জেরেই নাকি সোহেল মাহমুদের বদলি। ঢাকার সিএমএম আদালত-১৩ তে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন সীমা রানী রায়। মামলা নং-৮৭/ডি। মামলায় আপন রায়কে ১নং এবং সানী রায়কে ২নং আসামি করা হয়। মামলাটিতে বর্ণনা দেয়া থাকে আপন রায় সৃষ্টিকে কোমল পানীয়র সাথে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে পান করিয়ে প্রায় যৌন নিপীড়ন করতো এবং তার ছবি ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করতো। যার ছবি সৃষ্টির মামাতো ভাই সানী চৌধুরী তার মুঠোফোনে ধারণ করে সৃষ্টিকে ব্ল্যাকমেইল করে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধ্য করতে চাইতো। ছবিটি আদালতের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। সীমা রানী রায় বলেন, ‘আমার মেয়ে সৃষ্টি রায় সহজ সরল প্রকৃতির ছিল। সে মনিজা রহমান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর একজন মেধাবী ছাত্রী ছিল। সে কোন অবস্থাতেই আত্মহত্যা করতে পারে না। আপন রায় (২৭), পিতা-অজ্ঞাত, সাং-গোয়ালন্দনগর, থানা-কোতয়ালী এবং সানি চৌধুরী (২৮), পিতা-সুরেশ চৌধুরী, সাং-২/১, সতীশ সরকার রোড, থানা গেন্ডারিয়া, ঢাকা-১২০৪ মিলে আমার সহজ-সরল মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে। আমি আদালতের কাছে আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।’

সরজমিন অনুসন্ধানে মনিজা রহমান স্কুলে সৃষ্টির রায় সম্পর্কে জানতে চাইলে তার হাজিরা খাতায় উপস্থিতি সংখ্যা একেবারেই নগণ্য দেখা যায়। শিক্ষক-শিক্ষিকারাও বলে প্রায় সময় সৃষ্টি স্কুলে অনুপস্থিত থাকতো। যার কারণ হিসেবে জানা যায়, বাবা উজ্বল বেকার এবং মা সীমা রায় একমাত্র সংসারে উপার্জনকারী ছিল বলে মেয়েটির গাইডলাইনের খানেকটা অভাব ছিল এবং সেখানকার কর্তব্যরত দারোয়ানরা বলে মেয়েটির চরিত্র ভালো, কিন্তু শেষ দিকে একটু জেদি হয়ে উঠেছিল।
উল্লেখ্য, গত ২৭ জুন ২০১৯ ইং তারিখ সন্ধ্যা ৭টায় ২/১, সতীশ সরকার রোড, থানা-গেন্ডারিয়া, ঢাকা-১২০৪ এর বাসা থেকে উজ্জল রায় ও সীমা রানী রায় এর একমাত্র কন্যা সৃষ্টি রায় এর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে গেন্ডারিয়া থানা পুলিশ। ঐ সময় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়।
সৃষ্টি রায়ের মা সীমা রানী রায় বলেন, ঘটনার দিন দোকান থেকে রাত ৮টার দিকে বাসা যাই। বাসাটি ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। মেয়েকে ডাকাডাকির একপর্যায়ে ঘরের দরজা না খুললে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে আমার মেয়ে সৃষ্টি রায়কে ফ্যানের সঙ্গে লাল ওড়না গলায় পেচানো ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাই। কিন্তু ঘরের ভেতর থেকে ছাদে যাওয়ার দরজাটি খোলা ছিল। বাসায় প্রবেশের আগে আমার স্বামীর বোনের ছেলে সানী চৌধুরীকে পাশের বাসার ছাদ থেকে নামতে দেখেছিলাম। তিনি আরও বলেন, আমি ও আমার স্বামীর অবর্তমানে আমার মেয়ে সৃষ্টি রায় বাসায় একা থাকতো। এই সুযোগে সানী চৌধুরী প্রায় আমার মেয়েকে কুপ্রস্তাব দিতো। কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সানী চৌধুরী কৌশলে তার বন্ধু আপন রায়ের সঙ্গে আমার মেয়ের পরিচয় করিয়ে দেয়। আপন রায় ও সৃষ্টি রায়ের মধ্যে একসময় প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। তাদের