সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি॥ নীলফামারীর সৈয়দপুরে সরকারী নিয়মনীতি উপেক্ষা করে অবিবাহিত ও অনার্স পড়ুয়া এক ছাত্রীর নামে ভিজিডি’র কার্ড করা হয়েছে। দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস যাবত এই কার্ডের বিপরিতে চাল উত্তোলন করাও হয়েছে। ওয়ার্ড মেম্বার, মহিলা মেম্বার ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসের যোগসাজশে এটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী।
অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায় যে, উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল হাই সরকারী নিয়ম বহির্ভূতভাবে অর্থের বিনিময়ে প্রকৃত দরিদ্র মানুষকে বাদ দিয়ে এলাকার বাবুলের মেয়ে নীলফামারী সরকারী কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী লুবনা আক্তার (২০) এর নামে ভিজিডি’র কার্ড করে দিয়েছে। যার জাতীয় পরিচয়পত্র নং ৪৬৬১০৯৯৩৯। এতে ওই এলাকার মহিলা মেম্বার ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারীর যোগসাজশ রয়েছে। সে কারণে তদন্তের সময় এ ব্যাপারে তারা কোন অভিযোগ তুলেনি বা আপত্তি জানায়নি।
এদিকে ওই ওয়ার্ড মেম্বারের সহযোগিতায় ভুয়া নামে ভিজিডি’র চাল উত্তোলন করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসী জানায়, ৯ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ সোনাখুলী আদানীপাড়ার ছামছুলের স্ত্রী মোছাঃ ফেরজা বেগম (৩৭) এর নামে ভিজিডি’র কার্ড রয়েছে। যার ক্রমিক নং ৬১৩, জাতীয় পরিচয়পত্র নং ৭৩২২৪০১৭১৭। তার পরিবর্তে ওই কার্ড দিয়ে চাল উত্তোলন করছে একই এলাকার শরিফের স্ত্রী সুমি (২২)। একাজটিও ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল হাই অর্থের বিনিময়ে করেছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ।
অপরদিকে ওই ওয়ার্ডেরই নলছাপাড়ার গ্রাম পুলিশ সাইয়াকুলের স্ত্রী মিতু আক্তারের নামেও আর্থিক সুবিধা নিয়ে কার্ড করে দিয়েছেন ওয়ার্ড মেম্বার। অথচ ওই গ্রাম পুলিশ সরকারী চাকুরী করেন এবং তাদের আর্থিক অবস্থা সচ্ছল। শুধু তাই নয় ওই গ্রাম পুলিশের ভাই সিদ্দিকুল ইসলামের স্ত্রী রুহিলা বানুর নামেও কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার। এভাবে অর্থ নিয়ে কার্ড করে দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি অন্যরকম রেকর্ডও করেছেন।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে স্থানীয়দের মন্তব্য হচ্ছে ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল হাই ও মহিলা মেম্বার মমতাজ বেগম টাকা ছাড়া কোন কাজই করেন না। টাকা দিলেই অনিয়মই তাদের কাছে নিয়মে পরিণত হয়। টাকার বিনিময়ে তারা অসচ্ছল দরিদ্রদের হক মেরে সচ্ছলদের বিভিন্ন সরকারী সুবিধার কার্ড করে দেন। এলাকাবাসীর দাবি সঠিক তদন্ত করে এ ব্যাপারে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া হলে অনেক গরিব মানুষ সরকারের দেয়া সুবিধা পেয়ে উপকৃত হবে এবং অনিয়ম করা থেকে অন্য জনপ্রতিনিধিরাও বিরত হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নুরুন্নাহার শাহজাদী বলেন, দুস্থ ছাত্রী হলেও ভিজিডি’র সুবিধা পেতে পারে। যদি কোথাও কোন অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মোঃ আকতারুজ্জামান জানান, আমার দায়িত্ব হচ্ছে কার্ডধারীদের চাল দেওয়া। কার্ড কাদের দেওয়া হয়েছে তা আমার জানার কথাও না আবার দায়িত্বের মধ্যেও পড়েনা।
ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল হাই বলেন, লটারীর মাধ্যমে অসচ্ছল ব্যক্তিরাও কার্ড পেয়েছে। এতে আমার করার কি আছে। টাকা নিয়ে কার্ড করে দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়।
মহিলা মেম্বার মমতাজ বেগম বলেন, আমি এ ধরণের কোন কার্ড করে দেইনি। ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল হাই দিয়ে থাকতে পারেন। এটা আমার জানা নেই।
বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার জানান, কার্ড লটারীর মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসন যাচাই বাছাই করে দিয়েছে। এতে যদি কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে তা দেখার দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসনেরই।
ইউপি সচিব আব্দুল মান্নান বলেন, চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করলে এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে। তবে অভিযোগ পেয়েছি যে, একজনের কার্ডের চাল অন্যজন তুলে খাচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাসিম আহমেদ বলেন, অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অবিবাহিত ছাত্রীর কার্ড হওয়ার কথা নয়। তদন্তে প্রমানিত হলে এই অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।