সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর সৈয়দপুরে লকডাউনেও অবাধে চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দ্বারা পরিচালিত বর্ণমালা কোচিং সেন্টার। সরকারি নিয়ম নীতি উপেক্ষা করার সাথে করোনার প্রকোপকেও তারা তোয়াক্কা করছেনা। স্বাস্থ্যবিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গাদাগাদি করে একটি ছোট্ট কক্ষে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কোমলমতি শিশুদের বসিয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা নিচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় দিন রাত চলছে তাদের এ অবৈধ কার্যক্রম। তবুও নির্বিকার দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ। সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষা অফিসের ছত্রছায়ায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কোচিং বা প্রাইভেট চালানোয় উপজেলা জুড়ে সমালোচনা চললেও অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার না পাওয়ায় ক্ষোভ বিরাজ করছে অন্যান্য শিক্ষকদের মাঝে। তারা এ ব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
শহরের বাঙালীপুর দারুল উলুম মাদরাসা মোড় এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে বাসা ভাড়া নিয়ে বর্ণমালা কোচিং সেন্টার পরিচালনা করছেন রামকৃষ্ণ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ শাহ। চাকরিরত অবস্থা থেকেই তিনি এটি চালিয়ে আসছেন। অবসরের পর থেকে এটিই তার আয়ের উৎস বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
এখানে তিনি চ্যালেঞ্জের সাথে পিএসসি জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের কোচিং করতে উদ্বুদ্ধ করেন। সেই সাথে সৈয়দপুর সরকারি কারিগরি মহাবিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও তার সাজেশন অদ্বিতীয় এবং তদবিরের মাধ্যমে ভর্তি নিশ্চিতে সিদ্ধহস্ত।
এক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করেন এবং নিয়মিত ক্লাস নেন আরও দুই জন প্রাইমারি শিক্ষক। তারা হলেন উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের হাজারীহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল বাশার মোঃ মহিউদ্দিন ও শহরের পুরাতন বাবুপাড়া এলাকার রহমতুল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোছাঃ শাহনেওয়াজ পারভীন বিউটি।
এছাড়াও মাঝে মাঝে অন্যান্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কমিশনের মাধ্যমে ক্লাস নিয়ে ও শিক্ষার্থী দিয়ে সহযোগিতা করেন। সাবেক প্রধান শিক্ষক হওয়ায় আব্দুস সামাদ শাহ’র সাথে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের সাথে সখ্যতা থাকায় তিনি এ সুবিধা নিচ্ছেন।
কর্মস্থলের পাশে হওয়ায় বিউটি প্রায় সময়ই স্কুল বাদ দিয়ে কোচিং সেন্টারে অবস্থান করেন। কোভিড ১৯ এর প্রাদুর্ভাবের পর স্কুল বন্ধ থাকায় অফুরন্ত অবসর পেয়ে এখন আগের চেয়েও জমজমাট তাদের কোচিং বানিজ্য। ফুল টাইম ডিউটি হিসেবে উল্লেখিত ৩ জন এখন পুরোদমে ব্যস্ত। এমনকি দ্বিতীয় ধাপের করোনার ঢেউ আসার প্রেক্ষিতে সরকার লকডাউন ঘোষণা করলেও তারা দূরন্ত দূর্বার গতিতেই চালিয়ে যাচ্ছেন ক্লাস ও পরীক্ষা।
কারণ তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযানের কোন ভয় নেই। কেননা শিক্ষা অফিসে ও উপজেলা প্রশাসনে তাদের প্রতিনিধি রয়েছে। তারা আগাম সতর্ক করাসহ সব ম্যানেজ করে। বিশেষ করে শিক্ষা অফিসে কম্পিউটার বিভাগে কর্মরত মিলন বর্ণমালা কোচিং সেন্টারের পরিচালক আব্দুস সামাদ শাহ এর বড় ছেলে।
গত ১০ এপ্রিল শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় কোচিং সেন্টারের দুইটি কক্ষে প্রায় ৫০ জন শিশু শিক্ষার্থীকে নিয়ে ক্লাস করছেন ওই শিক্ষকেরা। এসময় লকডাউনেও কেন কোচিং খোলা এবং স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে শিশুদের গাদাগাদি করে বসিয়ে পড়ানো হচ্ছে জানতে চাইলে সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ শাহ বলেন, আজই শেষ ক্লাস নেয়া হচ্ছে। বাচ্চাদের সাজেশন দিয়েই ছুটি দেয়া হবে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকরা কি প্রাইভেট বা কোচিং করাতে পারবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রশাসন, সাংবাদিক ও শিক্ষকদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই আমি কোচিং সেন্টার চালাই। সবার সহযোগিতাতেই সৈয়দপুরের সেরা প্রতিষ্ঠান বর্ণমালা। তাই এটাকে ভিন্ন চোখে দেখার কিছু নেই। খবর নিয়ে জানা গেছে রবিবারও বর্ণমালা চালু রাখা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, যেখানে বেকার যুবকরা প্রাইভেট বা কোচিং করিয়ে কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করে। তারা করোনাকালে চরম বিপাকে পরেও সরকারি নির্দেশনা মেনে বন্ধ রেখেছে। সেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বেআইনিভাবে এই মহা সংকটকালে বেতন ভাতা পেয়েও বাড়তি আয়ের নেশায় মত্ত। তারা না মানছে সরকারি নির্দেশনা না দেখছে শিশুদের ভবিষ্যৎ। শিশুদের ঝুঁকিতে ফেলে নিজেদের আখের গােছাতে ব্যস্ত। অথচ প্রশাসন প্রকাশ্যে চলা এসব অবৈধ কোচিং বন্ধ না করে দুই একজন ছাত্র ছাত্রী নিয়ে প্রাইভেট পড়ানোদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করেন।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও ক্লাস্টার অফিসার (এটিও) রুহুল আমীন প্রধানকে জানানো হলে তিনি মুঠোফোন জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোনভাবেই প্রাইভেট বা কোচিং করাতে পারবেন না। তবু যদি কেউ করে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি বিষয়টি দেখছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাসিম আহমেদের সাথে মুঠোফোন কথা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিও) মোঃ নবেজ উদ্দিনের সাথে মুঠোফোন কথা হলে তিনি জানান, এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তা কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবেনা।অভিযোগকৃতদের বিরুদ্ধে এখনই তদন্ত করা হবে এবং সত্যতা পাওয়া গেলে দ্রুত বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।