কিছু অন্তরঙ্গ ছবি সানী চৌধুরী তার মোবাইল ফোনে ধারণ করে আমার মেয়ের ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করে। কিন্তু সৃষ্টি রায় সানী চৌধুরীকে প্রত্যাখ্যান করায় সে প্রতিশোধের নেশায় আমার মেয়েকে হত্যা করে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে। মেয়েকে হারানোর শোকে আমি দিশাহারা হয়ে পড়ি। আমার স্বামী তার ভাগনে সানী চৌধুরীকে বাঁচাতে থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেছিল। কিন্তু আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। আমার স্বামী উজ্জ্বল একজন মাদকাসক্ত, মামা-ভাগ্নে মিলে একসাথে মাদক সেবন করে। আমি ৫ লাখ টাকা খরচ করে বাড়ি করেছি। সে বাড়ি থেকে আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আমাকে তথাকথিত ডিভোর্স দিয়েছে। আপনারা জানেন, হিন্দু ধর্মে ডিভোর্স নেই। তবুও উজ্জ্বল আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে। আমি আমার প্রাপ্য অধিকার চাইতে গেলে সে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে এবং তার বোন এবং সানী আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। যা স্থানীয় সবাই জানে। মেয়ে হারানোর পর আমি প্রায় মানসিক ভারসাম্য হারাতে বসেছি। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই। আমার স্বামী উজ্জ্বল রায় আমাকে নানান অপবাদ দিয়ে তার ভাগ্নে সানীকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে এবং আমার টাকা আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছে। আমাকে খরপোষ দিচ্ছে না। আমার স্বামী উজ্জল আমার চরিত্রের দাগ দিচ্ছে যা ভগবান সইবে না, সে আমার নামে মিথ্যা কথার রটাচ্ছে। এলাকাবাসী জানে, আমার চরিত্র না ওর বোন-ভাগ্নীদের চরিত্রই খারাপ। হত্যা মামলার তদন্তের প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ ও পিবিআই, উভয় কর্তৃপক্ষই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বলে মামলার নিষ্পত্তি চেয়েছে। আমি মামলা করার পর পুলিশকে তদন্ত দেওয়া হয়, অতঃপর পুলিশকে সানী ও তার বোন জিমি ম্যানেজ করে। পরবর্তীতে আমরা নারাজি দিলে আদালত পিবিআইকে দায়িত্ব দেয়। জানিনা পিবিআইও কিভাবে ম্যানেজ হলো। পিবিআই কি আপন রায়কে খুঁজে পেল না? আদালতে দেওয়া ছবির সাথে আপন রায়ের সংশ্লিষ্টতা স্পষ্ট। আপন কিভাবে বেঁচে গেল পিবিআই-এর কাছ থেকে?
এসব বিষয়ে ২নং আসামি সানী চৌধুরীর সাথে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সৃষ্টি রায় আমার বোন ছিল। তাকে ব্ল্যাকমেইল বা হত্যার করার তো কোন প্রশ্নই আসে না। আমি নির্দোষ। বছরখানেক আগে আমার বাবা মারা গেছেন। আমি মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ। এসব বিষয়ে আর কথা বলতে চাই না।বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের জন্য অভিযুক্তদের বক্তব্য নেয়ার স্বার্থে সৃষ্টি রায় হত্যার বিষয়ে সৃষ্টির পিতা উজ্জ্বল রায় এবং তার আত্মীয়  সূত্রে জানাযায়  সৃষ্টির মা এবং বাবার সাথে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকতো। যা দেখে বাচ্চাটা (সৃষ্টি) খুব আতঙ্কে থাকতো। সৃষ্টির বাবা ও মা দুজনই উগ্র মেজাজের ছিল। তাই হয়তো সৃষ্টি অসৎ সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনে। বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে উজ্জ্বল রায় জানায়, তার স্ত্রী সীমা রায়ের চারিত্রিক ত্রুটি রয়েছে, তিনি মুদি দোকানি, কিন্তু তার দোকান খোলা থেকে বন্ধ পর্যন্ত দু-চারজন পুরুষ মানুষ আড্ডা দিতে থাকে, সারাক্ষণ হাসি তামাশায় মেতে থাকে  সূত্রটি আরো জানায়, সে প্রায়ই  শ্মশানে গিয়ে গাজা সেবন করে।  