সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেলার মধ্যে একটি নীলফামারী। বিশেষ করে এ জেলার সৈয়দপুর অতি ঘনবসতি হওয়ায় এখানে প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ করোনা পজিটিভ সনাক্ত হচ্ছে। প্রথম ঢেউয়ে এ উপজেলায় ১৩ জন মারাও গেছে।
অথচ এখানেই সরকার ঘোষিত লকডাউন উপেক্ষা করে জনসমাগম ঘটিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান কৃষি বিভাগ। স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে আয়োজিত ট্রেনিং ও মোটিভেশান প্রোগ্রামে অংশ গ্রহণকারীরা শারীরিক দূরত্ব তো দূরের কথা সিংহভাগই মাস্ক পর্যন্ত পড়েনি। আয়োজক ও অতিথিবৃন্দসহ উপস্থিত সকলে যেন করোনার ধারই ধারেনা।
এমনটাই ঘটেছে সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের বোতলাগাড়ী নাপিতপাড়ায়। ১১ এপ্রিল রবিবার সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখা যায়। উপজেলা প্রশাসনের কোন প্রকার অনুমতি না নিয়েই আয়োজন করা হয়। এতে এলাকার সচেতন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। একারণে তারা বিষয়টি সংবাদকর্মীদের জানায়।
খবর পেয়ে সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মমতা সাহা ও উপ-সহকারী কৃষি অফিসার সুনীল রায় হতচকিত হয়ে পড়ে। তারা তাৎক্ষণিক ট্রেনিং ও মোটিভেশান প্রোগ্রামের ব্যানার সরিয়ে মাঠ দিবস এর ব্যানার লাগিয়ে কার্যক্রম অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে। এসময় জিজ্ঞেস করলে তারা জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুমতি নিয়েই এ আয়োজন। কৃষি ক্ষেত্রে লকডাউনের বাধ্যবাধকতা নেই।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাসিম আহমেদ এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, এমন কোন প্রোগ্রাম করার কোন প্রকার অনুমতি দেয়া হয়নি। কৃষি বিভাগ কেন কেউ এমনটা করতে পারেন না। বিষয়টি আমি দেখছি।
উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি না নিয়েই অনুষ্ঠান করেও কেন তাঁর অনুমতি নেয়া হয়েছে বলে মিথ্যাচার করা হলো? এমন প্রশ্ন করামাত্রই সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মমতা সাহা ও উপ-সহকারী কৃষি অফিসার সুনীল রায় কোন জবাব না দিয়ে এবং অনুষ্ঠান শেষ না করেই তড়িঘড়ি করে পালিয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে উপস্থিতদের মাঝে আপ্যায়ন সামগ্রী বিতরণ শুরু করে আয়োজক স্থানীয় কয়েকজন কৃষক।
এতে অনুষ্ঠানস্থলে শিশুসহ সব বয়সের মানুষের জটলা বাধে। কাড়াকাড়ি করে খাবারের প্যাকেট নিতে গিয়ে শুরু হয় হুড়োহুড়ি। যা করোনা ছড়ানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ।
পরে উপজেলা কৃষি অফিসার শাহিনা বেগমের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, কৃষি বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনায় বিশেষ নির্দেশনা থাকায় কিছু কিছু জরুরি কার্যক্রম পরিচালনা করার অনুমতি আছে। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই প্রয়োজনীয় শারীরিক দূরত্ব ও মাস্ক ব্যবহারসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে কোনো প্রোগ্রাম করার প্রয়োজন নাই। উল্লেখিত স্থানে যদি স্বাস্থ্যঝুকির মত অবস্থার সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে এখনই বন্ধ করে দিচ্ছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার কয়েকজন অভিযোগ করেন যে, করোনাকালে এধরণের আয়োজন না করার জন্য বলা হলেও কৃষি অফিসের লোকজন তা শোনেননি। যার ফলে জনসমাগম ঘটিয়ে আমাদেরকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হলো। সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়ে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে একাজ কিভাবে করলো তা আমাদের বোধগম্যই হচ্ছেনা ।