সেনাবাহিনীর ২৭৮ জন মুক্তিযোদ্ধার সামরিক গেজেট বাতিল করা হয়েছে। বাতিলকৃত গেজেটে পদবি উল্লেখ করা হয়নি। গতকাল রবিবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক প্রজ্ঞাপনে সামরিক গেজেট বাতিল করা হয়। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। ১৯৭২ সালে এই গেজেট প্রকাশ করা হয়েছিল। সামরিক গেজেট সবসময় যাচাই-বাছাইয়ের আওতামুক্ত ছিল।
এর আগে গত বছর বিমান বাহিনীর ৪৭ জন মুক্তিযোদ্ধার সামরিক গেজেট বাতিল করা হলেও পরে সশস্ত্র বাহিনী থেকে গেজেট বাতিল আদেশ পুনর্বহাল চেয়ে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে পত্র দিলে বিমান বাহিনীর ঐ সদস্যদের সামরিক তালিকায় বহাল রেখে পুনরায় গেজেট প্রকাশ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গত রাতে তুরস্ক থেকে টেলিফোনে জানান, যেসব ব্যক্তি ১৯৭২ সাল বা তত্পরবর্তী কালে সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন অংশে যোগ দিয়েছেন তারা মুক্তিযোদ্ধা হলেও সামরিক গেজেটে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারবেন না। সে কারণে যেসব ব্যক্তির সামরিক গেজেট বাতিল করা হয়েছে তারা যদি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে থাকেন তাদের বেসামরিক গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ইতিমধ্যে সেকাজও শুরু হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, এরমধ্যে অধিকাংশের নাম আবার দুটি গেজেটেই লক্ষ্য করা গেছে।
প্রসঙ্গত, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে ইতিপূর্বে একবার বাদ আবার পুনর্বহাল ইত্যাদি কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশে বেশ বিতর্ক হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ নির্ভুল মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রকাশের প্রতিশ্রুতি থাকলে আজও তা সম্ভব হয়নি। একবার রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম ঢুকিয়ে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ নিয়ে সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়ায়। এরকম বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজাকারের প্রকাশিত তালিকা স্থগিত রাখা হয়। বলা হয়, পরবর্তীতে তালিকা প্রকাশ করা হবে। তবে আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের আগে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি নির্ভুল পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের সংকল্প রয়েছে মন্ত্রীর।
যেসব জেলার মুক্তিযোদ্ধার সামরিক গেজেট বাতিল করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে কুমিল্লা, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক আরো বলেন, মুক্তিযোদ্ধার নির্ভুল পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের স্বার্থে এরকম যাচাই-বাছাই করে আরো গেজেট বাতিল হতে পারে। অনেক অমুক্তিযোদ্ধা নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় আছে, সেগুলো খুঁজে বের করে বাতিল করার কাজ অব্যাহত আছে। প্রায় পৌনে তিন লাখ সঠিক মুক্তিযোদ্ধার নাম এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে। তবে বেশির ভাগ জেলা-উপজেলা থেকে সামরিক-বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধার নাম যাচাই-বাছাই হয়ে আসতে দেরি হওয়ায় এসব কাজ কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। সরকারের বর্তমান মেয়াদেই মুক্তিযোদ্ধার (সামরিক-বেসামরিক) নির্ভুল গেজেট প্রকাশ হবে।