মাদকাসক্ত হয়ে প্রায়ই তার সতীশ সরকার রায় রোডের বাড়িতে তাকে ডিভোর্স দেওয়া সত্ত্বেও হামলা করে, বিভিন্ন লোকজন দিয়ে হুমকি দেওয়ায়। যার কারণে থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা আছে। সে ব্ল্যাকমেইল করে কিছু অর্থ হাতিয়ে নিতে চায়, এজন্য মেয়ের আত্মহত্যাকে হত্যা বানিয়ে চালিয়ে দিচ্ছে। এই মহিলা টাকার জন্য যেকোনো নাটক করতে পারে। এজন্য ভুক্তভোগী হচ্ছে আশেপাশের নিরীহ গুটিকয়েক মানুষ। তার চারিত্রিক দোষ-ত্রুটি মেয়ের চোখে ধরা পড়ার কারণেই মেয়ের আত্মহত্যা করা। যদিও সীমার বিরুদ্ধে আনীত তার স্বামী উজ্জ্বল  পক্ষের  অভিযোগ  নিছক মনগড়া এবং সম্পূর্ণ অসত্য বলে প্রত্যাখ্যান করেন সীমা রায়। সীমা রায় বলেন, সৃষ্টি হত্যা মামলা ধামাচাপা দিতেই উজ্জ্বল নিজ স্ত্রীকে নিয়ে কুৎসা রটাচ্ছে। জীবিত অবস্থায় মুচি বংশের ছেলে ইয়াবা আসক্ত উজ্বল তার নিজ মেয়েকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করতো। কথায় কথায় তাকে ও তার নিষ্পাপ মেয়েকে মারধর করতো। যার স্বাক্ষী রয়েছে আশপাশের প্রতিবেশী। প্রতিবেশীদের কাছে জানতে চাইলেই উভয়ের অভিযোগেরই কিছু সত্যতা পাওয়া গেলেও সীমা রায়ই বেশি নির্যাতনের শিকার বলে জানা যায়।

এলাকাবাসীর কাছে জানতে চাইলে বেশিরভাগই বলেন, সৃষ্টি খুবই নম্র ভদ্র মেয়ে ছিল। সে আত্মহত্যা করতে পারে বলে মনে হয় না। সৃষ্টির মা একজন পরিশ্রমী সুচরিত্রবান মহিলা, সৃষ্টির বাবা বেকার ঘরে বসে খায়। তাই প্রায় ঝগড়াঝাঁটি লাগাটা স্বাভাবিক। আবার কেউ তার উল্টোটাও বলছে, আবার কেউ কেউ প্রশ্ন করছে বাবা-মার পাল্টাপাল্টি দোষারোপে পার পেয়ে যাচ্ছে কি সৃষ্টি হত্যার নেপথ্যের কেউ? নাকি এদের মধ্যেই রয়েছে আত্মহত্যার মূল প্ররোচণা দানকারী। তাইতো সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে প্রত্যেক বাবা-মায়েরই হতে হবে সহনশীল। সংসারে রাখতে হবে সর্বোচ্চ সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি আপন রায় কিভাবে বুক চিতিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে? সৃষ্টি রায়ের সাথে তার আপত্তিকর অবস্থায় ছবি আদালতের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত করে কি বের করলো? আত্মহত্যার প্ররোচণা দেওয়ার যে মামলাটি করা হয়, সে মামলার এক নম্বর আসামির এই ছবিটির সাথে গুরুতর সংশ্লিষ্টতা কি কোন গুরুত্ব রাখে না? আপত্তিকর ছবিটি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করায় মেয়েটির কি অপমৃত্যু হতে পারে না? বোদ্দা মহল বলছে, মামলাটির অধিকতর সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন। যেহেতু ১নং আসামির হদিস রয়েছে এবং তার সাথে মৃত সৃষ্টি রায়ের আপত্তিকর ছবি, যা ব্ল্যাকমেইল এর কারণ হিসেবে যথেষ্ট বলে পরিগণিত রয়েছে। সেক্ষেত্রে ১নং আসামি আপন রায়কে আইনের আওতায় আনলে বেরিয়ে আসবে সৃষ্টি হত্যার/আত্মহত্যার মূল কুশীলব।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি